‘বিএনপির ভবিষ্যৎ নিয়ে নিরাশ হওয়ার মতো কিছু দেখছি না’: ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী by মাধবী চৌধুরী

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগের কূটকৌশল ও প্রতিবেশী একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রচ্ছন্ন ভুমিকার কারণেই জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে। তিনি বলেন, আগের রাতে ভোট চুরির কাজটি সেরে ফেলা এই সরকারের উদ্ভাবন, এটা কেউ বোঝেনি। তাই বলে আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবে, সেটাও মনে হয় না। আর সে কারণেই বিএনপির ভবিষ্যৎ নিয়ে নিরাশ হওয়ার মতো কিছু দেখছি না।
সাউথ এশিয়ান মনিটরকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে  ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এসব কথা বলেন বাংলাদেশে সুধী সমাজের প্রতিনিধি বলে পরিচিত এই মুক্তিযোদ্ধ। যিনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
সুধী সমাজের প্রতিনিধি হিসেবেই পরিচিতি থাকলেও হঠাৎ করে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট গঠনে মনোযোগী হলেন কেনো?
রাজনীতি নিয়ে সব সময়ই আমি চিন্তা করি। কারণ আমি মনে করি, রাজনীতিই দেশের পরিবর্তন আনতে পারে। আমলারা হলো সুখের পায়রা। তাছাড়া আমলারা অনেক সময় মিসগাইড করে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের এখন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড না থাকায় রাজনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগ সবকিছু দলীয়করণ করে ফেলছে। মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান জয় বাংলাকেও তারা দলীয়করণ করেছে। শেখ সাহেবের জন্ম শতবার্ষিকী পালনে আওয়ামী লীগের দলীয় উদ্যোগও শুভ কাজ নয়। কারণ এর মধ্যে দিয়ে শেখ মুজিবকে তারা কেবল আওয়ামী লীগের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলছে। আমি এসব নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি। হয়তো এর সূত্র ধরেই কিছুটা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি।
কিন্তু বিভক্ত এই সমাজে কীভাবে আপনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সার্বজনিন করবেন?
এটা সম্ভব। তবে আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে হবে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গী একরোখা। যেমন দুটি ঘটনার কথা বলবো। দীর্ঘদিন পরে “আমি সিরাজুল আলম খান’ নামে সিরাজুল আলম খান একটা বই লিখেছেন। এখন তার ওই বইতে লেখা ঘটনার সঙ্গে দ্বিমত থাকতেই পারে। কিন্তু তাই বলে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে মাওলা ব্রাদার্সকে ভয় দেখিয়ে বইটি প্রত্যাহার করা যুক্তিসঙ্গত হয়নি। এতে আওয়ামী লীগের লাভ হয়নি। কারণ এখন হয়তো তারা ভয় দেখিয়ে অনেককিছু ঠেকিয়ে রাখতে পারবে। কিন্তু ইতিহাসের গতিপথ সব সময় তারা আটকাতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, একে খন্দকার সাহের তার বইতে লিখেছেন যে তিনি শুনছেন শেখ সাহের তার বক্তৃতায় জয় বাংলার পরে জয় পাকিস্তান বলেছেন। তো বলছে বলছে। উনি সঠিক বলতে পারেন, ভুলও বলতে পারেন। কিন্তু এটার কারণে কী শেখ সাহেব ছোট হয়েছেন। জয় পাকিস্থান; তো উনি কী সারা জীবন পাকিস্থান জিন্দাবাদ বলে নাই? দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধু বহুবার পাকিস্থান জিন্দাবাদ বলেছেন। তো আওয়ামী লীগের এই অসহিষ্ণুতা জনগণ পছন্দ করছে না। সে কারণেই আমি মনে করলাম সাবাইকে নিয়ে একটি প্লাটফর্ম করা দরকার। হঠাৎ নয়, দু’বছর চেষ্টার পর জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট হলো। বিএনপিকেও আনলাম।
তো বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারাকে আনতে পারলেন না কেনো?
বি. চৌধুরী ছিলো। কিন্তু এখানেও অসহিষ্ণুতা। তার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। ড. কামাল হোসেনের বাড়িতে তার এ্যাপয়েনমেন্ট ছিলো। তিনি বাড়িতে না থেকে বি. চৌধুরীকে অফিসে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। আমিও অফিসে চলে গিয়েছিলাম।
কিন্তু এতে রাজনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘিত হলো না?
