এনআরসি-কেন্দ্রীক নাগরিকত্ব নিয়ে উভয়সঙ্কট: ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সামনে প্রশ্ন

১৯৮৭ সাল পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীদের যে সব সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে, তারা কি ভারতের সিটিজেনশিপ অ্যাক্টের অধীনে নাগরিক গণ্য হবে? বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে এই প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। আসামে ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্সের (এনআরসি) চূড়ান্ত প্রকাশের তারিখ ৩১ আগস্ট যখন এগিয়ে আসছে, তখন আদালতের সামনে এই প্রশ্ন রাখা হলো।

প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গোগোইয়ের নেতৃত্বাধীন একটি বেঞ্চ এনআরসি সম্পর্কিত আইনি ইস্যুগুলোর শুনানি করছে। শুনানির সময় বেঞ্চের সামনে এই গুরুত্বপূর্ণ পারস্পরিক সঙ্ঘাতপূর্ণ বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। একদিকে রয়েছে দেশের সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট, অন্যদিকে এনআরসির জন্য তালিকাভুক্তির জন্য যে ১৩টি দলিল চাওয়া হয়েছে, যেখানে পারিবারিক পরম্পরা এবং ভারতীয় জাতীয়তার প্রমাণ দিতে হবে।

সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট অনুসারে, ১৯৫০ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত যে সব শিশুর জন্ম হয়েছে ভারতে, তাদের জন্মের কাগজপত্রের ভিত্তিতেই তারা ভারতের নাগরিক গণ্য হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যদি জন্মগ্রহণকারী শিশুটি অবৈধ অভিবাসীর হয়, তাহলে এই নিয়ম অনুসারে তারা কি নাগরিক গণ্য হবে?

শীর্ষ আদালত বিভিন্ন পক্ষের শুনানির পর বিষয়টি নিয়ে আদেশ স্থগিত রেখেছে। এবং এটা পরিস্কার যে, ১৯৭১ থেকে ১৯৮৭ সাল সময়কালে জন্মগ্রহণকারীদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন কোন আদেশ দেবে আদালত, যদিও তাদের নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

অ্যাডভোকেট সোমিরান শর্মা তার আবেদনের মাধ্যমে আদালতের মনোযোগ আকর্ষণ করেন, যেটা সাংবিধানিক বেঞ্চে অপেক্ষমান রাখা হয়েছে।

শর্মার আবেদনে বলা হয়েছে, “সিটিজেনশিপ অ্যাক্টের অধীনে ভারতে জন্মগ্রহণকৃত প্রতিটি শিশুর নাগরিকত্বের ব্যাখ্যায় যদি অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদেরও হিসাব করা হয়, তাহলে এটা অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক হবে। এই আইনে বাস্তবতাটা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে যে, বিপুল সংখ্যক অবৈধ অভিবাসী প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসামে এসে বসত গড়েছে, এবং অ্যাক্টের অধীনে তাদের বিশেষ ব্যবস্থাও দেয়া হয়েছে”।

তিনি বলেন যে, এই ক্যাটেগরিতে যারা পড়েন, আসাম আদমশুমারির ভিত্তিতে তাদের একটি আলাদা তালিকা করা উচিত, কারণ এনআরসি এখন এরইমধ্যে অনেক এগিয়ে গেছে এবং মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এটা প্রকাশিত হবে।

শুনানির সময় আদালত বলেছে যে, আসামের আইন সভায় যে ধরণের এনআরসি ডাটা প্রকাশ করা হয়েছে, এবং সেগুলো নিয়ে রাজনীতিবিদরা যে সব মন্তব্য করেছেন, তারা সেটি বিবেচনায় নিবেন না।

বেঞ্চ বলেছে, “আমাদের কর্মকান্ড নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্ক হতে পারে, সেটা আমাদেরকে ব্যাহত করতে পারে না। আমরা নির্ধারিত সময় অনুযায়ীই এনআরসি চূড়ান্ত করার কাজ পর্যালোচনা করবো”।

No comments

Powered by Blogger.