সাক্ষাৎকার: ছাত্র-যুবকরা মরে যায়নি, আন্দোলনে প্রমাণিত -বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী
তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেকের কানে পানি যায় না। এ যে শিক্ষকদের আন্দোলনের দাবিও যৌক্তিক। এ জিনিসগুলো খুব তলিয়ে দেখা হয় না। রাষ্ট্রের যেভাবে গভীরভাবে তলিয়ে দেখা দরকার সেভাবে দেখা হয় না। সেটাই হচ্ছে অসুবিধা। ছাত্রদের আন্দোলনটা গোড়াতেই মনযোগ দেয়া উচিত ছিল। ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল।
বঙ্গবীর বলেন, আমি ছাত্রলীগ করা মানুষ। আমাদের সময় ছাত্রদের প্রতি দেশের মানুষের যে আস্থা, ভালোবাসা, ভরসা ছিল- এখন তার বিন্দুমাত্রও নেই। ইতিহাস ঘুরে ফিরেই আসে। ষাটের দশকে মোনায়েম খান বলে আইয়ুব খানের একজন প্রিয় মানুষ ছিলেন। মোনায়েম খানের ছাত্র সংগঠন ছিল এনএসএফ। আমাদের বিরুদ্ধে লাঠিসোটা নিয়ে অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছে। পুলিশ আজকের দিনের মতো সাহায্য করেছে। একটা সময় সমস্ত দেশের ছাত্ররা একজোট এক প্রাণ হয়ে গেছে তখন তুলার থেকেও হালকা হয়ে উড়ে গেছে।
শিক্ষার্থীদের প্রধানমন্ত্রীর রাজাকার বলার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা খুবই ভালো কাজ হয়নি। আমি আমার বোনকে বলেছি। কখনো কখনো শোনেন কখনো শোনেন না। উনি যদি পরদিন ক্ষমা চাইতেন যে আমি এভাবে বলিনি। তখন দশ ভাগের একভাগ আন্দোলন হতো না।
পুলিশের গুলিতে নয়, সহিংসতায় ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছেন বলে সরকারের দাবির বিষয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, তারা সহিংসতায় নয়, ঘরের বারান্দায় যে গুলিতে নিহত হয়েছেন। সেখানে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুঁড়ছেন মারা গেছে। মিথ্যা অজুহাত দিয়ে কেউ পার পেতে পারে না। সরকারকে বলবো এখনো সময় আছে সত্য বলার সাহস দেখানো উচিত। যার সত্য বলার সাহস নেই তার কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই। হয়তো সাময়িক কিছু হতে পারে। আন্দোলনকারীদের হাতে ইটপাটকেল, লাঠি, ছুরি থাকতে পারে। কিন্তু তাদের কাছে ছররা গুলি নেই। ন্যায়বিচার নাই বলে এত অশান্তি। তিনি বলেন, ভুল স্বীকার করার মতো শক্তিশালী অস্ত্র দুনিয়াতে আর কিছু নেই। ভুল স্বীকার করলে সাময়িক একটা চাপ হতে পারে। কোনো কোনো সময় মাপ চাওয়ার ফলে দুই-তিন কিংবা দশগুণও শক্তি বৃদ্ধি পায়। সে সময় আমার বোন শেখ হাসিনা হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু তিনি করতে পারতেন এখনো করতে পারেন। কিন্তু ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়ার মতো জঘন্যতম অপরাধ আর হতে পারে না। আমার তো ধারণা ছিল যে ছাত্রলীগও এ আন্দোলনের পক্ষে গিয়ে এ আন্দোলনকে জোরদার করে সফলকাম করবে। এবং সেই আন্দোলনে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দেবে। এখন তো নেতৃত্ব দেয়ার চাইতে বিরুদ্ধে চলে গেছে। আজকে