স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গড়ে ওঠা পিএলওর নিয়ন্ত্রণ আসলে কার হাতে by ফাহমিদা আক্তার
গত শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে সবচেয়ে জটিল ও রক্তাক্ত অধ্যায়গুলোর একটি রচিত হয়েছে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে ঘিরে। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের বিভাজন প্রস্তাব থেকে শুরু করে লাখো ফিলিস্তিনির নির্বাসন, যুদ্ধ, সংঘাত ও প্রতিরোধের কেন্দ্রে রয়েছে একটি চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা—নিজের ভূখণ্ডে মাথা তুলে স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার।
এই আকাঙ্ক্ষা থেকেই জন্ম নেয় প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)। অনেকেই মনে করেন, পিএলও ফিলিস্তিনিদের প্রকৃত স্বাধীনতা ও মুক্তির লক্ষ্যে যথাযথভাবে এগিয়ে যেতে পারেনি, বরং নিজেদের স্বার্থে আন্তর্জাতিক সমঝোতার পথে এমন সব আপস করেছে, যা জনগণের চাওয়া থেকে অনেক দূরে। সময়ের বাস্তবতায় পিএলও অনেকটাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, ক্ষমতাহীন ও প্রতীকী একটি কাঠামোতে পরিণত হয়েছে।
পিএলওর যাত্রা
১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে এক ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনকে দুই টুকরা করে আলাদা ইহুদি ও আরব রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়। আর জেরুজালেম হবে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক নগরী। ইহুদি নেতারা এ প্রস্তাব মেনে নেন, তবে ফিলিস্তিনি আরবরা তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফিলিস্তিনি আরবদের আশঙ্কা ছিল, এতে ইহুদিরাই সুবিধা পাবে এবং বিভাজনের কারণে আরবদের যাঁরা ইহুদি অঞ্চলের অধীন থেকে যাবেন, তাঁদের প্রতি অবিচার করা হবে।
১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইহুদি নেতারা ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এতে ৭ লাখ ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিজেদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ওই বছরই শুরু হয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ। এ যুদ্ধ দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব ও রক্তক্ষয়ের ভিত্তি গড়ে দেয়। ওই সময় ফিলিস্তিনিরা নানা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। তাদের কোনো সংগঠিত নেতৃত্ব ছিল না। রাজনৈতিকভাবে তারা ছিল দুর্বল ও প্রভাবহীন।
১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর আরব রাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে মিসর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামরিক সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। ফিলিস্তিনিরা নিজেদের একটি সংগঠিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব না থাকায় বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ফিলিস্তিনি ছোট ও বিচ্ছিন্ন প্রতিরোধ সংগঠন গড়ে তোলে। এগুলো প্রায়ই বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হতো। ফলে ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল সীমিত।
১৯৬৪ সালে আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলন চলার সময় ফিলিস্তিনিরা একত্র হয়ে একটি কেন্দ্রীয় সংগঠন গঠন করে। এর নাম দেওয়া হয় প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)। জাতিসংঘে পর্যবেক্ষক মর্যাদা পাওয়া এ সংগঠনের ছায়াতলে একাধিক দল ও সংগঠন কাজ করে। বর্তমানে রাজনৈতিক দল ফাতাহ হলো পিএলওর মূল চালিকা শক্তি।
পিএলওর গঠনকাঠামো
পিএলওর সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হয় প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল কাউন্সিল বা পিএনসি। এ সংস্থার বিভিন্ন দায়িত্বের মধ্যে আছে নীতিনির্ধারণ করা, নির্বাহী কমিটি ও কাউন্সিল বোর্ড নির্বাচন করা এবং সদস্যপদ–সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
আর পিএলওর নির্বাহী কমিটি দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড তদারকি করে। তারা বাজেটের বিষয়টি দেখভাল করে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পিএলওকে প্রতিনিধিত্ব করে। পিএনসি ও কেন্দ্রীয় পরিষদের গৃহীত নীতিমালা বাস্তবায়নের দায়িত্বও তাদের ওপর বর্তায়।
পিএনসি ও নির্বাহী কমিটির মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে কেন্দ্রীয় পরিষদ। এই পরিষদে ১২৪ জন সদস্য আছেন। আর প্যালেস্টাইন লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) হলো পিএলও আনুষ্ঠানিক সামরিক শাখা।
পিএলওর নেতৃত্বে ইয়াসির আরাফাতের ফাতাহ
১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েল বিজয়ী হওয়ার পর সামরিক নেতা ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন সংগঠন ফাতাহ পিএলওতে যুক্ত হয় এবং সংগঠনটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে শুরু করে। ১৯৬৯ সালে আরাফাত পিএলওর নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান হন। ২০০৪ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি এ পদে ছিলেন।
১৯৬০-এর দশকের শেষভাগ থেকে পিএলও জর্ডানে তাদের ঘাঁটি থেকে ইসরায়েলে হামলা চালাতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে পিএলও জর্ডান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয় এবং তাদের সদর দপ্তর লেবাননে স্থানান্তর করা হয়।
