৮ ডিসি প্রত্যাহার: সচিবালয়ের ঘটনায় তদন্ত কমিটি
এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব জানান, বাছাই কমিটির বৈঠকে পর্যালোচনা করে আট জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাশাপাশি চারজন জেলা প্রশাসকের জেলা অদল-বদল করা হয়েছে। বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদের নেতৃত্বে এক সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আট জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এরা হলেন- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উপ-সচিব সুফিয়া আক্তার রুমীকে লক্ষ্মীপুর থেকে, বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি-২ এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান জয়পুরহাট থেকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ফারহানা ইসলামকে কুষ্টিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মাহবুবুর রহমানকে রাজশাহী থেকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন হাওলাদারকে সিরাজগঞ্জ থেকে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব আবদুল আজিজকে শরীয়তপুর থেকে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলামকে দিনাজপুর থেকে এবং আরপিএটিসি’র উপ-পরিচালক মনোয়ারা বেগমকে রাজবাড়ী জেলার ডিসি পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে টাঙ্গাইলের ডিসিকে পঞ্চগড়ে, নীলফামারীর ডিসিকে টাঙ্গাইলে, নাটোরের ডিসিকে লক্ষ্মীপুরে এবং পঞ্চগড়ের ডিসিকে নীলফামারীতে বদলি করা হয়েছে। নতুন ডিসি হওয়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধা নেয়ার অনেক অভিযোগ উঠে। এ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ তুলে হট্টগোল করেন উপ-সচিব পর্যায়ের একদল বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা। জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগে সরকারের আমলে পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন এসব কর্মকর্তারা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সমপ্রতি তাদের উপ-সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে। ডিসি হওয়ার জন্য তাদের প্রত্যাশা ছিল। সোমবার দেশের ২৫ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয়া হয়। মঙ্গলবার আরও ৩৪ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ হয়। তালিকায় নাম না দেখে হতাশ হয়ে হট্টগোল করেন তারা।
নতুন ডিসিদের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ব্রিফিং হঠাৎ স্থগিত: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নতুন নিয়োগ পাওয়া জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ব্রিফিংটি অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হয়। সদ্য নিয়োগ পাওয়া ৫৯ জন জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) একটি ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল গতকাল সকাল ১১টায়। সেটি স্থগিত করা হয়। এজন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ডিসিদের পদায়নকৃত কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে বারণ করা হয়।
ডিসি নিয়োগ নিয়ে হট্টগোলে তদন্ত কমিটি গঠিত: ডিসি নিয়োগ ইস্যুতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হট্টগোলের ঘটনায় এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় জানায়, মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এমএ আকমল হোসেন আজাদের নেতৃত্বে এক সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।
সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) হতে ইচ্ছুকদের বিশৃঙ্খলা শোভন হয়নি বলে মনে করেন ডিসি নিয়োগ নিয়ে ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের হট্টগোল তদন্তে গঠিত কমিটির একমাত্র সদস্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এমএ আকমল হোসেন আজাদ। গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এমএ আকমল হোসেন আজাদ বলেন, সব ডেপুটি সেক্রেটারি ডিসি হয় কিনা! কম করে হলেও ১ হাজার ডেপুটি সেক্রেটারি থেকে মাত্র ৬৪ জন ডিসি হন। বর্তমান সরকার পাঁচজন বাদে ৫৯ জনকে পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। রেকর্ড আছে একজন ডিসিকে দ্বিতীয় দিনেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। যাওয়ার আগে যদি প্রি কন্সেন্ট বলেন, এদের সবাই স্বৈরাচার সরকারের উপকারভোগী ছিল। কয়েকজন সচিবের নেতৃত্বে হাই পাওয়ার কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা যাচাই বাছাই করে দেখেছে, টপ স্কোরার, বেস্টদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এখন বিতর্ক হয়েছে এরা খারাপ, এরা ভালো। এরই মধ্যে জনপ্রশাসন সচিব কয়েকজনকে বাতিল করেছেন। সচিবালয়ে ডিসি থেকে ইচ্ছুকদের বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন নিউজ দেখে সাধারণভাবে মনে করি এটা শোভন হয়নি। কারা করেছে, যারা ডেপুটি সেক্রেটারি, সিনিয়র অফিসার, ডিসি হতে ইচ্ছুক, তালিকায় তাদের নাম ছিল, কিন্তু তারা হয়নি। তালিকায় নাম থাকলেই যদি তারা মনে করেন যে, তারা ডিসি হয়েছেন, এটা ঠিক নয়। আমাদের বাছাই করে ৬০ জনের তালিকা দিতে বলেছে। যারা ডিসি হন নাই, তারাতো পদাবনত হননি, ইজ্জতহানি হয় নাই। তারা কেন হয় নাই, আমরা কিন্তু সেটা প্রকাশ করিনি। যদি প্রকাশ করার কোনো আইনগত সুযোগ থাকে, যদিও সেই সুযোগ নাই, তাহলে তারা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হবেন। অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট অনুযায়ী আমরা এটা প্রকাশ করতে পারি না। তিনি সেই পদের জন্য যোগ্য হতে পারেন নাই, অযোগ্য শব্দটা আমরা ব্যবহার করি না। তিনি আরও বলেন, একটা জেলার ডিসি মানে একটি মিনি বাংলাদেশের তিনি নেতা। বর্তমান সময়ে ১২০টা কমিটির সভাপতি তিনি। ডিসির মাধ্যমেই সব কিছু চ্যানেলাইজ হয়ে যায়। সুতরাং ডিসির অভিজ্ঞতা, বয়স, স্বাস্থ্য অনেক কিছু বিবেচনা করতে হয়। আমি কিন্তু তাদের বিভাগীয় মামলা করার অথরিটি না। সাক্ষ্য-প্রমাণে আমি কী পেলাম সেটা বলতে পারি। কারা দোষ করেছে, কারা করেনি।
অন্যদিকে, সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পি কে এম এনামুল করিমের সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। নিয়োগের একদিন পরেই মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তাকে ডিসি নিয়োগের আদেশটি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আগের দিনে সোমবার ২৫ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয় সরকার। সেখানে এনামুল করিমকে সিলেটের ডিসি নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এনামুল করিমের নিয়োগ আদেশ বাতিল করে মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে সিলেটের ডিসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সোমবার সিলেটে ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির পর ফেনীর সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) এনামুল করিমের নিয়োগ নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এনামুল করিমের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে ফেনীর কলেজছাত্রী নুসরাত হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের বাঁচাতে প্রচেষ্টা চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।
No comments