ইতিবাচক ধারায় রপ্তানি আয়

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার কমপ্লিট শাটডাউনে একপ্রকার অচল হয়ে পড়ে দেশ। ওই সময় জারি করা হয় সান্ধ্য আইন। বন্ধ করে দেয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। ব্যাহত হয় রপ্তানি কার্যক্রম, স্থবির হয়ে পড়ে পণ্য জাহাজীকরণ। এরপরেও ইতিবাচক ধারায় ছিল দেশের রপ্তানি আয়। বেড়েছে ২.৯১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এটা উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ‘মেজর ইকোনমিক ইন্ডিকেটর: মান্থলি আপডেট’- শীর্ষক আগস্টের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, জুলাইয়ে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৮২ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের। ২০২৩ সালের একই মাসে পণ্য রপ্তানির অর্থমূল্য ছিল ৩৭১ কোটি ৫৬ লাখ বা ৩.৭১ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে ২.৯১ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে গত জুলাইয়ে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর জুলাইয়ে রপ্তানি বিঘ্নিত হয়েছে স্বল্প সময়ের জন্য। পাশাপাশি গত বছরের তুলনায় আমদানিকৃত কাঁচামালের দামের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পোশাক রপ্তানির চূড়ান্ত মূল্যে পড়ে থাকতে পারে। আবার ভ্যালু অ্যাডেড বা মূল্য সংযোজিত তৈরি পোশাক রপ্তানির ফলে পরিমাণে কম হলেও অর্থমূল্যের প্রবাহ বেশি হয়ে থাকতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, গত বছর জুলাইয়ে ঈদের বন্ধ ছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এ বছরের জুলাইয়ে আগের বছরের একই মাসের চেয়ে উৎপাদন বেশি করা গেছে। বিরূপ পরিস্থিতির প্রভাবে সৃষ্ট সংকটে সার্বিক কার্যক্রম তিন-চারদিনের জন্য বিঘ্নিত হয়েছে। এ ব্যাঘাত বিবেচনায় নিয়ে আমরা গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে অন্তত ১০ শতাংশ বেশি উৎপাদন করতে পেরেছি। এছাড়া ভ্যালু অ্যাডেড পোশাকের উৎপাদনও আগের চেয়ে বেশি। এ ধরনের পণ্যের জন্য আমদানি করা কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবও আছে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে। এ দু’টিই মূলত রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির কারণ হয়ে থাকতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে পোশাক পণ্য। এ খাতের নিটওয়্যার পোশাক রপ্তানির অর্থমূল্য ছিল ১৭২ কোটি ৯১ লাখ ডলার। গত বছর জুলাইয়ে রপ্তানি হয়েছিল ১৬৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের পণ্য। এ হিসাবে চলতি বছরের জুলাইয়ে ৩ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের বা ২.০৫ শতাংশ বেশি নিটওয়্যার পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
তৈরি পোশাক খাতের ওভেন পোশাকের রপ্তানির অর্থমূল্য চলতি বছরের জুলাইয়ে ছিল ১৪৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। গত বছরের একই মাসে রপ্তানি হয় ১৩৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের ওভেন পোশাক। এ হিসাবে ৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের বা ৩.৯৪ শতাংশ বেশি রপ্তানি হয়েছে।
বস্ত্র খাতের হোম টেক্সটাইল ছিল জুলাইয়ে রপ্তানি হওয়া তৃতীয় বৃহত্তম পণ্য। এ খাতের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.২১ শতাংশ। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে হোম টেক্সটাইল রপ্তানির অর্থমূল্য ছিল ৫ কোটি ২৩ লাখ ডলার। চলতি বছরের একই মাসে রপ্তানি হয়েছে ৫ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল।
কৃষিপণ্য রপ্তানিতে চলতি বছরের জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.২৩ শতাংশ। ওই মাসে পণ্যটি রপ্তানি হয়েছে ৮ কোটি ২ লাখ ডলারের। গত বছরের জুলাইয়ে রপ্তানি হয়েছিল ৭ কোটি ২১ লাখ ডলারের পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে রপ্তানিতে নেতিবাচক বা ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এমন পণ্যের মধ্যে আছে পাট ও পাটজাত পণ্য, প্রকৌশল পণ্য ও রাসায়নিক পণ্য। তবে রপ্তানিকারকরা এ পরিসংখ্যানের যথার্থতা নিশ্চিতের বিষয়ে তাগিদ দিয়ে আসছেন বারবার। কারণ বাস্তবতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত তথ্য সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে মনে করেন তারা।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.