আন্ডারগ্রাউন্ড ডন দাউদ ইব্রাহিম পাকিস্তানে!

আন্ডারগ্রাউন্ডের আন্তর্জাতিক ডন দাউদ ইব্রাহিম। ১৯৯৩ সালে ভারতের মুম্বইতে সিরিজ বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত এই সন্ত্রাসী কোথায়, কি করছেন তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক কৌতুহল। এমনই এক সময়ে ভারতের অনলাইন জি নিউজ এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট হিসেবে জানাচ্ছে, দাউদ ইব্রাহিম এখন পাকিস্তানের করাচিতে আত্মগোপন করে আছেন। যদিও বার বার ৫১ বছর বয়সী দাউদ ইব্রাহিমের পাকিস্তানে থাকার কথা অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। কিন্তু জি নিউজ তাকে খুঁজে পেয়েছে বলে বলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা তার নতুন ও এক্সক্লুসিভ ছবি প্রকাশ করেছে।
রিপোর্টে বলা হচ্ছে, গোয়েন্দা বিষয়ক এজেন্সিগুলো এসব ছবি পেয়েছে। তিনি যখন তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগী জাবির মতিওয়ালার সঙ্গে সাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন, তখনই এসব ছবি ধারণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ডি-কোম্পানি হিসেবে পরিচিত আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের প্রধানদের অন্যতম জাবির মতিওয়ালা।
ওই ছবিতে ক্লিন সেভ করা দাউদ ইব্রাহিমকে দেখা যায় মতিওয়ালার সঙ্গে আলাপরত অবস্থায়।
দাউদ ইব্রাহিম গত ২৫টি বছর আত্মগোপন করে আছেন। এ সময়ে বলা হয়, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। হাঁটুতে মারাত্মক অসুস্থতায় ভুগছেন তিনি। কিন্তু নতুন ছবিতে তাকে বেশ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী দেখা যায়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, দাউদ ইব্রাহিম এখন বসবাস করেন করাচিতে একটি বাড়িতে। তার পাশেই কোনো একটি বাসায় বসবাস করেন মতিওয়ালা। দাউদের ইব্রাহিমের পরিবার অর্থাৎ স্ত্রী মেহজাবিন ও ছেলে মঈন নওয়াজের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন মতিওয়ালা।
জাবির মতিওয়ালাকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই অর্থ পাচার, চাঁদাবাজি ও হেরোইনের মতো অবৈধ বস্তু যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করেছে।  এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অনুরোধে বৃটেনের স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড ২০১৮ সালের ১৭ই আগস্ট গ্রেপ্তার করে তাকে। তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিতে বৃটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এফবিআই, যাতে তার বিচার করা যায়। এফবিআইয়ের মতে, পাকিস্তানে দাউদ ইব্রাহিমের উপস্থিতির বিষয় প্রায় ফাঁস করে দিয়েছেন মতিওয়ালা। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সূত্রমতে, যেহেতু দাউদ ইব্রাহিমের খুব ঘনিষ্ঠ মতিওয়ালা, তাই ডি-কোম্পানির ডন সম্পর্কে তার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে বলে মনে করা হয়।
এমন খবরে ডি-কোম্পানির কর্মকা- সম্পর্কে এফবিআইয়ের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার জন্য যোগাযোগের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় এজেন্সিগুলো। ভারতীয় এজেন্সির মতে, ডি-কোম্পানি ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মধ্যে সম্পর্ক বা যোগাযোগ আছে। এক্ষেত্রে মতিওয়ালা হলেন যোগাযোগের মূলে। এ ছাড়া পাকিস্তানের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সঙ্গেও মতিওয়ালার যোগসূত্র আছে। এর আগে তিনি ঘন ঘন পাকিস্তান সফর করতেন। এফবিআইয়ের তদন্ত অনুযায়ী, ১০ বছরের বৃটিশ ভিসা আছে মতিওয়ালার। এর মেয়াদ শেষ হবে ২০২৮ সালে। কিন্তু এরই মধ্যে পরিবারসহ তিনি অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডায় নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন গত কয়েক মাস ধরে। তিনি দুবাইয়ের একটি কোম্পানিতে জমা করেছেন ২০ লাখ ডলারও।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, লন্ডনে পাকিস্তানি হাই কমিশন এরই মধ্যে মতিওয়ালার পক্ষ অবলম্বন করতে এগিয়ে এসেছে। পাকিস্তানি হাই কমিশন বৃটেনের ওয়েস্টমিনস্টার কোর্টের বিচারকের কাছে চিঠি লিখেছে। তাতে বলা হয়েছে, মতিওয়ালা একজন সম্মানিত ব্যবসায়ী। ডি-কোম্পানির সঙ্গে তার কোনো যোগসূত্র নেই। সরকারি একটি সূত্র জি নিউজকে বলেছেন, মতিওয়ালাকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে পাকিস্তান ভয় পাচ্ছে এ জন্য যে, তাতে দাউদ ইব্রাহিম কোথায় আছেন তা প্রকাশ হয়ে পড়বে বিশ্ববাসীর সামনে। এফবিআইয়ের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে মতিওয়ালা শুধু মাদক পাচার করেন এমন না। একই সঙ্গে তিনি কালো টাকাকে সাদা করার সঙ্গেও যুক্ত। তাকে ফাঁদে ফেলার জন্য এফবিআই তার সঙ্গে হেরোইন ব্যবসার একটি চুক্তি করে। তা ছাড়া অর্থ পাচার বিষয়েও তার কাছ থেকে তথ্য চেয়েছে এফবিআই। আদালতে মার্কিন সরকারের এক আইনজীবী বলেছেন, মতিওয়ালা বহুবার পাকিস্তানে গিয়েছেন এবং সাক্ষাত করেছেন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে।

No comments

Powered by Blogger.