কেমন হবে নির্বাচনের দৃশ্যপট?

নির্বাচন নিয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে। সেনাপ্রধান এরইমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। নিউ ইয়র্ক সফররত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি অবশ্য সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ বলেননি। সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পর নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের কথা বলেছেন। নির্বাচনের সময়সীমা  নিয়ে যখন এক ধরনের ধারণা পাওয়া যাচ্ছে তখন আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য দৃশ্যপটগুলোও আলোচনায় এসেছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা কী হবে সেটিই প্রধান প্রশ্ন। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে প্রবল পরাক্রমে দেশ শাসন করা দলটি গেল দুই মাস ধরে একেবারেই নীরব। যদিও সংস্কার ও নির্বাচনে ভূমিকা রাখার কথা বলেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশ ছাড়লেও এখন পর্যন্ত দলটিতে কোনো ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিয়োগ দেয়া হয়নি। সাধারণ সম্পাদক কোথায় রয়েছেন তাও কেউ জানে না। দলটির অন্য শীর্ষ নেতাদেরও একই দশা। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কী পরিবর্তন আসবে? দলটির পলাতক শীর্ষ নেতৃত্ব এ নিয়ে আগ্রহী নয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে। দেড় দশক ধরে গুরুত্ব না পাওয়া নেতারা কোনো উদ্যোগ নেন কি-না সেটিও দেখার বিষয় বলে কেউ কেউ মন্তব্য করছেন। তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে সরকারের সমন্বিত কোনো সিদ্ধান্ত এখনও পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে উপদেষ্টাদের মন্তব্যে একধরনের ভিন্নতা রয়েছে। সরকারের একজন উপদেষ্টা বলেছেন, ‘মতপ্রকাশের নামে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে কি-না সেটা একটা প্রশ্ন। আওয়ামী লীগ ফ্যাসিজমে জড়িত, গণহত্যায় জড়িত। তাদের বিচার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা বলেছি, এ মুহূর্তে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ নেই।’ তবে এ ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

বিএনপি’র পক্ষ থেকে এরইমধ্যে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে দলটি ক্ষমতায় গেলে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করা হবে। একাধিক সূত্র বলছে, যুগপৎ আন্দোলনে যেসব দল ছিল নির্বাচনে বিএনপি সেসব দলকে গুরুত্ব দিবে। সরকার গঠন করলে সেসব দলকেই অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বিএনপি’র সম্ভাব্য জাতীয় সরকারে জামায়াতকে অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা নেই বলে একাধিক সূত্র বলছে। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি’র জোট নেই অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই। যদিও দল দু’টির মধ্যে কখনো কখনো পর্দার আড়ালে একধরনের যোগাযোগ ছিল। তবে ৫ই আগস্টের পর বিএনপি’র সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব বেশ বেড়েছে। দল দু’টির শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যই সমালোচনামূলক বক্তব্য রাখছেন।

বিএনপি’র সঙ্গে ঐক্য হবে না ধরে নিয়েই জামায়াত নিজেদের আগামী দিনের রাজনীতির প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইসলামপন্থি দলগুলোসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জামায়াত আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে অবশ্য খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। ইসলামপন্থি দলগুলোর মধ্যে যেমন জামায়াতকে নিয়ে প্রশ্ন আছে তেমনি এ ধরনের জোটের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দলগঠনে জামায়াতের ভেতরে-বাইরে আগে আলোচনা থাকলেও তা এখন অনেকটাই মিইয়ে গেছে। ক্যাম্পাসগুলোতে শিবির প্রকাশ্য হওয়ার চেষ্টা করছে। এ নিয়ে ছাত্রদলের সঙ্গে শিবিরের দূরত্ব বাড়তে পারে।
ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া নেতারা নতুন কোনো দল করেন কি-না সেটা অবশ্য এখনো স্পষ্ট নয়। সমন্বয়করা বলছেন, এখনই নতুন কোনো দল গঠনের চিন্তা তাদের নেই। তবে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দল গঠনের সম্ভাবনা তারা নাকচ করছেন না। এ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টরা স্বীকার করছেন, রাজনৈতিক দলগঠন করা একটি বড় কর্মযজ্ঞ। তবে এ নিয়ে তাদের তৎপরতার খবর নানা সূত্রে জানা যাচ্ছে।

অনেক কিছুই ঝাঁপসা। তবে রাজনীতির এক ধরনের রূপচিত্র দেখা যাচ্ছে। যেটা ইঙ্গিত দেয় যে, বহুদিনের পুরনো অনেক সমীকরণই পাল্টে যেতে পারে। তবে রাজনীতিতে যেকোনো দৃশ্যপটই যে অভাবনীয়ভাবে বদলে যেতে পারে সেটা তো ৫ই আগস্টই দেখিয়ে গেল। কয়েকঘণ্টা আগেও খুব কম লোকই জানতেন শেখ হাসিনার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.