বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারে পেরুর মমি রহস্যে নয়া মোড়

পেরুর নাজকা মরুভূমিতে আবিষ্কৃত রহস্যময় ‘এলিয়েন’ মমিগুলোকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাকারী তদন্তকারী বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, মমিকৃত শরীরগুলোকে খুন করা হয়েছিল। ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন মোতাবেক, ২০১৭ সালে ওই ২১টি মমি আবিষ্কৃত হয়েছিল। যদিও অনেকেরই দাবি ছিল, এগুলো নকল। কেউ কেউ বলেন, সম্ভবত পশুদের অস্থি, কাগজ ও আঠার মণ্ড মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এই ‘পুতুল’গুলো। আবার এদের হাতে তিনটি করে আঙুল ও লম্বা মাথার খুলি দেখে অনেকেই তাদের ভিনগ্রহী প্রাণীও বলেন। যদিও পরে বিজ্ঞানীরা খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে দাবি করেন, এগুলি মোটেই নকল নয়, ‘আসল’! এবং এগুলো ১২০০ বছর আগের মমি। কিন্তু এরা আদপে কোথাকার বাসিন্দা ছিল সেসব জানা যায়নি।

এগুলো কি মানুষ, নাকি ভিনগ্রহের প্রাণী? ২০২৫ সালে এসেও যে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এর মধ্যেই মমি রহস্যে নয়া মোড়। বলা হচ্ছে, ওই মমিকৃত শরীরগুলোতে যে চিহ্ন মিলেছে তা থেকে বোঝা যাচ্ছে, অত্যন্ত নৃশংসভাবে আঘাত করা হয়েছিল তাদের

উল্লেখ্য, সাংবাদিক এবং ইউফোলজিস্ট জেইম মাউসান নাজকা মরুভূমিতে এই রহস্যময়, মমিকৃত মৃতদেহগুলো আবিষ্কার করেছিলেন। প্রাথমিক ডিএনএ বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, এগুলি আংশিকভাবে মানুষ এবং আংশিকভাবে ‘অজানা প্রজাতি’, যা মেক্সিকোর ইউএফও সম্পর্কে প্রথম কংগ্রেসনাল শুনানির সূত্রপাত করে।

তবে, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা তাদের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এখন, বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে মমিগুলো আসল। যদিও তাদের উৎপত্তি অজানা তবুও মারিয়া, মন্টসেরাট এবং অ্যান্টোনিও নামে তিনটি মমির বিশদ গবেষণা থেকে জানা যায় যে, তারা হয়তো সহিংস মৃত্যুর শিকার হয়েছিলো।

মেক্সিকান নৌবাহিনীর চিকিৎসা বিভাগের প্রধান বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক  পরিচালক ড. জোসে জালস বলেছেন যে, তিনি ২১টি রহস্যময় মমিকৃত মৃতদেহের গভীর বিশ্লেষণ করেছেন। ৩৫-৪৫ বছর বয়সী ৫'৬" উচ্চতার একজন নারী মারিয়াকে পরীক্ষা করে গুরুতর আঘাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। মারিয়ার শরীরে তার নীচের পেলভিসে গভীর কাটা এবং কামড়ের চিহ্ন দেখা গেছে, পাশাপাশি তার নিতম্ব পর্যন্ত বিস্তৃত হাড়ে একাধিক ছোট ছোট ক্ষতও দেখা গেছে। ওই স্থানের চামড়া এবং চর্বি অপসারণ করা হয়েছে এবং মেরুদণ্ডের হাড়ের দুটি কশেরুকা ভাঙা ছিল। ক্ষত থেকে বোঝা যায় যে, তিনি সম্ভবত একটি পাহাড় থেকে পাথরের উপর পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। এই অনুসন্ধানগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, মারিয়ার মৃত্যু সম্ভবত সহিংস এবং আঘাতমূলক ছিল।

ইতিমধ্যে, ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সী মন্টসেরাটের সিটি স্ক্যানে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ পাঁজরের মাঝখানে বুকে একটি ক্ষত দেখা গেছে। স্ক্যানে উল্লেখযোগ্য, দীর্ঘস্থায়ী আঘাতের প্রমাণও পাওয়া গেছে। কোনো গভীর আঘাত থেকে স্ক্যাপুলা এবং পাঁজরের হাড় ভেঙে গিয়েছিলো। মারিয়ার মতো, মন্টসেরাটেরও স্বতন্ত্র শারীরিক বৈশিষ্ট্য ছিল, যার মধ্যে ছিল একটি লম্বা মাথার খুলি, তিনটি করে হাতের আঙুল ও পায়ের আঙ্গুল এবং হৃদপিণ্ড, লিভার এবং অন্ত্রের মতো অক্ষত অভ্যন্তরীণ অঙ্গ। পেরুর মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ডা. ডেভিড রুইজ ভেলা অ্যান্টোনিওর পরীক্ষা করে বুকে মারাত্মক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পান। ছুরিকাঘাতটি বুক, পেট এবং লিভারে প্রবেশ করে।

ডা. ভেলার মতে, আঘাতটি গুরুতর ছিল, যার ফলে শরীরে অভ্যন্তরীণভাবে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছিল। এই অনুসন্ধান থেকে আরও বোঝা যায় যে অ্যান্টোনিওর মৃত্যু একটি হিংসাত্মক আক্রমণের ফলে হতে পারে। এসব দেখে ড. জালস বলেছেন, ‘এগুলো আরও স্পষ্ট এবং অকাট্য প্রমাণ দেয় যে এই দেহগুলো ১০০% খাঁটি, বাস্তব এবং একসময় জীবিত ছিল।’

সূত্র : এনডিটিভি

mzamin

No comments

Powered by Blogger.