শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় চাঞ্চল্য ফিরেছে: অসন্তোষ নিরসনে শ্রম সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ কমিটি আশুলিয়ায়

সাভারের আশুলিয়ায় বিভিন্ন দাবি আদায়ে গত দুই সপ্তাহ ধরে অব্যাহত শ্রমিক বিক্ষোভের পর বিজিএমইএ’র আহ্বানে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারিতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে। গতকাল সকাল থেকেই তৈরি পোশাক শ্রমিকরা নিজ নিজ কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ দিয়েছেন। দিনভর শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি এবং কোনো বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে আশুলিয়ায় গত দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন দাবি আদায়ে চলমান শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি কারখানা পরিদর্শন করেছেন শ্রম সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ কমিটি। এ সময় কমিটির সদস্যরা কারখানার মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের অভিযোগ শুনে প্রাথমিক দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

সকাল ১০টায় শ্রম সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ কমিটির সদস্যরা প্রথমে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার অনন্ত গ্রুপ পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে তারা পার্শ¦বর্তী হা-মীম গ্রুপ পরিদর্শনে যান। সেখানে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সদস্যরা শ্রমিক মালিকসহ পোশাক খাতে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। পরিদর্শনকালে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং শ্রম সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা কমিটির আহ্বায়ক সবুর হোসেন বলেন, গত বুধবার ১১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটি গঠন করা হয়। পরদিন কমিটির কার্যপরিধি ও কার্য পরিচালনার বিষয় নিয়ে সভা করা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে শিল্পাঞ্চলের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে সকল অভিযোগ শুনতেই সরজমিন এসেছি। আশা করছি এখন থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সব কারখানা ধীরে ধীরে খুলে দেয়া হবে। কোনো দাবিতে সড়ক ও কাজ বন্ধ করার কোনো প্রয়োজন নেই। সবুর হোসেন আরও বলেন, কারখানার মালিক, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, আপত্তি, অভিযোগ তারা জানতে চান। এসব জানানোর জন্য হটলাইন ১৬৩৫৭ নম্বর চালু করা হয়েছে। সেইসঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, ই-মেইল আইডি ও ডাকযোগেও অভিযোগ জানানো যাবে। শ্রম সংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ কমিটির সদস্যরা মালিক শ্রমিক উভয় পক্ষেরই অভিযোগ শুনে সরকারকে অবহিত করবেন। যে সকল দাবি পূরণ করা যায় তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। গতকাল সকালে আশুলিয়ার অধিকাংশ পোশাক কারখানার শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজে যোগ দিয়েছেন। এর ফলে বেশির ভাগ কারখানা উৎপাদনে ফিরলেও  বন্ধ রয়েছে প্রায় ২০টি কারখানা। এর মধ্যে শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে ১৮টি, বাকি দু’টি কারখানায় সাধারণ ছুটি চলছে। সকালে শিল্পাঞ্চলের পোশাক কারখানায় দেখা যায়, সকাল ৮টা থেকে খোলা কারখানার শ্রমিকরা কর্মস্থলে যোগ দিয়ে উৎপাদন শুরু করে। নাশকতা ও সহিংসতা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। সকালে আশুলিয়ার কাঠগড়া, জিরাবো, নরসিংহপুর, জামগড়া এলাকায় দেখা যায়, বিভিন্ন কারখানার সামনে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। সড়কে টহল দিচ্ছেন সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা। কারখানার মালিকপক্ষ জানায়, সকালে ৪ থেকে ৫টি কারখানায় শ্রমিক প্রবেশ করলেও বিভিন্ন দাবিতে উৎপাদন বন্ধ রাখেন তারা। পরে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তারাও কাজে যোগ দিয়ে উৎপাদন শুরু করেন। শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম  বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩(১) ধারায় ১৮টি বন্ধ এবং দু’টি কারখানায় সাধারণ ছুটি রয়েছে। এর বাহিরে শিল্পাঞ্চলের সকল কারখানায় স্বাভাবিক  রয়েছে উৎপাদন কার্যক্রম। শিল্পাঞ্চলে যেকোনো ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। এ ছাড়া শিল্পাঞ্চলে যৌথবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে।

mzamin


No comments

Powered by Blogger.