৩৭০ এর পর ৩৭১? বিশেষ সুরক্ষা হারানোর আশঙ্কা ভারতের উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলোর by অরুনাভ সৈকিয়া

ভারত সরকার দেশের সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করেছে, যেখানে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা এবং স্বায়ত্বশাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছিল। সরকারের এ সিদ্ধান্তের পর দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতেও এখন জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে।

৩৭১ অনুচ্ছেদের বেশ কিছু অংশের অধীনে এখানকার রাজ্যগুলোর জন্য বিশেষ সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। ৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণার পর এখন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে তাদের বিশেষ মর্যাদাও হয়তো বাতিল করা হতে পারে।

মিজোরামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লাল থানহাওলা এক টুইটে জম্মু ও কাশ্মীরের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের মানুষের জন্য ‘রেড অ্যালার্ট’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

বিশেষ সুবিধা বাতিলের বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হলো নাগাল্যান্ড। সেখানে এতটাই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে যে, ৬ আগস্ট রাজ্যের নতুন গভর্নর আরএন রবি এক বিবৃতি ইস্যু করে জানিয়েছেন যে, উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, নাগাল্যান্ডের জন্য যে ৩৭১এ অনুচ্ছেদ রয়েছে সংবিধানে, সেটা একটা ‘পবিত্র প্রতিশ্রুতি’।

উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিশেষ ব্যবস্থা

৩৭১ অনুচ্ছেদের অধীনে যে সব ব্যবস্থা রয়েছে, তার অধিকাংশই উত্তর পূর্বাঞ্চলে রাজ্যগুলোর ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠি ও তাদের সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকৃত সরকার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, যেখানে কিছুটা প্রশাসনিক স্বায়ত্ত্বশাসন রয়েছে। বিবাদ মীমাংসার ক্ষেত্রেও সেখানে স্থানীয় প্রথাগত আইন রয়েছে। এই সব আইনে রাজ্যের বহিরাগতদের কাছে জমি হস্তান্তরেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এগুলো মূলত মিজোরাম, নাগাল্যান্ডের পুরোটা এবং আসাম, মনিপুর ও মেঘালয়ের একাংশের জন্য প্রযোজ্য।

সংবিধান অনুযায়ী সব রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা এক রকম নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নাগাল্যান্ডের জন্য যে ৩৭১এ অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য, সেখান্য রাজ্যকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসন দেয়া হয়েছে। ভারতীয় পার্লামেন্টের ধর্মীয় ও সামাজিক আচার বিষয়ক কোন আইনই এই রাজ্যের জন্য প্রযোজ্য হবে না, যদি না সেটা রাজ্যের আইনসভায় অনুমোদিত হয়। অন্যদিকে, মনিপুরের জন্য যে ৩৭১সি অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য, সেটা শুধুমাত্র পাহাড়ি এলাকার জন্য এবং সেখানে পাহাড়ি জেলা কাউন্সিলকে অনেক কম ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

উদ্বিগ্ন নাগাল্যান্ড

নাগা জাতীয়তাবাদী গ্রুপগুলো এই মুহূর্তে আরও স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আলোচনা করছে। বহু দশক ধরে স্বাধীন নাগা রাষ্ট্রের জন্য সংগ্রামের পর তারা শান্তি চুক্তিকে অংশ নেয় এবং অস্ত্রবিরতিতে স্বাক্ষর করে। রবি এই আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছেন এবং রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিত্বও করেছেন।

নাগা স্টুডেন্টস ফেডারেশানের নিনোতো আওমি বলেন, “প্রত্যেক নাগাই এখন এইসব নিয়ে কথা বলছে। আমরা নাগাদের একটা অনন্য রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে এবং এখন আলোচনা চলছে কারণ আমরা ৩৭১এ অনুচ্ছেদের চেয়েও ভালো কিছু চাই। ভারত সরকার যদি আলোচনা চলাকালে ৩৭১এ অনুচ্ছেদ মুছে ফেলতে চায়, তাহলে তাদের দিক থেকে এটা খুবই অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত হবে”।

মানুষের আতঙ্ক বাড়ার কারণ হলো পার্লামেন্টে ভারতীয় জনতা পার্টির বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা। নাগাল্যান্ডের উপজাতীয় সংগঠনগুলোর সবচেয়ে বড় মোর্চা নাগা হোহো’র প্রেসিডেন্ট পি ছুবা ওজুকুম বলেন, “তাদের যে পরিমাণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তাতে তারা যা খুশি করতে পারে। সংখ্যালঘুদের নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না”।

ওজুকুম সতর্ক করে দিয়ে বলেন, নাগাল্যান্ড সংশ্লিষ্ট ৩৭১ এ অনুচ্ছেদ বাতিলের চেষ্টা করা হলে সেটা ‘সহিংসতা সৃষ্টি করবে’। “এটা শুধু নাগা জনগণের জন্যই খারাপ হবে না, ভারত সরকারের জন্যও সেটা হবে অশুভ”।

কাশ্মীর থেকে ‘সম্পূর্ণ আলাদা’

অন্যান্য রাজ্যে অবশ্য নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো এখনও উদ্বিগ্ন নন। লাল ঠানহাওলার টুইটের পরও মিজোরামের সবচেয়ে প্রভাবশালী বেসরকারী সংগঠন ইয়াং মিজো অ্যাসোসিয়েশান বলেছে যে, এখানকার পরিস্থিতি কাশ্মীর থেকে ‘সম্পূর্ণ আলাদা’।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লালমাচ্ছুনা বলেছেন, “কাশ্মীরে যেটা হয়েছে, সেটার কারণ সন্ত্রাসের মতো নিরাপত্তা ইস্যু। মিজোরামে এ ধরনের কোন ইস্যু নেই”।

মিজোরামের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে ৩৭১ জি অনুচ্ছেদের মাধ্যমে। স্থানীয় সরকারের অনুমোদন ছাড়া এখানে কেন্দ্রীয় সরকারের ধর্ম ও সামাজিক আচার বিষয়ক কোন আইন প্রযোজ্য হবে না। নাগাল্যান্ডের মতো, এখানে স্থানীয় প্রথাগত আইন অনুযায়ী বিবাদ মীমাংসা হবে এবং স্থানীয় আইনের অধীনেই জমি ও অন্যান্য সম্পদ হস্তান্তর হয়ে থাকে।

No comments

Powered by Blogger.