বাফুফে সভাপতি পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে যা বললেন তাবিথ আউয়াল

তিনি যে নির্বাচন করবেন, সেই বিষয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল আগেই। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দেয়ায় ধোঁয়াশা ছিল। অবশেষে গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে সেই ধোঁয়াশা দূর করলেন তাবিথ আউয়াল। কীভাবে, কাদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করবেন সে বিষয়ে পরে জানাবেন বাফুফের সাবেক এই সহ-সভাপতি। কারা কাউন্সিলর হন, কারা নির্বাচন করবেন তা দেখে প্যানেলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন তাবিথ। টানা পঞ্চম মেয়াদে বাফুফে সভাপতি পদে নির্বাচন করার কথা ছিল কাজী সালাউদ্দিনের। তবে ৫ই আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সিদ্ধান্ত বদলান বাফুফের বর্তমান সভাপতি। গত ১৪ই সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে আগামী নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা জানান বাফুফে বস। সালাউদ্দিনের প্রার্থী না হওয়ার সংবাদের  ২৪ ঘন্টার  মধ্যেই ফুটবলের সঙ্গে সর্ম্পক ছিন্ন করে আড়ালে চলে যাওয়া তরফদার রুহুল আমিন আলোতে আসেন। পাঁচ তারকা হোটেলে সংবাদ সম্মেলন ডেকে ঘোষাণা দেন আগামী নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচন করার। তিনি মূলত একজন ব্যবসায়ী। তবে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে গেল ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের নেতাদের ম্যানেজ করে ব্যবসার বিস্তার ঘটান। দেশের তিন সামুদ্রিক বন্দরে একচ্ছত্র আধিপত্য চালিয়ে বৈধ-অবৈধ পথে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিদেশে টাকা পাচার করারও অভিযোগ আছে। তার প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড চট্টগ্রাম বন্দরে ঢুকেছিল কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে নিয়োজিত যন্ত্রপাতি মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে। সেই প্রতিষ্ঠানটিই এখন চট্টগ্রাম ছাড়াও আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানে ব্যবসার বিস্তার ঘটায়। চলতি বছর জুনে তিনটি বন্দরে বড় কাজ পেয়ে যান তরফদার রুহুল আমিন। শেখ হাসিনাকে খুশি করতে জাতীয় শেখ রাসেল শিশুকিশোর পরিষদে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বেশ কয়েক বছর। ছিলেন সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা।

শেখ কামালের নামে চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টও করেছেন রুহুল আমিন। কথায় কথায় ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে মুখে ফেনা তোলা তরফদার রুহল আমিন কিনা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভোল পাল্টে ফেলে চাইছেন ফুটবলের মসনদে বসতে। এতে তাকে সহায়তা করছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একটি অংশ। তবে প্রার্থীতার ঘোষণা দিতে এসে এসব আমলে নিতে চাইছেন না তাবিথ আউয়াল। বলেন, ‘এখনো কেউ আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থী হয়নি। সবাই সবার আাগ্রহের কথা জানাচ্ছেন। আগে তফসিল ঘোষণা হোক, মনোনয়ন কেনার পর বলতে পারবো আমার বিপক্ষে কে প্রার্থী। তখন এ বিষয়ে কথা বলতে পারবো।’ সভাপতি পদে এবারই প্রথম লড়তে যাচ্ছেন তাবিথ। এর আগে ২০১২ ও ২০১৬ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে লড়ে বাফুফের সহ-সভাপতি হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সবশেষ ২০২০ সালের নির্বাচনে হেরে যান এই সংগঠক। টানা চতুর্থবার নির্বাচন করতে যাচ্ছেন তিনি। তাবিথ আউয়াল, বলেন, ‘আমি গত তিনটি নির্বাচন করেছি। এবারও আমি লড়বো। আর সেটা সভাপতি পদে। আমি আশাবাদী জিতবো।’ সভাপতি পদে জিতলে কী করবেন, সেই পরিকল্পনার কথা পরে জানাবেন
তাবিথ।

ফুটবলকে সামনে এগিয়ে নিতে পারবেন, এমন বিশ্বাস নিজের ওপর আছে জানিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থিতা পেশ করে আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে জানাবো। নির্বাচনী ইশতেহারের ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে চাইছি না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমি সভাপতি হলে খেলার মাঠে চমক দেখাবো। ফুটবলকে পরের ধাপে নিতে পারবো আশা করি।’ ঐকমত্যের প্যানেল হবে কি না, এমন প্রশ্নে তাবিথ বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনকে স্বাগত জানাবেন তিনি। এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছে, আরও দুই-একজন সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। তাবিথ আগে দেখতে চান কারা আসেন। তারপর প্যানেল করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবেন। তাবিথের পরিচয় অনেক, ব্যবসায়ী, বিএনপির জাতীয় কমিটিতে আছেন। ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচনে মেয়র পদে লড়াই করেছেন দুইবার। ফুটবল সংগঠক। প্রিমিয়ার থেকে বিদায় নেওয়া ফেনী সকার ক্লাবকে এক সময় পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন, এখন করছেন পেশাদার লীগের দ্বিতীয় স্তরের ক্লাব নোফেল স্পোর্টিং ক্লাবকে। ফিফা দুর্নীতির অভিযোগে শাস্তি দিয়েছে বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদককে। বাফুফের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। তাবিথ বলেন, ‘এখনো প্রচুর ছেলেমেয়ে ফুটবল খেলে। তবে বাফুফের সামর্থ্যে অনেক ঘাটতি আছে। জাতীয় দলের পারফরম্যান্স অত ভালো না এখন। ফলে ব্র্যান্ডিং ভালো নয়। ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ করার আছে।’

mzamin

No comments

Powered by Blogger.