অশান্ত মণিপুর, কারফিউ উপেক্ষা সংঘর্ষ, সমালোচনায় কংগ্রেস

কারফিউ উপেক্ষা করে অশান্ত মণিপুরে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রছাত্রীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে তাদের। তাতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্য সরকার ইম্ফল উপত্যকার ৫টি জেলায় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। দুই জেলায় কারফিউ আরোপ করে। কিন্তু টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ইম্ফলের রাজপথে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষ চলতেই থাকে। এ খবর দিয়ে অনলাইন দ্য হিন্দু বলছে, রাজভবন ও মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ ঠেকাতে পুলিশ শক্তি প্রয়োগ করে। এ সময় ওইসব শিক্ষার্থী আহত হন। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর আহতদের ভর্তি করা হয়েছে ইম্ফলে রিজিয়নাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসে। এর মধ্যে একজন ছাত্রী আছেন। একজন মেডিকেল অফিসার বলেছেন, তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালের আইসিইউ’তে ভর্তি করা হয়েছে। ইম্ফলের খাওয়ারামবান্দ এলাকায় পুরোপুরি নারীদের একটি মার্কেটে একদল শিক্ষার্থী অবস্থান করেন। সেখান থেকেই উত্তেজনার সূত্রপাত। ওই এলাকায় ইম্ফল ওয়েস্ট প্রশাসন ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করে। রাজ্যটির রাজধানী ইম্ফল ওয়েস্ট এবং ইম্ফল ইস্ট জেলার মধ্যে বিস্তৃত। নারীদের ওই মার্কেটে অবস্থান নিয়েছিলেন যে বিপুল সংখ্যক ছাত্র, তাদের সঙ্গে কারফিউ ভঙ্গ করে যোগ দেন আরও শিক্ষার্থীরা। তারা সম্মিলিতভাবে রাজভবনের দিকে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু ভিআইপি এলাকার কাছাকাছি পৌঁছাতে তাদেরকে বাধা দেয় নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। মণিপুর ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ইম্ফলের অন্য অংশে আলাদা বিক্ষোভ করেন। তারা রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিং এবং পুলিশের মহাপরিচালক রাজিব সিং-এর পদত্যাগ দাবি করে। কারণ, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তারা জনগণের জীবন ও সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। নৈতিকতার ভিত্তিতে সব এমএলএ’র পদত্যাগও দাবি করে এই বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দিতে বিভিন্ন গ্রুপে নারী ও পুরুষরা দলে দলে ভাগ হয়ে যান। তারা বিক্ষোভে যোগ দেন। অনেক স্থানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী নংথোমবাম বীরেন সিং-এর ছবি প্রদর্শন করছে এমন কিছু পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন। এ অবস্থায় স্থানীয় সময় সকাল ১১টা থেকে ইম্পল ওয়েস্ট জেলা কর্তৃপক্ষ কারফিউ জারি করে। থৌবাল জেলায় ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহতির ১৬২ ধারার অধীনে নিষেধাজ্ঞামূলক অর্ডার উপেক্ষা করা হয় যখন তখন ইম্ফল ইস্ট জেলা প্রশাসন একই রকম কারফিউ জারি করে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মোবাইল ইস্টারনেট বন্ধ করার, লাইন ধার দেয়া, ব্রডব্যান্ড এবং ভিপিএন সার্ভিস বন্ধ করে দেয় ইম্ফল উপত্যকার ৫টি জেলায়। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা থেকে তা কার্যকর হয়। এর উদ্দেশ্য, জাতীয়তা ও সমাজবিরোধীদের কর্মপরিকল্পনা বন্ধ করা, শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখা। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা বিভাগ।

ওদিকে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকাল ৬টার দিকে শিক্ষার্থী এবং নারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মণিপুর গভর্নর লক্ষ্মণ প্রসাদ আচার্য। তিনি শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন। রাজভবন থেকে ইস্যু করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হঠাৎ করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গভর্নর। এতে আরও বলা হয়, মণিপুরের প্রত্যেকের উচিত চলমান সহিংসতা কাটিয়ে ওঠার উপায় বের করা এবং এতে অবদান রাখা। কারণ, সহিংসতা কোনো সমস্যার সমাধান দিতে পারে না। আরও বলা হয়েছে, অব্যাহতভাবে সরকারি পর্যায়ের নেতা, ছাত্র এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনা করছেন গভর্নর।

কংগ্রেস সরকার ১৫ বছরে যা করতে পারেনি তা ১৫ মাসে করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার এই প্রতিশ্রুতির পর মণিপুরের উত্তেজনা নিয়ে  মোদির সমালোচনা করেছেন বিরোধী দল কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা জয়রাম রমেশ। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে মণিপুরের সব শ্রেণির মানুষের সুনির্দিষ্ট ১৫ মাসের ম্যান্ডেটে তিনি (মোদি) রাজ্যের সহিংসতাকে বৃদ্ধি পাওয়া অনুমোদন দিয়েছেন। যে আগুন এখনো জ্বলছে, তা প্রশমিত হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। জয়রাম রমেশ আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করেছে রাজ্যটিতে সাংবিধানিক মেশিনারি ভেঙে পড়েছে। কিন্তু মোদির এখনো নড়নচড়ন নেই। তিনি বিশ্ব জুড়ে ভ্রমণ করছেন। কিন্তু ২০২৩ সালের ৩রা মে এই রাজ্যে বিয়োগান্তক ঘটনা শুরু হওয়ার পর তিনি এখানে সফরে আসার সময় পাননি অথবা সফরে অনীহা দেখিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৬ মাসে মণিপুরে কুকি- জো এবং মেইতি জনগণের মধ্যে জাতিগত দাঙ্গায় কমপক্ষে ২৩০ জন নিহত হয়েছেন। চার মাস পরিস্থিতি একটা শান্ত থাকার পর ১লা সেপ্টেম্বর সহিংসতা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এর পর দু’জন নারী সহ নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১১ জন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। কর্মকর্তারা বলছেন, উগ্রপন্থিরা এখন ড্রোন ব্যবহার করে বোমা হামলা করছে এবং দীর্ঘ পাল্লার রকেট হামলা করছে। এর ফলে পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হয়েছে। ইম্ফল উপত্যকায় কয়েকদিনে ড্রোন হামলায় ‘ফরেন এলিমেন্টস’ জড়িত থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন আইজিপি আইকে মুইভাহ।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.