ছাত্রলীগের কোনো সম্মান নেই। আমি কখনো ভাবিনি ছাত্রলীগের সভাপতির কক্ষ তছনছ করা হবে। মানুষের শক্তির কাছে কোনো শক্তির টিকবার ক্ষমতা নেই। এটা আনবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী। তিনি বলেন, গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। আগেও ১৬ কি ২১ বছর বিএনপি ক্ষমতায় ছিল- সবাই বিএনপি হয়ে গেছে। এটা একটা জাতির জন্য শুভ না। বিএনপি, আওয়ামী লীগ কিংবা ১৪ দল দেশ না। ১৮ কোটি মানুষ নিয়ে দেশ।
ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে ডিবিতে আটকে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ৬ সমন্বয়ককে নিরাপত্তার জন্য ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছে। এটা কী কোনো আইনের কথা? নিরাপত্তার প্রয়োজন হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে। ডিবির উপ-কমিশনারের (হারুন-অর-রশিদ) দেখবার কী আছে? এর জন্য ওই পুলিশ কর্মকর্তার জেল হওয়া উচিত। রাষ্ট্র আইন ও সংবিধান অনুযায়ী চললে একজন নাগরিককে আটকিয়ে রাখার সুযোগ নেই। আজ হারুন যেটা করছে, বেনজীর আহমেদ (সাবেক আইজিপি) কী সেটা করেনি ৫-৭ বছর আগে। বেনজীরের যে অবস্থা হয়েছে, আগামী পাঁচ বছর পর কী হারুনের তার থেকে খারাপ অবস্থা হতে পারে না? আমি বলবো, এত বাড়াবাড়ি ভালো না।
কোটার বিষয়ে তিনি বলেন, মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছেন ৭ শতাংশ। ছাত্ররাও ৯৩ শতাংশ চায়নি। পিছিয়ে পড়া বহু মানুষ আছে তাদের জন্য কোটা থাকা উচিত। মুক্তিযোদ্ধাদের পাঁচ শতাংশও সম্মানজনকভাবে দিলে এতেই মুক্তিযোদ্ধারা খুশি। কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলেরা ভিক্ষা চায়নি। এখানে অনেক প্রশ্ন আছে। মেধাহীনদের জন্য কোনো কোটা নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা ভোগাস, মশকারি। আমরা দেখেছি স্বাধীনতার পর থেকে কখনো কোটার থেকে ১৩ শতাংশের ওপরে নেয়া যায়নি। কারণ কোটায় পাশ করার লোক নেই। কোটার সুবিধা এর বেশি নয়। ছাত্রদের আন্দোলন করা উচিত ছিল যে ছাত্রলীগের কোটা বন্ধ করতে হবে। অথচ যারা স্বাধীনতা এনেছেন, রক্ত দিয়েছেন, যাদের সম্মান থাকার কথা- সেই মুক্তিযোদ্ধরাই আজকে কিন্তু বিতর্কিত হয়েছে। অসম্মানিত হচ্ছেন। আজ বঙ্গবন্ধুর গায়ে ঢিল ছুঁড়ছে, শাবল মারছে, লাথি মারছে- এত মনে হয় আমার গায়ে মারছে। মুসলমান হিসেবে কোনো প্রতিমা-মূর্তি পছন্দ করি না। কিন্তু যারা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বানিয়েছেন তারা যদি সেই ম্যুরালের সম্মান রাখতে না পারেন তখন এটা বানিয়ে কী করেছেন। মোটেই ভালো কাজ করেননি। সাধারণ ছাত্রদের বলবো- সরকারি কোটা বন্ধের দাবি করতে হবে। যে যখন সরকার তখন সেই সরকার তার লোককে যোগ্য হোক অযোগ্য হোক নিয়োগ দেয়। কাদের সিদ্দিকী বলেন, পাকিস্তান বৈষম্য না করলে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হতো না, এত রক্ত-জীবন দিতে হতো না। আরও বৈষম্য ছিল ৯৮ শতাংশ আসন পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। সে সময় ভোটের রায় মানা হয়নি সে জন্যই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, এক সময় ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের নেতৃত্ব করতেন। তার নেতৃত্বের প্রশংসা শুনেছি। কিন্তু এখন তিনি সেই প্রশংসার কাজ করেন না। যত অঘটন তার অনেক বেশি দায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলা এবং গুলির নির্দেশ দেয়া। তার গুলির নির্দেশ দেয়ার সুযোগ নেই। যদি দিতে হয় যারা আইনানুগ ক্ষমতাপ্রাপ্ত তারা বলবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশ অসম্ভব। যদি সরকার গুলির নির্দেশ দিলো আবার শোক পালনের মানে কী হয়? এটা সাংঘর্ষিক। হ্যাঁ, যদি সরকার না দিতেন তাহলে ভিন্ন কথা। এ যেমন কারফিউ জারি হয়েছে- সেখানে গুলি হলে সেখানে সরকার করতে পারতেন। সরকারি দলের সরকার হওয়া উচিত না, সরকার দেশের মানুষের হওয়া উচিত। যারা আন্দোলন করছে তাদের কিংবা যারা ফিরাচ্ছে তাদের সবার হওয়া উচিত। এবার দেখা যাচ্ছে সরকার আন্দোলনকারীদের পক্ষে না। আন্দোলনকারীদের প্রতিও যে তাদের দায় দায়িত্ব আছে সেটার পরিচয়ও দিতে পারেনি।
ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে তিনি বলেন, সব সময় সব মানুষের কার্যক্ষমতা এক থাকে না। আমি মুক্তিযুদ্ধে একটা ভয়াবহ অবস্থায় রুখে দাঁড়াতে পেরেছিলাম। আজকেও যে পারবো সেটাতো সত্য নয়। ওবায়দুল কাদের একটা সময় সত্যিই ছাত্রদের উদ্দীপ্ত ও সংগঠিত করেছেন। এখন তার সেই ভাবমূর্তি নেই। আরেকটা বিষয় হচ্ছে তিনি প্রচণ্ড রকম অসুস্থ। কয়েকদিন আগেও বলেছিলাম তাকে ডাক্তারের পরীক্ষা করে দেখা উচিত। তিনি এবার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর তার কথাগুলো বাস্তবের সঙ্গে মিলছে না। মানুষকে টানছে না। আকৃষ্ট করছে না। রাজনৈতিক নেতার কথায় মানুষকে আকৃষ্ট করতে হয়। বন্দুক কামান দিয়ে তিনি সবকিছু দখল করে নেবেন এটা হবে না। জয় করতে হবে কথা ব্যবহারের মাধ্যমে। সেখানে ত্রুটি হচ্ছে। এমনকি আমি একটি লেখায় তাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথাও বলেছি। সাধারণ মানুষ থেকেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ২০-৩০ গুণ বেশি ক্ষুব্ধ ওবায়দুল কাদেরর প্রতি। এটা কী করবেন- যখন কেউ পিছিয়ে আসে বা তাকে পছন্দ না হয় তাহলে তাকে তো সরিয়ে দিতে হবে, বা পিছনে দিতে হবে।
সরকারি স্থাপনায় হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, সেতু ভবনের জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভিডিও দেখলাম। এটা দেখে মনে হয়েছে যে তারা কী আগ থেকেই এটা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিল। ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে ২০-২৫ জন লোক সেটি করেছে। কিন্তু ওই ভবন পাহারা দেয়ার জন্য কম করে ৫০ জন আনসার ছিল, পাহারাদার ছিল। গাড়িগুলোর ড্রাইভার ও সহযোগী ছিল। একটা মানুষও তো বাধা দেয়নি। তাহলে এটা কী? যারা ওখানে আছেন তারা তো রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার কোনো চেষ্টা করেননি। আবার ওটার জন্য আন্দালিব রহমান পার্থকে (বিজিপির চেয়ারম্যান) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ জ্বালাও পোড়াওয়ের সঙ্গে ওর যে চরিত্র আমরা দেখেছি এ কুকাম করার মতো অবস্থা ওর নেই। তাহলে দেশটা কোন ভাবে চলছে।
