সংস্কার কমিশনে ব্যবসায়ীদের যুক্ত হতে বললেন ড. ইউনূসের বিশেষ দূত

অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে যে ছয় কমিশন করেছে, সেসবের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের আরও সম্পৃক্ত হওয়া দরকার বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী কমিউনিটিকে রিফর্ম কমিশনগুলোর সঙ্গে আগের চেয়ে আরও বেশি সম্পৃক্ত হতে হবে। এ কমিশনগুলোকে তাদের কাজ করার জন্য সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। দেশীয়  ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংশ্লিষ্টরা, আমাদের বন্ধু ও সমর্থকরা কমিশনগুলোর সুপারিশের জন্য মুখিয়ে আছেন। তাই ব্যবসায়ীদের এ কমিশনগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন।

গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজে আইসিটি খাতের সংস্কার নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, পুলিশ সংস্কার কমিশন ব্যবসায়ীদের জন্য কি করবে? পাবলিক সার্ভিস সংস্কারের প্রক্রিয়া কীভাবে ব্যবসাকে প্রভাবিত করবে? বেসরকারি সেক্টরের সদস্য ছাড়াই সরকারি কমিটিগুলো কেন গঠিত হচ্ছে? এই ফান্ডামেন্টাল প্রশ্নগুলো তুলতে হবে। বিশেষ দূত বলেন, সরকারে আমার সহকর্মীদের প্রতি আমার যে শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ- সেটা আর কোথাও পাইনি।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, কী করতে হবে, কবে বা কোথায় করতে হবে- সেটা আমাদের লিখে পাঠান। আমি বিষয়গুলো নিয়ে আমার সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবো। তিনি বলেন, যখন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়, তখন তিনি কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সুনির্দিষ্ট তথ্য উপস্থাপন ছাড়া ঢালাওভাবে বলা কথাবার্তার প্রতিক্রিয়া জানানো যায় না। ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আশরাফ আহমেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আইসিটি খাত সংস্কারে নানা তথ্য ও প্রস্তাব উপস্থাপন করেন বডস্টিন টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর শাহরুখ ইসলাম।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেছেন, আমাদের মহাখালীতে যে কড়াইল বস্তি আছে- সেখানে হাইটেক পার্ক করার কথা ছিল। সেটার প্ল্যান করা আছে। বস্তিবাসীদের কীভাবে পুনর্বাসন করা হবে, সেটারও প্ল্যান করা আছে। ৯০ একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠা ৮০ হাজার মানুষের এ আবাসস্থলই ঢাকার সবচেয়ে বড় বস্তি। এখানে যদি একটা ভালো হাইটেক পার্ক করা যায়, শহরের মধ্যে অবস্থিত হওয়াতে সবাই এটাতে ইনভেস্ট করবে। শুধু আমরা না, অনেক বিদেশি কোম্পানি এটাতে ইনভেস্ট করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা, সফটওয়্যার এবং যন্ত্রপাতিসহ তথ্যপ্রযুক্তির বৈশ্বিক বাজার প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলার, তবে বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৃহত্তম জনগোষ্ঠী থাকা সত্ত্বেও, আমাদের আয় মাত্র ২.৫ বিলিয়ন ডলার, যা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন, যথাযথ বাস্তবায়ন, কৌশলগত বিনিয়োগ, সরকারি ও বেসরকারি খাতসহ সকল অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা জরুরি। তিনি আরও বলেন, সফ্‌টওয়্যার ও পরিষেবা রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং ২০২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয় প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এ খাতে দক্ষতার ব্যবধান এবং পরিকাঠামোর অভাবের কথা উল্লেখ করে আশরাফ আহমেদ বলেন, এই ব্যবধান মেটাতে শিক্ষা, লজিস্টিক পরিকাঠামো এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপরন্তু উচ্চমানের মূল্য সংযোজন তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবার জন্য তিনি গবেষণা ও উন্নয়ন এবং রপ্তানি প্রণোদনার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। এ খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন যথাযথ বাস্তবায়ন, কৌশলগত বিনিয়োগ, সরকারি, বেসরকারি খাতসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের মধ্যকার সমন্বয় একান্ত অপরিহার্য বলে ডিসিসিআই সভাপতি মত প্রকাশ করেন।

বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের পর তথ্য-প্রযুক্তি খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়, যেখানে বিশেষকরে তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণ সম্ভব।
ওয়ালটন ডিজি টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লিয়াকত আলী বলেন, প্রতিযোগিতামূলক নীতির অভাবে আমরা দেশে এফডিআই আকৃষ্ট করতে পারছি না। তিনি আইটি ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য শুল্ক ও কর কাঠামো সংস্কারেরও অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, সেমিকন্ডাক্টর সেক্টরে বাংলাদেশের ভালো ডিজাইনের হাউজ রয়েছে, তাই সরকারি ও বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগ বাংলাদেশে হার্ডওয়্যার উৎপাদনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে।

mzamin


No comments

Powered by Blogger.