হ্যা তা হলো। কিন্তু সমস্যা তো আছেই।
বি. চৌধুরী ঐক্য ফ্রন্টে থাকলে আরও ভালো হতো না?
খুবই ভালো হতো। আমি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের সমস্যা আছে। সমস্যাতো কেবল এক তারেক জিয়া নয়। রাজনীতির উত্তারাধিকারী অনেকেরই সমস্যা আছে। মাহী বি. চৌধুরী ঐক্য ফ্রন্টের আসার বিষয়ে বাধার সৃষ্টি করেছে। বিএনপির সঙ্গে সে থাকবে না এটি তার এজেন্ডা ছিলো। ওর কারণেই ওর বাবা ঐক্য ফ্রন্টের থাকতে পারেননি। আপনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন, আপনাকে অপমান করলো – এসব কথা বলে সে তার বাবাকে উস্কানী দিয়েছে।
কী এজেন্ডা থাকতে পারে মাহীর?
মাহী এবং এই জাতির অনেকেই অহমিকা করে নিজের এবং এই জাতির ক্ষতি করেছে। ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে কি না জানি না। তবে সরকারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে বলে শুনেছি। বি. চৌধুরী ও ড. কামালের মধ্যে জোরা না লাগাতে পারা আমার ব্যর্থতা। প্রথম দিকে কামাল হোসেন প্রায় বাদ পড়ে গিয়েছিলো। পরে কামাল হোসেন এলেও মাহী বি. চৌধুরীর বাধায় পণ্ড হলো। সে ১৫০ আসন দাবি করে বসলো।
পরে কী হলো?
পরে বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে রাজি করালাম। কিন্তু বিএনপি আমাদের সঙ্গে একটি জায়গায় চালাকি করলো। ড. কামাল হোসেনের একটি শর্ত ছিলো যে জামায়াতকে বাদ দিতে হবে। কিন্তু বিএনপি এক্ষেত্রে ২০ দলকে না এনে একাই ঐক্য ফ্রন্টকে আসে। জামায়াতকে সে পাবলিকলি ঘোষণা দিয়ে বাদ দেয়নি। নির্বাচনের সময় তাদের ২২টি আসনও দেওয়া হলো।
ড. কামাল হোসেনকে বিএনপি প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিলো । এ ঘটনা কি আপনি জানেন?
প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি হতে চাননি। খালেদা জিয়া চেয়েছেন যে তার নেতৃত্বেই থাকুক। যেহেতু অন্য কেউ নেই। কিন্তু কামাল হোসেন বলেছেন যে আগে নির্বাচনে জয়লাভ করি, তারপরে সবকিছু হবে।
কিন্তু নির্বাচন করে এমপি না হলে তিনি পরে কীভাবে প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন?
আরে; নির্বাচনে জয়লাভ করলে একটি আসন তাকে ছেড়ে দিয়ে উপ-নির্বাচন করা যেতো না?
উপ-নির্বাচনে আসন ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়তো ছিলো স্বয়ং খালেদা জিয়ার…..
খালেদা জিয়ার নামে তো মামলা মোকাদ্দমা আছে। সেগুলো নিষ্পত্তি হতে সময় লাগতো। তাছাড়া খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলে ড. কামাল রাষ্ট্রপতি হয়ে যেতে পারতেন।
কিন্তু ড. কামাল নির্বাচন না করায় জোটের মধ্যে নেতৃত্বের সংকট তো দৃশ্যমান হলো…
এখানে একটি সমস্যা বিএনপি নিজেই তৈরী করেছে। তারা ঐক্য ফ্রণ্টের সঙ্গে সম্মলিতভাবে বৈঠক এবং দরকষাকিষি না করে নাগরিক ঐক্যৈর সঙ্গে নোগেসিয়েট করলো। পরে অন্য দলগুলোর সঙ্গে করেছে। কিন্তু কথা ছিলো বিএনপি জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের দলগুলোকে ৬০টি আসন ছেড়ে দেবে। আমরা ঠিক করবো কাকে কোথায় দেবো। আসলে দেশব্যাপী নির্বাচনী হাওয়া তখন ছিলো ঐক্য ফ্রন্টের পক্ষে। কিন্তু সরকারের চালাকি আমরা বুঝতে পারিনি।
অবশ্য গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে ড. কামাল দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব তিনি পাননি….
