লন্ডনে গাজার পক্ষে বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার ৪৬৬: অনাহার-অপুষ্টিতে ১০০ শিশুর মৃত্যু
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা সড়কে বসে বিক্ষোভ করছেন এবং গাজা থেকে থাবা সড়াও বলে স্লোগান দিচ্ছেন। ভিডিওতে বিক্ষোভকারীদের পুলিশের কাছ থেকে পালাতে দেখা যায়। তখন তারা বলেন, শেইম অন ইউ। লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ এক্সের এক পোস্টে নিশ্চিত করেছেন যে ৪৬৬ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় সময় রাত ৯টায় পার্লামেন্ট স্কয়ারের সামনে থেকে তাদের আটক করে পুলিশ। তাদের তরফে বলা হয়েছে, আটককৃতদের মধ্যে আটজনকে অন্য কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের পাঁচজন পুলিশের সঙ্গে অশোভন আচরণের জন্য আটক হয়েছেন।
বিক্ষোভের আয়োজনকারী গ্রুপ ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস নামের এক্স অ্যাকাউন্টে বলেছে, বিক্ষোভে প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রায় ৮০০ জন অংশগ্রহণ করেন। যার অর্ধেকের বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। একক বিক্ষোভ থেকে পুলিশ কর্তৃক এটাই বৃহত্তম গণগ্রেপ্তার। এতে আরও বলা হয়েছে, জনগণ সম্মিলিতভাবে গাজায় পরিচালিত গণহত্যা এবং প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করছে। জুলাই মাসে সন্ত্রাসবাদ আইন ২০০০ এর অধীনে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বৃটেন সরকার। যার কড়া নিন্দা জানিয়ে ধারাবাহিক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে যাচ্ছে সংগঠনটি। জুনে এই গ্রুপের সদস্যরা একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে প্রবেশ করে দুটি বিমানের ক্ষতি করার পর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
অনাহার-অপুষ্টিতে গাজায় ১০০ শিশুর মৃত্যু
গাজার ওপর ইসরাইলের চাপিয়ে দেওয়া অনাহার ও অপুষ্টিতে এ পর্যন্ত ১০০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ববাসীর জন্য গাজার এমন পরিস্থিতি লজ্জাজনক এবং ধ্বংসাত্মক মাইলফলক বলে অভিহিত করেছে সেভ দ্য চিলড্রেন নামের শিশু অধিকার বিষয়ক সংগঠন। পাশাপাশি শিশুদের প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণের জন্য ইসরাইলের নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনটি। বলেছে, ইসরাইলের চাপিয়ে দেয়া দুর্ভিক্ষের ফলেই এসব শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
এক বিবৃতিতে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং পূর্ব ইউরোপের জন্য দাতব্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক আহমেদ আলহেন্দাওয়ি বলেন, আমরা এমন এক পৃথিবী বানিয়েছি যেখানে না খেয়ে ১০০ শিশুর মৃত্যু হলো। অথচ তাদের বাঁচাতে মাত্র কয়েক মাইল দূরে সীমান্ত ক্রসিংয়ে অপেক্ষা করছে খাবার, পানি ও চিকিৎসা সামগ্রী। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনাতেই গাজার শিশুরা অনাহারে-অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, সম্পূর্ণভাবে অনুমানযোগ্য এবং এড়িয়ে যাওয়ার মতো একটি ট্র্যাজেডি এটি। যা নিয়ে কয়েক মাস ধরেই সতর্ক করে আসছিল মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
আলহেন্দাওয়ি যোগ করেন, প্রায় দুই বছরের যুদ্ধ এবং জীবন রক্ষাকারী সহায়তার অভাব শিশুদের মৃত্যু, দুর্ভোগ এবং ভঙ্গুর ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। যার সবই সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা যেত। তিনি বলেন, সকল প্রমাণেই ইঙ্গিত মিলছে যে ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে ইসরাইলের সরকার। যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ। তার ভাষ্য, গাজার মানুষদের কাছে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছতে দিতে বাধ্য ইসরাইল।
আলহেন্দাওয়ি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজায় খাদ্য পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সর্বত্র আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ করতে বাধ্য থাকতে হবে। আইনি দায়িত্ব পালনে এই অবহেলা আমাদের সকলের উপর বর্তায়। এটি আমাদের মানবতার ওপর একটি নৈতিক দাগ এবং বিশ্ববাসীর জন্য লজ্জার।
প্রসঙ্গত, ইসরাইলি হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত তীব্র ক্ষুধায় নিহত হয়েছেন ২১৭ জন। যাদের মধ্যে এই ১০০ শিশুও রয়েছে। এর নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। এছাড়া সম্প্রতি গাজায় পূর্ণ দখল প্রতিষ্ঠার ইসরাইলি পরিকল্পনার বিষয়ে রোববার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে গাজায় যুদ্ধ সম্প্রসারণে ইসরাইল জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এতে যোগ দিয়েছেন জিম্মি পরিবারের সদস্যরাও। তাদের দাবি অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে নিরাপদে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে হবে। গাজায় যুদ্ধ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মনে করছেন তারা।

No comments