ইসরাইলি হামলায় বাবা-মা হওয়ার স্বপ্ন ধূলিসাৎ যে দম্পতির
তার স্বামী বলেন, ক্রমাগত বোমাবর্ষণের কারণে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটেছি। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পালিয়েছি। তিনি বলেন, নোরা যখন সাত মাসের গর্ভবতী তখন তার তীব্র রক্তক্ষরণ হয়। তবে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা একটি গাড়িও খুঁজে পাইনি। অবশেষে আমরা নোরাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলেও ইতিমধ্যে তার গর্ভপাত হয়ে যায়। নোরা দুটি বাচ্চা জন্ম দেয়। এর মধ্যে একটি সন্তানের গর্ভাবস্থায় মৃত্যু হয়। জন্মের কয়েক ঘণ্টা পর মৃত্যু হয় অন্য নবজাতকের। নোরা বলেন, মুহূর্তেই সবকিছু শেষ হয়ে গেলো। জমজ সন্তান হারানোর পাশাপাশি হিমায়িত ভ্রুণও হারান এই দম্পতি। হাসপাতালে থাকা কয়েক হাজার ভ্রুণ নষ্ট করে দেয় ইসরাইলি বাহিনী। আল-বাসমা ফার্টিলিটি সেন্টারের পরিচালক ড. বাহা ঘালাইনি দুঃখভারাক্রান্ত সুরে বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শুরুতেই হাসপাতালে থাকা ভ্রুণ নষ্ট করে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, ওই হাসপাতালে ৪ হাজার হিমায়িত ভ্রুণ ও কমপক্ষে ১ হাজার শুক্রাণু ও ডিম্বানুর নমুনা রাখা হয়েছিলো। এছাড়া ইসরাইলি হামলায় হাসপাতালের দুটি ইনকিউবেটর নষ্ট হয়। যার মূল্য কমপক্ষে ১০ হাজার ডলার। ড. ঘালাইনি বলেন, ইসরাইলি হামলায় ৪ হাজার ভ্রুণ নষ্ট হয়েছে। এগুলো শুধু সংখ্যা নয়। এগুলো মানুষের স্বপ্ন। কয়েক বছর অপেক্ষা করে, বেদনাদায়ক চিকিৎসা নিয়ে বাবা-মা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন ওই সকল দম্পতি। এক মুহূর্তেই তাদের সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়েছে। তিনি বলেন, এমন শতাধিক নারী আছেন যারা দ্বিতীয় বার আইভিএফ চিকিৎসার মাধ্যমে আর মা হতে পারবেন না। এটি তাদের শেষ সুযোগ ছিলো। এদের মধ্যে কেউ কেউ বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন, কেউ আবার ক্যান্সার আক্রান্ত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) তরফে বলা হয়, হামলার যথাযথ সময় জানানো হলে তারা বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবে। আরও বলা হয়, তারা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কাজ করে এবং বেসামরিক মানুষদের ক্ষতি যাতে কম হয় সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে। এ বছরের মার্চে অধিকৃত ফিলিস্তিনের জন্য জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন অভিযোগ করে যে, ইসরাইল ইচ্ছাকৃত বাসমা আইভিএফ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ওই ভ্রুণগুলো নষ্ট করে দেয়। যাতে ফিলিস্তিনিরা সন্তান জন্ম দিতে না পারেন। সংস্থাটির তরফে আরও অভিযোগ করা হয়, ইসরাইল হাসপাতালটিতে নিরাপদে সন্তান প্রসব ও নবজাতকের যত্নে ব্যবহৃত সহায়তা উপকরণ প্রবেশেও বাধা দেয়।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী এর জবাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তিনি ওই সংস্থার বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম সমর্থনের অভিযোগ করেন। আইডিএফের এক মুখপাত্র বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ফার্টিলিটি ক্লিনিকে হামলা চালানো হয়নি। আরও বলেন, গাজাবাসীকে সন্তান জন্মে বাধা দেয়ার কোনো উদ্দেশ্য আমাদের নেই। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। এদিকে ড. ঘালাইনি বলেন, গাজার নয়টি ফার্টিলিটি ক্লিনিকের সবগুলো হয় ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, নাহলে তা পরিচালনার অযোগ্য করে দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এতে প্রাণ হারায় প্রায় ১২০০ ইসরাইলি। হামাস জিম্মি করে ২৫১ জনকে। প্রতিশোধ নিতে ইসরাইলও গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে। যা এখনও অব্যাহত আছে। ওই হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

No comments