এটা সত্যি কথা হতে পারে। কারণ এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হলে আমি জানি না কেনো? আমি তো প্রধান নোগেসিয়েটর। আমাকে বিএনপির কনফিডেন্সে নেওয়া উচিৎ ছিলো। আমার সেখানে কোনো স্বার্থ ছিলো না।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে একটি দাবিও আদায় করা গেলো না কেনো?
প্রধানমন্ত্রী যখন বললো যে ধরপাড়ক আর করা হবে না সেটিতে বিএনপির শক্ত অবস্থান নেওয়া উচিৎ ছিলো। ওই পরিস্থিতিতে বলা যেতো যে ধরপাকড় বন্ধ না হলে নির্বাচন করবো না। প্রধানমন্ত্রী তুমি কথা রাখছো না এরকম অবস্থান নেওয়া দরকার ছিলো। কিন্তু বিএনপি তখন আসন ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। একটা বড় জনসভা পর্যন্ত তারা করেনি। লড়াকু অবস্থানে বিএনপি ছিলো না। উপরন্তু আসন বেচা-কেনা নিয়ে বাজারে নানান কথা ছড়িয়েছে।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সংলাপে উঠছে?
হ্যা উঠেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বারবারই বলেছেন এটি আইনগত বিষয়। আমি তাকে বার বার বলেছি খালেদা জিয়াকে আপনি জামিনে মুক্তি দেন। অথচ বিএনপি বার বারই বলছে নি:শর্ত মুক্তি।
তার মানে আপনারা কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেননি?
সময় কম থাকার কারণে সবাই অস্থির হয়ে পড়েছিলো। তাছাড়া জনমত তখন এমন পর্যায়ে যে সবাই মনে করতে লাগলো আমরা উড়ে যাচ্ছি। আসন ভাগাভাগি নিয়ে সময় বেশি নষ্ট হয়েছে। জয়ের আশায় আমরা তখন অনেকটাই পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার এই কম সময়ের ফাঁদে ফেলেছে আমাদের চানক্য বুদ্ধি দিয়ে। সরকারের এই চানক্য চাল আমরা বুঝতে পারিনি। নির্বাচন যে সরকার আগের রাতেই শেষ করে দেবে এটি আমরা কল্পনাও করিনি। আমাদের ধারণা ছিলো ভোট কেন্দ্রে তারা ভোট চুরি করবে। ভোট কেন্দ্র দখল করবে। এটা আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঠেকিয়ে দেবো এটা ছিলো আমাদের কৌশল। কিন্তু কাজ যে রাতের বেলায় সেরে ফেলবে এটি আমরা ভাবিনি। এটা আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা। শুনেছি ভোট দখলে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য সরকার এক হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। অথচ নির্বাচনের পর আমরা একটা হরতালও ডাকলাম না। নির্বাচনের পর ট্রাইব্যুনালে মামলাও করা হলো না। ড. খন্দকার মোশাররফ ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মতো বুদ্ধিমান লোকেরা বললো মামলা করে কী হবে। সবতো সরকারের দখলে। কিন্তু মামলা হলে সবকিছু কোর্টে যেতো। ভোটের অনিয়মের কিছু তথ্য জনসমুখে আসতো।
সবকিছু সরকারের দখলে একথা বলার তো যুক্তি আছে…
তাহলে খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে বিএনপি কোর্টে না গেলেই পারে। কারণ ওটাওতো দখলে।
প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সংলাপে ২০ দলীয় জোটকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা কি ঠিক হয়েছে?
বিএনপি তাদের না আনলে আমরা কী করতে পারি। আমি কর্নেল অলি, মেজর জে. (অব.) ইবরাহিম ও আন্দালিব রহমান পার্থকে আনতে বলেছি। তারা আনেনি।
সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাই, একটি দলকে এগিয়ে নেওয়া বা ক্ষমতায় আনার মতো রাজনৈতিক মেধা ও প্রজ্ঞা কি সত্যিকার অর্থে ড. কামাল হোসেনের রয়েছে?
আমি মনে করি আছে। তবে তাকে সাপোর্ট দিতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্বাসের জায়গায় বিএনপি ও ড. কামালের মধ্যে দূরত্ব অনেক। ড. কামাল বঙ্গবন্ধুকে মেনে চলেন যা বিএনপি স্বীকার করে না।
আমার মতে, এটি অনেক ছোট ইস্যু। আজকে শেখ হাসিনাকে মোকাবেলা তথা রাজনৈতিক পরিবির্তনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই কাজটি করতে হবে। রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা এখন পরিহার করতে হবে।
আগামী নির্বাচন পর্যন্ত ঐক্য ফ্রন্ট টিকে থাকবে?
