সেই মেহরীন পেলো নতুন ঠিকানা by মরিয়ম চম্পা

বাথরুমে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে দত্তক পেতে মাস কয়েক আগে শুরু হয় চতুর্মুখী লড়াই। এদের তালিকায় ছিলেন শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিবিদসহ নানা পেশার মানুষ। গত ১৪ই মে দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ঢাকা শিশু হাসপাতালের কমন বাথরুমের ভেতর থেকে ৭-৮ দিন বয়সী নবজাতক উদ্ধার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে তাকে   ১৬ই মে দুপুরে আজিমপুরের ছোটমনি নিবাসের কর্মকর্তাদের কাছে তুলে দেয়া হয়। ছোটমনি নিবাসে তার নাম রাখা হয় মেহরীন। সেখানকার শিশুদের দত্তক নিতে আগ্রহী দম্পতিরা পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। মেহরীনকে পেতে ইতোমধ্যে ঢাকার একটি পারিবারিক আদালতে আগ্রহীরা সমাজসেবা অধিদপ্ততের মহাপরিচালক ও ছোট সোনামনি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক ও পরিচালককে বিবাদী করে গত ২০শে জুন পৃথক পৃথক আবেদন জমা দেন। বর্তমানে আদালতের মাধ্যমে মেহরীনকে ধানমন্ডির একটি নিঃসন্তান দম্পতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শিশু মেহরীনের বর্তমান বয়স প্রায় ৫ মাস। এ বিষয়ে ছোটমনি নিবাসের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট জুবলি বেগম রানু বলেন, শিশু হাসপাতালে কুড়িয়ে পাওয়া শিশু মেহরীন এখন পরিবারে চলে গেছে। গত ২৯শে জুলাই ধানমন্ডির এক নিঃসন্তান দম্পতি তাকে আদালতের মাধ্যমে দত্তক নেন। দত্তক নেয়া দম্পত্তি তাদের পরিচয় গোপন রেখেছেন। কারণ এর সঙ্গে তাদের এবং শিশুটির ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয় জড়িত। ওই দম্পতি আদালতের অর্ডায় নিয়ে আসলে তখন আমরা শিশুটিকে তাদের কাছে দিয়ে দেই। এখানে আমরা সব শিশুকে একই নজরে দেখি। প্রতিবন্ধী, সুস্থ-অসুস্থ, সুন্দর-অসুন্দর সব শিশুই আমাদের কাছে সমান। এবং সমান যত্ন করি। কাজেই শিশু মেহরীন আমাদের কাছে বিশেষ কেউ না। আদালত থেকে সর্বমোট ৮টি সমন পেয়েছিলাম আমরা। উক্ত দম্পত্তি এই ৮ জনের বাহিরের আবেদনকারী। আদালত পরিবারটিকে যোগ্য মনে করেছে বিধায় তাদের কাছে শিশুটির পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব হস্তান্তর করেছে। রুটিন অনুযায়ী ছোটমনি নিবাসের পক্ষ থেকে আমরা শিশু মেহরীনের খোঁজ খবর রাখছি। 

সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ নূরুল কবির বলেন, ছোটমনি নিবাসের কোনো শিশুকে দত্তক পেতে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী উক্ত পরিবারকে নিশ্চয়তা দিতে হয় যে তিনি শিশুটির দায়িত্ব পালনে সক্ষম বা উপযুক্ত। তখন আদালতের রায় যদি অনুকুলে থাকে তাহলে উপতত্ত্বাবধায়ক সেই ব্যবস্থা করে দিবে। এটা হলো নিয়ম। শিশুটিকে ধানমন্ডির একটি ভালো পরিবার দত্তক নিয়েছে। সে এখন ভালো আছে। সমস্ত বিধি বিধান মেনে আদালতের রায় অনুযায়ী তাকে দেয়া হয়েছে। তার মতো আরো অনেক শিশুই আছে যাকে একাধিক পরিবার দত্তক নিতে চায়। কিন্তু বিধি বিধান অনুযায়ী যদি সমস্ত নিয়ম পূরণ করা না হয় তাহলে আমরা দত্তক দেই না। কারণ এটি একটি স্পর্শকাতর ব্যাপার।

তিনি বলেন, দত্তক দেয়ার পরও শিশুটির সঙ্গে ছোটমনির বন্ধনটি যেন একেবারে ছিন্ন না হয় এ বিষয়ে রুটিন মাফিক খোঁজ খবর রাখা হয়।

No comments

Powered by Blogger.