গণহারে গ্রেপ্তারের বিষয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, বড় কিছু হলে ছোট জিনিস দেখতে নেই। এ রকম একটা বড় ঘটনায় একটা মানুষকেও আর গ্রেপ্তার করা সরকারের জন্য উচিত না। এটার পরিণতি ভয়াবহ হবে। আজকে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হয়তো এ আন্দোলনের সঙ্গেও নেই। কিন্তু গ্রেপ্তারের পর সরকারের বিরুদ্ধে এবং বিরোধীদের পক্ষে যাবে। এটা ক্ষতির কারণ হবে। নিজে চোখে দেখেছি অনেক মা-বাবা তাদের সন্তান নিয়ে রাস্তায় এসেছেন। ১৯৬৯ সালে যখন আইয়ুব খানের পতন হলো তখন আমি জেলে ছিলাম। আমাদের কারও কারও নামে ৮০-৯০টা মামলা ছিল। আইয়ুব খান যখন চলে গেলেন তখন সবকিছু কিন্তু বাতিল হয়ে গেল। এ আন্দোলনের জন্য একজন মানুষকেও আর গ্রেপ্তার করা উচিত না। বিএনপি, জামায়াত, শিবির- আন্দোলনের জন্য তাদেরও গ্রেপ্তার করা উচিত না। যদি দেশে শান্তি, সমৃদ্ধি চান। বলতে পারেন- যারা এসব করেছে তাদের শাস্তি দিতে হবে না? হবে। তবে যখন হাজার মানুষ মিলে কোনো ঘটনা ঘটায় তখন ওই ঘটনায় হাজার মানুষকে আর বিব্রত করা হয় না।
তিনি বলেন, বিরোধী মত প্রকাশ করলেই ট্যাগ দিয়ে দেয়া ভালো না। বাংলাদেশটা শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের বা রাজাকারের না। বাংলাদেশটা বাংলাদেশের মানুষের। নিশ্চয় মুক্তিযোদ্ধাদের আলাদা সম্মান থাকার কথা। কিন্তু বাংলাদেশে রাজাকার বলে কেউ নেই। রাজাকারের মানসিকতা থাকতে পারে। চিন্তা চেতনা ধারণ করতে পারে।
আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনটি অল্প সময়ে গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে গেছে। কিন্তু এখন আন্দোলনটি যারা রিয়েল আন্দোলন করছে তাদের হাতে নেই। সরকার যেমন বলছে বিএনপি-জামায়াত, শিবির এটা করছে। তাদের যদি এত শক্তি থাকতো তাহলে আমাদের আওয়ামী লীগের সরকার থাকার কথা ছিল না। তাদের একটা নেতাকর্মীরও ঘুমানোর কথা ছিল না। এতটা শক্তি বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে নেই। মানুষের মধ্যে একটা বিক্ষোভ-জ্বালা, এ আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়েছে। এখন যদি ছাত্রবন্ধুরা এটা এগিয়ে নিতে চায় তাহলে তারা ফেইল করবে। তাদের সঙ্গে মানুষ একাত্মতা ঘোষণা করেছে। এ সরকারকে যা খুশি করা বা বলা যায় এটা যে ঠিক না এটাকে বুঝানোর জন্য কিন্তু মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর বেশি দূর যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না। যদি সরকারই সমন্বয়কদের ধরে নিয়ে না যেতো, বাচ্চাদের গ্রেপ্তার না করতো।