লেবাননে অবস্থানকালে পিএলওর বিভক্ত অংশ ইসরায়েলি সামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর হামলা করা বাদ দিয়ে গুপ্ত হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে শুরু করে। শক্তিশালী বোমা হামলা ও উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটায় তারা।
১৯৭৪ সালে ইসরায়েলের বাইরের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো বন্ধ করতে পিএলওর প্রতি আহ্বান জানান ইয়াসির আরাফাত। এটি ছিল আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা ও বৈধতা অর্জনের একটি পরিকল্পনার অংশ। ১৯৭৪ সালের অক্টোবরে আরব লিগ পিএলওকে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি’ হিসেবে স্বীকৃতি এবং তাদের পূর্ণ সদস্য পদ দেয়।
এক মাস পর ইয়াসির আরাফাত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেন। তিনি হলেন প্রথম কোনো অরাষ্ট্রীয় নেতা, যিনি এ সম্মেলনে ভাষণ দিয়েছেন।
১৯৮২ সালে পিএলওর নেতৃত্ব তাদের ঘাঁটি তিউনিসিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত সেখানেই ঘাঁটি ছিল। পরে তারা আবারও গাজায় ফিরে আসে।
অসলো চুক্তি
১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা দখল করে নেয়। এরপর বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘাত থামাতে ১৯৯৩ সালে পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাত এবং তৎকালীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আইজাক রবিন অসলো চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এর জন্য দুই নেতা ১৯৯৪ সালে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারও পান।
প্রথম অসলো চুক্তি স্বাক্ষর হয় ১৯৯৩ সালে এবং দ্বিতীয়টি ১৯৯৫ সালে। অসলো চুক্তির আগে ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রথম ফিলিস্তিনি সংগ্রামের সময়কাল বা ‘প্রথম ইন্তিফাদা’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অসলো চুক্তির মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ (পিএ) প্রতিষ্ঠিত হয়। চুক্তির আওতায় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকার কিছু অংশের ওপর সীমিত কর্তৃত্ব দেওয়া হয়। পিএ মূলত নিয়ন্ত্রিত হয় ফাতাহ দলের মাধ্যমে। ফাতাহ হলো এমন একটি রাজনৈতিক দল, যা ১৯৪৮ সালের নাকবার পর নির্বাসিত ফিলিস্তিনিরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
অসলো চুক্তির কারণে পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাত ও নির্বাসনে থাকা অন্য ফিলিস্তিনিরা দেশে ফেরার অনুমতি পান। অনেকেই এ চুক্তিকে একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তি অর্জনের সূচনা হিসেবে দেখেছিলেন। তবে প্রথম ইন্তিফাদার সময় গড়ে ওঠা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস এ চুক্তির বিরোধিতা করেছিল। তারা মনে করে, এ চুক্তির মাধ্যমে ‘ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে ফিলিস্তিনের জাতীয় স্বার্থকে বিক্রি’ করে দেওয়া হয়েছে।
অসলো চুক্তির পরও ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তি খুব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এরপর দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরু হয়। এর সময়কাল ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল।
২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পর ফাতাহ দলের জ্যেষ্ঠ সদস্য ও পিএর প্রথম প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ আব্বাস পিএলওর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কয়েক মাস পর তাঁকেই পিএর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়।
হামাসের সঙ্গে দ্বন্দ্ব
অসলো চুক্তির পর হামাস ও ফাতাহর মধ্যে আগে থেকে চলা দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়ে ওঠে, যা আজও অব্যাহত আছে। ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস পিএর নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পায়। তখন ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড শাসনের জন্য হামাস ও বিরোধী দল ফাতাহর মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। তবে তা সফল হয়নি।
২০০৭ সালে পিএলও ও হামাসের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। একটি সশস্ত্র সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে হামাস গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর মাহমুদ আব্বাস হামাস-নিয়ন্ত্রিত আইনসভা ভেঙে দেন এবং তার পরিবর্তে একটি জরুরি মন্ত্রিসভা গঠন করেন। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে কার্যত পশ্চিম তীরে পিএলওর কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। তবে গাজা উপত্যকার ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ স্থায়ীভাবে হারিয়ে যায়।
ফিলিস্তিনি রাজনীতিতে ফাতাহ ও হামাসের মধ্যকার রাজনৈতিক ও ভূখণ্ডগত বিরোধটা অনেকটাই গভীর। ফাতাহ ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দেয় এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২৪২ নম্বর প্রস্তাবের পক্ষে সম্মতি জানায়। অন্যদিকে হামাস ইসরায়েল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয় না। বরং এই সশস্ত্র গোষ্ঠী তাদের ১৯৮৮ সালের প্রতিষ্ঠা সনদে বর্তমান ইসরায়েলসহ ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
