বিশ্বনেতাদের সমালোচনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন ইসরাইলের
গাজায় যুদ্ধ বিস্তৃত করার এ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ, বৃটেন, ফ্রান্স ও কানাডাসহ একাধিক দেশ। আর ইসরাইলে সামরিক রপ্তানি স্থগিত করেছে জার্মানি। ইসরাইলের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার অনুমোদিত পরিকল্পনায় যুদ্ধ অবসানের জন্য পাঁচটি নীতিমালা উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো হামাসকে নিরস্ত্র করা, সব জিম্মিকে মুক্ত করা, গাজা উপত্যকাকে সামরিকভাবে নিরস্ত্রীকরণ, অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ নেয়া, এবং হামাস বা প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি- কোনোটিই নয়- এমন একটি বিকল্প বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা।
ইসরাইলি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পরিকল্পনার প্রথম ধাপে গাজা সিটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়া ও সেখানে থাকা প্রায় এক মিলিয়ন বাসিন্দাকে দক্ষিণে সরিয়ে দেয়া অন্তর্ভুক্ত। সেনারা কেন্দ্রীয় গাজার শরণার্থী শিবির এবং যেসব এলাকায় জিম্মিদের থাকার আশঙ্কা রয়েছে সেগুলোও দখল করবে। কয়েক সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ধাপের অভিযানে মানবিক সহায়তা কিছুটা বাড়ানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংঘাত বাড়ানোর এ পদক্ষেপ ইসরাইলের ভেতর থেকেও তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েছে। এর মধ্যে আছেন সামরিক কর্মকর্তারা এবং গাজায় আটক জিম্মিদের পরিবার। হামাস বলেছে, গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা একটি নতুন যুদ্ধাপরাধ এবং এর জন্য ইসরাইলকে মূল্য দিতে হবে।
শুক্রবার বৃটেন, জার্মানি, ইতালি, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যৌথ বিবৃতিতে এ পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এটি গাজার ইতিমধ্যেই বিপর্যয়কর পরিস্থিতিকে আরও অবনতি ঘটাবে। যে কোনো ধরনের সংযুক্তি বা বসতি সম্প্রসারণ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক সতর্ক করে বলেছেন, এ ধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধি আরও ব্যাপক জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, হত্যাকাণ্ড, অসহনীয় দুর্ভোগ, নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞ ও নৃশংস অপরাধ ডেকে আনবে। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার এ পদক্ষেপকে ‘ভুল’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি শুধু আরও রক্তপাত ঘটাবে। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং ইসরাইলকে এ পথে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এটি গাজার মানবিক বিপর্যয়কে আরও বাড়িয়ে দেবে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে, যাতে ইসরাইলের এই পরিকল্পনা প্রতিরোধ করা যায় সেই ব্যবস্থা নিতে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এএফপিকে বলেছেন, গাজা ফিলিস্তিনি জনগণের এবং এটি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎসের কাছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জার্মানির অস্ত্র রপ্তানি স্থগিতের সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, এটি হামাসের সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করার শামিল। ইসরাইলের ভেতরে, গাজায় অবশিষ্ট জিম্মিদের পরিবার সতর্ক করে দিয়েছে যে, জীবিত বলে ধারণা করা ২০ জনের প্রাণ হুমকির মুখে পড়বে।
হোস্টেজেস ফ্যামিলিস ফোরাম সদর দপ্তর বলেছে, এই সিদ্ধান্ত জিম্মি ও আমাদের সেনাদের জন্য এক বিশাল বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র তুলনামূলকভাবে কম সমালোচনামূলক অবস্থান নিয়েছে। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখল করবে কি না, তা মূলত ইসরাইলের সিদ্ধান্ত।
বর্তমানে আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) গাজার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। আর প্রায় ২.১ মিলিয়ন নাগরিকের অধিকাংশ অবস্থান করছে সেই এক-চতুর্থাংশ এলাকায় যা সেনাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। জাতিসংঘের হিসেবে, গাজার প্রায় ৮৭ ভাগ অঞ্চল হয় সামরিকায়িত, নয়তো উচ্ছেদ আদেশের আওতায়। কেন্দ্রীয় গাজা ও ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের কিছু এলাকা এখনো ইসরাইলের দখলে যায়নি। এর মধ্যে শরণার্থী শিবিরও রয়েছে, যেখানে ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়ার পর গাজার বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। যুদ্ধের ফলে গাজার অধিকাংশ জনগণ ইতিমধ্যেই বাস্তুচ্যুত হয়েছে, অনেকেই একাধিকবার।
জাতিসংঘ সমর্থিত বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজায় এখন মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে, যার অধিকাংশ এলাকা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। ইসরাইলের আরোপিত কঠোর আমদানি নিষেধাজ্ঞার ফলে জনগণ মারাত্মক বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস বলেছেন, জুলাই ছিল গাজার শিশুদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টির সবচেয়ে খারাপ মাস। ৫ বছরের নিচে প্রায় ১২,০০০ শিশু এতে আক্রান্ত হয়েছে।

No comments