শূন্য থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক

ওমর ফারুক। কান্দিরপাড় মডেল ইউপির চেয়ারম্যান। সাবেক উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। পরবর্তীতে হন যুবলীগের সদস্য সাবেক মন্ত্রীর শ্যালক মহব্বত আলীর অন্যতম সহচর। চেয়ারম্যান হিসেবে  ৭ বছরে শূন্য থেকে হাজারো কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। পৌর এলাকায় রয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।

দৌলতগঞ্জ বাজারে বিছানাপট্টিতে পৈতৃক একটি দোকান ছিল ফারুকের। বিছানা ও ছাতা বিক্রি করতো। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাবার নাম নুরু মিয়া। কান্দিরপাড় ইউপির ইরুয়াইন গ্রামে তার বাড়ি। সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের শ্যালক মহব্বত আলীর হাত ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতিতে জড়িতে পড়েন। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। এরপর ভাগ্যের চাকা খুলতে থাকে তার। ২০১৬ সালে তাজুল ইসলাম ওই ইউনিয়ন সফরকালে কান্দিরপাড় ইউনিয়নকে মডেল ইউনিয়ন ঘোষণা করেন। পরবর্তী পর্যায়ে আবারো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ইউনিয়নে রয়েছে তার নিজস্ব বাহিনী। তার বিভিন্ন লাইসেন্সে এলজিইডি বড় বড় কাজ করতো। প্রত্যেকটি কাজের মান নিম্নমানের। কয়েক বছর আগে পৌর এলাকার পশ্চিমগাঁও সাহা পাড়া রাস্তার পাশে একটি পুকুর ক্রয় করে। রাতারাতি পুকুর ভরাট করে। অত্যাধুনিক ডিজাইনের ৬ তলা একটি বিল্ডিং নির্মাণ করে। নাম দেয়া হয় চেয়ারম্যান ভিলা। এর পূর্বে এলাকায় বিলাসবহুল একটি বাগানবাড়ী নির্মাণ করে।

স্থানীয়রা বলেন, ফারুকের রয়েছে শত শত একর সম্পত্তি। গত ৩ বছর আগে দৌলতগঞ্জ বাজারে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের বহুতল বিশিষ্ট একটি মার্কেট ক্রয় করেন। এরপর আলোচনায় আসেন তিনি। রাতারাতি চলাফেরা পরিবর্তন আসে। একাধিক মডেলের গাড়ি রয়েছে তার। বিছানাপট্টি নাম বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান গলি নামকরণ করা হয়। কয়েক মাস পূর্বে চেয়ারম্যান আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে থানার সামনে একটি বিশাল সম্পত্তি ক্রয় করে। ওই সম্পত্তিতে একটি মার্কেট তৈরি করে। রড সিমেন্ট ও টিনের দোকান দেয়া হয়। এলাকায় রয়েছে তার নিজস্ব বাহিনী। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে সন্ত্রাসীদের দিয়ে ধরে এনে নির্যাতন চালাতো।

দৌলতগঞ্জ বাজারে রুহুল আমিন নামে জনৈক ব্যবসায়ী। এলাকায় পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলছে। বিরোধকে কেন্দ্র করে তার সন্ত্রাসীদের দিয়ে পুকুর ও বেড়ির মাছ বছরের পর বছর দখল করে নেয়। ২০০০ সালে খালের পাশে রাস্তা তৈরি করবে বলে ৫০টি তালগাছ কেটে নিয়ে যায়। পরবর্তী পর্যায়ে ওই খাল দিয়ে আর রাস্তা তৈরি করেনি। এ ছাড়াও তার বড় বড় ৫০টি গাছ সন্ত্রাসীদের দিয়ে কেটে নিয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে ৭-৮টি মামলা করেন চেয়ারম্যান ফারুক। ২০১৭ সালে রুহুল আমিন থানায় মামলা করতে গেলে তৎকালীন ওসি মামলা নেয়নি। শুধু রুহুল আমিন নয় এলাকার অনেকেই বলেন, ফারুক চেয়ারম্যান হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পেতো না। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললে তার সন্ত্রাসী বাহিনীদের দিয়ে তাকে এলাকা ছাড়া করতো। গত ৫ই আগস্ট ছাত্র- জনতার আন্দোলনের কারণে আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে পালিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তারাও পালিয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ জনতা তার চেয়ারম্যান বাসভবন, বাজারে বিভিন্ন দোকান ব্যাপক ভাঙচুর করে। পলাতক ও মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.