জাতিসংঘে কঠোর সমালোচনা, পক্ষান্তরে নেতানিয়াহুর সাফাই

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইসরাইলের গাজা সিটি দখল করে নেয়ার তীব্র সমালোচনা ও বিরোধিতা করা হয়েছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা এ পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। বৃটেন, ফ্রান্সসহ একাধিক দেশ বলেছে, গাজা দখল করে নিলে তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! বরাবরের মতোই নিজের পরিকল্পনার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। একই সঙ্গে তিনি গাজার মানুষ অনাহারে আছে এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। দাবি করেছেন, যুদ্ধ শেষ করার জন্য গাজা দখল করে নেয়া হলো সেরা উপায়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, (গাজা দখলের জন্য) পরিকল্পিত সামরিক অভিযান খুব দ্রুত এগোবে এবং গাজাকে হামাস থেকে মুক্ত করা হবে। তিনি আরও দাবি করেন, গাজায় শুধু আটক ইসরাইলি জিম্মিদেরকেই ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে রাখা হচ্ছে। তার এই ভয়াবহ মিথ্যাচার বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ্যে করলেও তাকে নিবৃত করার দৃশ্যত যেন কোন শক্তি নেই।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে বৃটেন, ফ্রান্সসহ একাধিক দেশ পরিকল্পনাটিকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘনের ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করে নিন্দা জানায়। ডেনমার্ক, গ্রিস এবং স্লোভেনিয়া পরিকল্পনাটি বাতিলের আহ্বান জানিয়ে বলে, এ পরিকল্পনা জিম্মিদের মুক্তিতে কোনো সহায়ত হবে না। বরং তাদের জীবন আরও বিপদের মুখে ফেলবে। চীন এই পরিকল্পনাকে গাজার মানুষের প্রতি সামষ্টিক শাস্তি বলে আখ্যা দিয়েছে। আর রাশিয়া বেপরোয়াভাবে সংঘাত বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সতর্ক করে। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ ইয়েনচা বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এটি গাজায় আরেকটি বিপর্যয় ডেকে আনবে, পুরো অঞ্চলে অস্থিরতা ছড়াবে এবং আরও বাস্তুচ্যুতি, হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাবে। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থার রমেশ রাজাসিংহম জানান, গাজার খাদ্যসংকট আর আসন্ন নয়- এটি সরাসরি অনাহার।

যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে কথা বলে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অবিরামভাবে জিম্মিদের মুক্তি ও যুদ্ধ শেষ করার চেষ্টা করছে। আর এই বৈঠক সেই প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন করছে। তিনি দাবি করেন, যুদ্ধ এখনই শেষ হতে পারে যদি হামাস জিম্মিদের মুক্তি দেয়। বৈঠকে অন্য সদস্যদের ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনার সুযোগ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন তিনি। একে তিনি সুস্পষ্টভাবে মিথ্যা বলে অভিহিত করেন। রবিবার পরে নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায় যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরাইলের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে হাজারো মানুষ সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করেছে। কারণ তারা মনে করে এই পরিকল্পনা জিম্মিদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে। সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) গাজা সিটি এবং আল-মাওয়াসি এলাকার বাকি দুটি হামাস ঘাঁটি ধ্বংস করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি তিন ধাপের একটি পরিকল্পনার কথাও জানান, যাতে গাজায় সাহায্য বাড়ানো, মানবিক সহায়তার নিরাপদ করিডোর তৈরি, ইসরাইল ও অন্যান্য অংশীদারদের মাধ্যমে আরও বিমান থেকে ত্রাণ ফেলা এবং বিতরণ কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো অন্তর্ভুক্ত। এই বিতরণ কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বে থাকবে বিতর্কিত মার্কিন-ইসরাইল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। জাতিসংঘ জানায়, মে মাসের শেষ দিকে জিএইচএফ সহায়তা কেন্দ্র স্থাপনের পর থেকে খাবারের খোঁজে ১৩৭৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নেতানিয়াহু অভিযোগ করেন, হামাস সহায়তার ট্রাকগুলো লুট করেছে এবং জিএইচএফ কেন্দ্রগুলোতে ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক গুলি হামাসই চালিয়েছে। গাজায় বাকি থাকা ইসরাইলি জিম্মিদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কিছু না করলে, তাদের উদ্ধার করতে পারব না।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতানিয়াহু বলেন, তারা হামাসের প্রচারণায় বিশ্বাস করছে। তিনি দাবি করেন, গাজার অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের কিছু ছবি, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা ভুয়া। যদিও যুদ্ধ চলাকালে ইসরাইল আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। নেতানিয়াহু বলেন, দুই দিন ধরে বিদেশি সাংবাদিকদের আনার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শনিবার থেকে অনাহার ও অপুষ্টিজনিত কারণে গাজায় আরও ৫ জন মারা গেছেন। ফলে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১৭। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৩ সাল থেকে ইসরাইলের সামরিক অভিযানে মোট ৬১,০০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.