পশ্চিম তীরে ফাতাহ পরিচালিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সহায়তা পেয়ে আসছে। অন্যদিকে গাজার শাসনক্ষমতায় থাকা হামাসকে পশ্চিমা বিশ্ব সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক মহল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সংগঠনটি।
১৭ বছরের বেশি সময় ধরে গাজা একপ্রকার অবরুদ্ধ। স্থল, জল ও আকাশপথে ইসরায়েল ও মিসর কঠোরভাবে এ অঞ্চল অবরোধ করে।
২০১৪ সালে জাতীয় ঐক্য সরকার গঠনের একটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ২০১৭ সালে হামাস গাজার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে সম্মত হলেও অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে বিরোধে সেই চুক্তিও ভেঙে যায়। এরপর ২০২২ সালে আলজিয়ার্সে ১৪টি ফিলিস্তিনি দলের প্রতিনিধিরা একটি নতুন সমঝোতা চুক্তি সই করেন। তাঁরা ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেন। তবে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
পিএ গঠনের উদ্দেশ্য ছিল একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করা। তবে বাস্তবে এটি প্রায় ক্ষমতাহীন একটি প্রশাসন হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কঠোর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়ে থাকে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রের অবয়বে পরিচালিত হয়। এর মন্ত্রণালয়, সিভিল সার্ভিস, প্রশাসনিক কাঠামো—সবই আছে। তবে বাস্তবে ক্ষমতার রাশ রয়েছে ইসরায়েলের হাতে। কর আদায় থেকে শুরু করে পশ্চিম তীরে দিন দিন প্রবেশাধিকার সংকুচিত করা—সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে তেল আবিব।
ইসরায়েল প্রায়ই পিএর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোতে সরাসরি অভিযান চালায়। এখানেই শেষ নয়, ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিধিনিষেধের এক জটিল জাল বিছিয়ে রেখেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। তারা কোথায় থাকবে, কোথায় যাতায়াত করবে, এমনকি কোথায় ঘর বানাবে—সবকিছুই নির্ধারিত হয় ইসরায়েলি অনুমতির ঘূর্ণিতে।
নির্বাচন না দেওয়া নিয়ে জটিলতা
২০০৭ সালে ফিলিস্তিনের পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করার পর জনমত যাচাই ছাড়াই আব্বাস ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। পিএ এবং পিএলও জোটে তাঁর ফাতাহ পার্টি সবচেয়ে প্রভাবশালী। দীর্ঘদিন ধরে বিলুপ্ত থাকায় পিএ পার্লামেন্ট এখন অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে।
সমালোচকেরা ফিলিস্তিনের এমন পরিস্থিতির জন্য আব্বাসকে দায়ী করেন। তাঁরা মনে করেন, পার্লামেন্টকে পুনরুজ্জীবিত করতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে প্রচেষ্টা হয়েছিল, আব্বাস তা দুর্বল করে দিয়েছেন। মাহমুদ আব্বাসের বয়স এখন ৮৯ বছর। পিএর পাশাপাশি পিএলওরও নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
মাহমুদ আব্বাসের একজন উত্তরসূরি বেছে নিতে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের ওপর চাপ বাড়ছিল। এ অবস্থায় গত ২৪ এপ্রিল জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক শেষে পিএলও ভাইস প্রেসিডেন্ট নামে নতুন এক পদ সৃষ্টি করে।
মাহমুদ আব্বাস গত মার্চে তাঁর সম্ভাব্য উত্তরসূরি নির্বাচনের অংশ হিসেবে একটি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অবশেষে গত মাসে সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে নিজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হুসেন আল-শেখের নাম ঘোষণা করেন তিনি। ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংশয় দূর করতে এ পদক্ষেপ জরুরি ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বছর মাহমুদ আব্বাস একটি ডিক্রি জারি করে বলেছেন, কোনো কারণে যদি হঠাৎ প্রেসিডেন্টের পদ খালি হয়, তবে নির্বাচনের আগপর্যন্ত যেন একজন অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালন করেন। অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন প্যালেস্টিনিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিলের প্রধান রাওহি ফাত্তৌহ।
আব্বাস উত্তরসূরি ঘোষণা করার পর কানাডীয় আইনজীবী ডায়ানা বুট্টু আল–জাজিরাকে বলেছিলেন, পিএতে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ তৈরি করলেও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এড়ানো যাবে না। বরং এটি সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। পিএ যত বেশি খণ্ডিত হবে, তত বেশি ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি হবে। আর তখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মতো বাইরের শক্তি দিয়ে সেই শূন্যতা পূরণ হতে পারে।
ডায়ানা বুট্টু বিশ্বাস করেন, এই পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন একটি রাজনৈতিক পদ তৈরি করার পরিবর্তে মাহমুদ আব্বাসের একটি নির্বাচন দেওয়া উচিত। এতে ফাতাহ, পিএলও এবং পিএ সবার জন্য ভালো হবে বলেও মনে করেন এই আইনজীবী।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি, হিস্ট্রি.কম, ভক্স
![]() |
| রামাল্লায় পিএলওর সদর দপ্তর ছবি: রয়টার্স। ফাইল ছবি |

No comments