ফ্রান্সে ৪০ বছর কারাভোগের পর এক ফিলিস্তিনপন্থী যোদ্ধাকে মুক্তির নির্দেশ

৪০ বছর কারাভোগের পর ফিলিস্তিনপন্থী এক লেবানিজকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে ফ্রান্সের আদলত। তার নাম জর্জ ইব্রাহিম আব্দাল্লাহ। আশির দশকে দুই বিদেশি কূটনীতিককে হত্যা করেন তিনি। বর্তমানে আব্দাল্লাহর বয়স ৭৪ বছর। বৃহস্পতিবার প্যারিসের আপিল আদালত এক নির্দেশনায় বলেছে, আগামী ২৫ জুলাই মুক্তি পাবেন ওই ফিলিস্তিনপন্থী যোদ্ধা। তবে শর্ত হচ্ছে মুক্তির পরপরই তাকে ফ্রান্স ত্যাগ করতে হবে এবং তিনি আর কখনই সেখানে ফিরতে পারবেন না। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

এতে বলা হয়, ১৯৮২ সালে প্যারিসে মার্কিন কূটনীতিক চার্লস রবার্ট রয় এবং ইসরাইলি কূটনীতিক ইয়াকভ ব্যারিসমান্টভকে হত্যা করেন আব্দাল্লাহ। এছাড়া ১৯৮৪ সালে মার্কিন কনস্যুল জেনারেল রবার্ট হোমকে হত্যার চেষ্টা করেন তিনি। ওই বছরই তাকে আটক করা হয়। পরে ১৯৮৭ সালে দোষী সাবস্ত হওয়ার পর তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। আব্দাল্লাহ লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী রেভ্যুলশনারি বিগ্রেডের একজন সদস্য ছিলেন। তিনি ফ্রান্সে যাবজ্জীবন পাওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কারাভোগ করা আসামী। দেশটির নিয়ম অনুযায়ী যাবজ্জীবন পাওয়া আসামীরা ৩০ বছরের কম সময়ের মধ্যেই ছাড়া পেয়ে যান। তবে তার ক্ষেত্রে সে নিয়মের ব্যাতয় ঘটেছে।

ভাইয়ের মুক্তির সংবাদে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন আব্দাল্লাহর ভাই রবার্ট আব্দাল্লাহ। বৃহস্পতিবার লেবাননে বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমরা আনন্দিত। আমি কখনই ভাবিনি যে ফরাসি কর্তৃপক্ষ তাকে মুক্তি দেবে। বিশেষ করে বেশ কয়েকবার তার মুক্তির আবেদন খারিজ হওয়ার পর সত্যিই এটা আমাদের জন্য আনন্দের। তিনি আরও বলেন, অন্তত একবারের জন্য হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের চাপ থেকে মুক্ত হতে পেরেছে ফ্রান্স।

এই মুক্তির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন আব্দাল্লাহর আইনজীবী জ্য-লুইস চ্যালানসেট। বলেছেন, তাকে আগে মুক্তি না দেয়াটা আইনের জয় অথবা রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি, দুটো বিষয়কেই নির্দেশ করে। আব্দাল্লাহকে লেবাননে ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনাই বেশি।

বিপক্ষের আইনজীবীরা আব্দাল্লাহর মুক্তি ঠেকাতে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে এই মুক্তি ঠেকানো সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। ২৫ বছর ধরে মুক্তির আবেদন করছেন আব্দাল্লাহ। তবে এখানে তার মুক্তির বিষয়ে ক্রমাগত ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও একটি বেসামরিক পক্ষ। লেবাননও তাকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছে। দেশটি বারবার বলেছে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া উচিত। এছাড়া তাকে বৈরুতে ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে দেশটি।

নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গত নভেম্বরে শর্তসাপেক্ষে আব্দাল্লাহার মুক্তির আদেশ দেয় ফ্রান্সের একটি আদালত। তবে বিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, তিনি এখনও তার রাজনৈতিক মতাদর্শ পরিবর্তন করেন নি। তারা এ বিষয়ে আপিল করেন। ফলে আব্দাল্লাহর মুক্তির বিষয়টি তখন স্থগিত করা হয়। 

mzamin

No comments

Powered by Blogger.