বলতে পারি না। আগামী নির্বাচন অনেক দূরে।
এমপিদের সংসদে যাওয়ার ঘটনকে কেন্দ্র করে জটিলতা তৈরী হয়েছে…
সেটাতো কামাল হোসেনের কারণে হয়নি। বিএনপির ছয়জন না গেলে সমস্যা তৈরী হতো না। আমার মতে, তারেক জিয়া সব কাজ ভুল করলেও সংসদ যাওয়ার এই কাজটি সঠিক করেছে। রুমিন ফারহানা একাই সংসদ নাড়িয়ে দিয়েছে।
কিন্তু সংসদে যোগদানের ঘটনায় তো বিগত নির্বাচনকে সমর্থনযোগ্য করে তোলা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন..
সমর্থনযোগ্য তো আছেই। মির্জা ফখরুল যে চিকিৎসার জন্য বাইরে যান সেটা কী এই সরকারের ইমিগ্রেশন হয়ে যেতে হয় না? বিএনপির কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য করলে এই অবৈধ সরকারের সিলছাপ্পর লাগে না?
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ড. কামালের গ্রহণযোগ্যতা বা নেটওয়ার্ক রয়েছে বলেই বিএনপি তার ওপরে ভর করেছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এগুলো কাজে লাগেনি কেনো?
আমরা তার ইমেজকে ব্যবহার করতে পারিনি। দ্বিতীয়ত আমরা তেমনভাবে বসতে পারিনি। আমাদের মধ্যে ঐক্যেরও প্রচণ্ড অভাব ছিলো। পরষ্পরের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি ছিলো। জামায়াতকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া ঠিক হয়নি।
বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে ড. কামাল ধাপ্পাবাজি করেছেন এমন আলোচনাও আছে….
এটা একদম ভুল কথা। বরং ড. কামাল আসায় বরং বিএনপির স্পেস তৈরী হয়েছে। তার ব্যর্থতা আছে। তবে এ ধরনের ব্লেইম দেওয়া ঠিক হবে না। বিএনপি ড. কামাল হোসেনের কাধে ভর করে ক্ষমতায় এসেছিলো।
কিন্তু বিএনপি মানে তাদের কাধেঁর ওপর ভর করে ড. কামাল প্রধানমন্ত্রী হতে আগ্রহী ছিলেন…
এটা একদম বাজে কথা। ড. কামালের ব্যর্থতা থাকতে পারে। কিন্তু তার লোভ নেই। তো সেরকম ভাবলে বিএনপি একলা চললেই পারে। সেটাও একটা কৌশল। বিএনপিতে স্বচ্ছতা না এলে এটা খুব দুর্ভাগ্য হবে। জাতির জন্য আরও দুর্ভাগ্য হবে এই সরকার আরও পাচঁ বছর ক্ষমতায় থাকলে।
স্বচ্ছতা বলতে কী বোঝাতে চাইছেন?
তাদের চিন্তার স্বচ্ছতা মানে হলো; প্রথমত, জনগণের পক্ষ হয়ে তাদের মাঠে নামতে হবে। দ্বিতীয়ত, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনও থাকবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য তাদের মাঠে নামতে হবে।
সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাই: জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট গঠন করে বিএনপির অর্জন কী?
বিএনপি এক কোনাতে পড়ে ছিলো। ফ্রন্ট করায় সেখান থেকে তারা বের হয়ে আসতে পেরেছে। রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা থেকে তারা মাঠে নামতে পেরেছে। রাজনৈতিক স্পেস পেয়েছে। তাছাড়া জনগণের কাছে একটি বার্তা পৌছানো গেছে। তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন বিএনপি- জামায়াত ক্ষমতায় এলে তিন লাখ লোক মেরে ফেলবে। এটা ছিলো এক ধরনের ভীতি। কিন্তু ঐক্য ফ্রন্ট থাকায় জনগণের মধ্যে ভারসাম্যের বার্তা গেছে।
নির্বাচনে ঐক্য ফ্রন্টের পরাজয়ের কারণ কি?
