লাল লতিকা হট্টিটি পাখির অদ্ভুত গল্প

লাল লতিকা হট্টিটি; ইংরেজি নাম Red Wattled Lapwing । বৈজ্ঞানিক নাম Vanellus duvaucelli, এটি Perciformes বর্গের পাখি। বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার জলাশয়ের উপকূলভাগের একদল ছোট আকারের পাখি।

এক সময় বাংলাদেশের জলাশয়ের পাশে লাল লতিকা হট্টিটির অবাধ বিচরণ আর খাবার খুঁজে বেড়ানোর দৃশ্য ছিল অতি পরিচিত। বিভিন্ন প্রতিকূলতায় সেই দৃশ্য এখন আর সহজে নজরে পড়ে না। তবে পাখিটি একেবারে বিলীন হয়ে যায়নি। হারিয়ে যায়নি মুগ্ধতা ছড়ানো সেই বিচরণ-দৃশ্যও।

হট্টিটি অত্যন্ত চালাক পাখি। লাল লতিকা, ধূসর আর সাদা রঙের পালক এবং হলুদ রঙের লম্বা পায়ের পাখিগুলো দেখতেও খুব সুন্দর। পাখিটির দেহের তুলনায় পা দুটো অত্যধিক লম্বা। পায়ের আঙুলের বিশেষ গড়নের কারণে ওরা গাছের ডালে বসতে পারে না। ডাকে ‘হট-টি-টি হট-টি-টি’ স্বরে। ওরা বাসা বাঁধা ও ডিম দেওয়ার সময় এক রকম, আনন্দে এক রকম, বাচ্চাদের দিকনির্দেশনা দিতে এক রকম এবং সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে ভিন্ন রকম শব্দে ডাকে। অন্য কোনো পাখির ক্ষেত্রে এমনটা একেবারেই বিরল।

পাখিটি বাসা বাঁধে খোলা মাঠ, চষা ক্ষেত, ছোট ঘাস বা বিভিন্ন রকম ছোট উদ্ভিদ-গুল্মের ওপর। নিজের বাসা তৈরিতে এক সপ্তাহ সময় নেয় এই পাখিটি। ছোট মাটির ঢেলা, শামুকের খোল, ইটের টুকরো, পুরনো দালানের পলেস্তারার টুকরো, শুকনো সুপারি, মাটির হাঁড়ি-কলসির চাড়া ইত্যাদি দিয়ে তৈরি বাসাটি হয় বেশ আগোছালো।

খাদ্যতালিকায় রয়েছে কীটপতঙ্গ, কৃমিকীট ও অন্যান্য অমেরুদণ্ডী ক্ষুদ্র প্রাণী। বীজ ও ছত্রাক, ব্যাঙ ও ব্যাঙাচিও খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

হট্টিটির লম্বা পা নিয়ে একটি জনপ্রিয় গল্প আছে, সৃষ্টির শুরুতে হট্টিটি পাখির গর্ব ছিল যে সে স্বর্গ, আকাশ আর পৃথিবীর ভার বহন করতে পারে। আর তা অন্য পাখিদের কাছে সে সব সময় বলে বেড়াত। এতে পাখিরা বিরক্ত হয়ে একদিন সবাই মিলে বিধাতার কাছে নালিশ করল। নালিশ শুনে বিধাতা হট্টিটি পাখিকে অভিশাপ দিলেন, হট্টিটিকে পায়ের ওপর আকাশের ভার বহন করতে হবে।

এ জন্যই হট্টিটির দেহের তুলনায় পা বেশি লম্বা। আর মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়ার ভয়ে পাখিটি পা দুটি আকাশপানে তুলে শয়ন করে। বাস্তবে কখনো হট্টিটি পাখিকে আকাশের দিকে পা উঁচু করে থাকতে দেখা যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.