সমাধানের বিষয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, স্পষ্ট বলতে হয়- রাজনীতির মাধ্যমে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমার বোন প্রথমে ডেকেছেন ব্যবসায়ীদের। তারা কি সরকারকে রাখতে পারবে? তারা নাকি সর্বস্ব দিয়ে এ সরকারকে রাখবে। তাহলে এটা কি ব্যবসায়ীর সরকার। আমরাতো জনগণের সরকার চাই। তাহলে আমরা ভুল করছি। তিনি যত তাড়াতাড়ি সবাইকে ডাকবেন তিনি একটা শ্বাস নেয়ার সুযোগ পাবেন। সবাই তার ডাকে সাড়া দিক আর না দিক। সব কাজে সবাইকে যেতে হয় না, যায়ও না। কিন্তু ডাকতে হয়। দেশ যখন সবার তাহলে সবাইকে নিয়ে সংলাপে যেতে হবে। দেশ আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলের না কেবল। আওয়ামী লীগ ছাড়া ১৪ দল ১৪ ভোটও পাবে না। এখন যে অবস্থা আওয়ামী লীগের নৌকাও পার পাবে না। হাঁটু পানিতে পড়ে যাবে। তাই বাস্তবকে স্বীকার করতে হবে। বঙ্গবন্ধু যত প্রিয় ছিলেন তার জন্য মানুষ নামাজ পড়েছেন। সেই বঙ্গবন্ধুকে আজ গালি দিচ্ছে। এটা কি তার কারণে না আমাদের কর্মকাণ্ডের জন্য দিচ্ছে। আমরা আমাদের দোষে এ রকম একজন মহান নেতাকে দোষী করছি। এটাতো ভালো কাজ না।
জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, জামায়াত নামের একটি দলকে নিষিদ্ধ করবেন। কিন্তু তাদের বিদ্যা, বুদ্ধি, অর্থ, সামর্থ- এগুলোকে কি আটকাতে পারবেন? ওকে নিষিদ্ধ করলেইতো হবে না। জামায়াত দলকে নিষিদ্ধ করবেন, অন্য নামে তারা দল চালাবে। মূল কথা হলো তাদের সামর্থ। সামাজিক ছত্রছায়ায় জামায়াতের যেসব সংগঠন গড়ে উঠেছে সেগুলো যতদিন থাকবে ততদিন জামায়াতের পশম পর্যন্ত আপনি স্পর্শ করতে পারবেন না। জামায়াতের যে হাসপাতালগুলো রয়েছে সেটা বন্ধ হলেতো চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে। ইবনে সিনার যত টাকা আছে তা দিয়ে জামায়াতের সব কর্মীদের দুই চার বছর চালানো যাবে। তাই এ রকম নিষিদ্ধ করলে হবে না। নিষিদ্ধ করার মতো ক্ষমতা থাকতে হবে। সুযোগ, জ্ঞান, বুদ্ধি থাকতে হবে। জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী তাদের এত দূরে আসতে দিলেন কেন।
নিজের জীবনে বঙ্গবন্ধুর প্রভাব নিয়ে বলতে গিয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর কর্মী। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমাদের প্রেম হয়েছে। তাকে পেয়েছি বলেই মুক্তিযোদ্ধা হয়েছি। তা না হলে রাজাকারও হতাম কিনা বলা যায় না। বোধ জাগতো না। বঙ্গবন্ধুকে পেয়েছি রাজনীতিতে এসে। রাজনীতিতে না এলে ব্যক্তিকেন্দ্রিক মানুষ হতাম। হয়তো রিকশা চালাতাম, নয়তো গরুর রাখাল হতাম। আমি জানি নিঃস্ব, রিক্ত মানুষের কষ্ট কোথায়? আমার বড় ভাইকে দেখে আমি রাজনীতিতে এসেছি। তার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয়। বঙ্গবন্ধুকে পেয়ে দেশকে চিনতে পেরেছি। আমার মধ্যে দেশের জন্য কোনো কিছু থেকে থাকলে সেটি বঙ্গবন্ধুর কল্যাণে।
No comments