ফ্রন্টের পরাজয় হয়েছে সরকারের চানক্য বুদ্ধি ও কূটকৌশলের কারণে। চানক্য কূটকৌশল এবং ভারতীয় ‘র’সহ দেশি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার প্রচ্ছন্ন ভুমিকা ছিলো।
দেখা যাচ্ছে যে, নির্বাচনে পরাজয়সহ সার্বিক পরিস্থিতির জন্য আপনি বিএনপিকেই বেশি দায়ী করছেন। কিন্তু আপনারাতো ঐক্য ফ্রন্টে ছিলেন…
আমাদের দোষ নেই তাতো বলিনি। কিন্তু এটিতো মানতে হবে যে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে সব হয়েছে। আর যুদ্ধের নিয়ম হলো যারা কমান্ডে থাকে দোষ তাদের বেশি হয়। সব দোষ বিএনপির এই জন্যে যে তারাই বড় পার্টি। তাদের দোষ না হলে আর দায়ী করা যায় সরকারকে। কারণ তারাও বড় পার্টি। ঐক্য ফ্রন্টের বাকিরা ছোট পার্টি এবং তাদেরকে সহায়ক শক্তি বলা যায়। তাদের যদি এতো শক্তি থাকতো তাহলে তো তারা নিজেরাই ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতো। বিএনপির সঙ্গে গাটছড়া বাধার প্রয়োজন হতো না।
কিন্তু একথা তো ঠিক যে, ড. কামাল হোসেনকে প্রধান নেতা মানাই হয়েছিলে কৌশলগত সুবিধা পাওয়ার জন্যে?
কামাল হোসেনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। তিনি তার সাধ্য মতো চেষ্টা করেছেন। কামাল হোসেন বা ঐক্য ফ্রন্টের হাতে বন্দুক ছিল না। তার জনবলও নেই, টাকা পয়সাও নেই। দেশ এবং রাজনীতি দুটোকেই নাড়াচাড়া করতে চাইলে বিএনপি পারে। ক্ষমতাও যেটুকু সেটি বিএনপির আছে। কামাল হোসেনের সেই শক্তি নেই বলেই তিনি বিএনপির সঙ্গে একত্রিত হয়ে সরকারকে হটাতে চেয়েছেন। তাই আমি মনে করি, নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপির রাস্তায় নামা উচিৎ ছিলো।
ড. কামাল হোসেনই বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে গেছে এরকম একটি গুঞ্জনের কারণ কি? আওয়ামী লীগ নেতা মো: নাসিম বলেছেন কামাল হোসেনকে তারাই পাঠিয়েছেন…..
সম্ভবত মো: নাসিম সাহেব এটি রাজনৈতিক জোক করেছেন। তিনি এটি মিন করেননি। এখন আমি যদি বলি, সরকার পরিবর্তন হলে অসুবিধা হবে এটি ভেবে নাসিম সাহেব গোপনে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলছেন; তাহলে সেটি কী অর্থবহ হবে? তাছাড়া বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে সবাই জানেন যে, শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ড. কামালের সুসম্পর্ক নেই। সুসম্পর্ক থাকলে অনেক আগেই তিনি ভালো জায়গায় গিয়ে ভালো সুবিধা নিতে পারতেন। সে কারণেই নাসিম সাহেবের ওই বক্তব্য হালে পানি পায়নি। বিএনপিরও কেউ গুরুত্ব দেননি।
‘র’-এর বিপরীতে কোনো বিদেশি সংস্থা আপনাদের পক্ষে তৎপর ছিলো কি?
অন্য শক্তি বা বিদেশিরা বলেছে তোমরা জয়লাভ করো আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে তোমরা এটা ওটা করো। কিন্তু আমরাতো মাঠে নেই। কিছুই কাজে লাগেনি।
বিদেশি কোনো কোনো শক্তি তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে অন্য যে কোনো নেতাকে নেতৃত্ব গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছিলো বলে শোনা যায়। আপনার জানা আছে?
আমার জানা নেই। তবে বিএনপির নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য আমি জরুরি কাউন্সিল করতে বলেছিলাম।
বিএনপির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার মুল্যায়ন জানতে চাই…
এটা কঠিন প্রশ্ন। বিএনপির ভবিষ্যৎ না থাকলে আওয়ামী লীগ কি আরও পঞ্চাশ বছর ক্ষমতায় থাকবে? তবে আমার মনে হয় না আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবে। সেই অর্থে অবশ্যই বিএনপির ভবিষ্যৎ আছে।

No comments

Powered by Blogger.