এমন বন্ধু আর কে আছে…তোমার মতো মিস্টার

তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে চল…দোকান বন্ধ হয়ে যাবে৷ এটা বলেই গলার লেসটা একটু জোরে নাড়িয়ে দিলেই হল৷ গুটিগুটি পায়ে চলতে থাকা কুমির বাবাজি আরও জোরে পা ফেলতে থাকে৷ রাস্তায় তখন অনেকের চোখ গোল গোল হয়ে যায়৷ অবশ্য যারা প্রায়ই দেখেন তারা জানেন এটা তো খুবই স্বাভাবিক৷ দোকান-বাজার, ফ্ল্যাটের তলা, পার্ক, রাস্তা মায় সুইমিং পুলে কুমির বন্ধুকে নিয়েই ঘুরে বেড়ান নোবুমিৎসু মুরাবায়সি৷

দাদু একটা সেলফি হয়ে যাক !
সেটা শুনেই মুচকি হাসেন নোবুমিৎসু৷ আসলে সেলফিওয়ালা তো তার জন্য নয়, বরং বন্ধু কুমিরের জন্য ছবি তুলতে ব্যাস্ত৷ তা হোক, কুমির চোখ বুজে নির্জীব হয়ে থাকে৷ কখনও একটু হাঁ করে৷ আর তার পিঠে চড়ে, লেজ ধরে অনেকেই সেলফি তুলে নেন৷ সঙ্গে অবশ্যই থাকেন ৬৫ বছরের নোবুমিৎসু৷ বলা তো যায় না, যদি কখনও বিগড়ে যায় বন্ধু-তাহলেই…

হিরোশিমার জনবহুল কুরে শহরের ফ্ল্যাটে থাকে নোবুমিৎসু ও তার কুমির বন্ধু৷ বছর তিরিশ আগে এটাকে কিনে এনেছিলেন৷ তারপর রেখে দিয়েছেন৷ আর কুমিরটাও আড়ে বহরে বেশ বেড়েছে৷ সেদিনের ছানা কুমির এখন ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা বিরাট এক দৈত্য যেন৷ তবে ভরসা এটাই যে নোবুমিৎসু থাকলে সে কিছু বলে না৷ দিব্বি সবাইকে সহ্য করে নেয়৷
সকাল-বিকাল কাজে বা এমনি হাঁটার সময় কুরে শহরের রাস্তায় এই কুমির বন্ধুকে দেখা খুব স্বাভাবিক৷ বিরাট রাস্তার ধার দিয়ে নোবুমিৎসু তার কুমিরকে নিয়ে হাওয়া খেতে বেরিয়েছেন৷ পথ চলতি পড়ুয়ার দল ঘিরে নিয়েছে৷ মজা পেয়ে কুমিরটা রাস্তার উপরেই চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ল৷ তার লেজ ধরে চলছে ছবি তোলার ধুম৷ আবার হয়ত সুইমিং পুলের কাছে গিয়ে হুড়মুড় করে জলে ঝাঁপ দিল৷

প্রথমে ভাবতেই পারিনি এটা আমার সঙ্গে এমন করে থেকে যাবে৷ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে আমার কাছে রয়েছে৷ একদম পোষ মেনে গিয়েছে৷ জানিয়েছেন নোবুমিৎসু৷ তাঁর ঘরেই একটা বড় বাথটব রয়েছে৷ সেই বাথটবে কুমিরটাকে ছেড়ে রাখা হয়৷ ওটাই যে ওর প্রিয় স্থান৷ খাওয়ার সময় হলে বড় বড় মুরগি-গোরুর মাংসের টুকরো খেতে দিতে হয় কুমিরটাকে৷ গোগ্রাসে সেটা গিলে নেয় প্রাণীটা৷ তারপর চলে দাঁত মাজার পালা৷ নোবুমিৎসু এই কাজটি নিজেই করেন৷ মুখো ধোয়া হলেই ঘুমের পালা৷ তাঁর কোলেই ঘুমিয়ে পড়ে কুমিরটা৷
কুরে শহরের পৌর বিভাগ ব্যাপারটা খুব সিরিয়াসলি দেখে৷ তারা বুঝেছে এই বৃদ্ধ ও কুমির একে অপরের বন্ধু৷ তাই তাদের নিজের মতো করেই থাকতে দিতে হবে৷ এর জন্য প্রকাশ্যে কুমিরকে নিয়ে চলাচলের অনুমতি পেয়েছেন জাপানি বৃদ্ধ৷ প্রায় সবখানেই তাদের অবাধ গতিবিধি৷ প্রশাসন চাইছে এই বন্ধুত্বের জুটিকে সবার কাছে তুলে ধরতে৷ কুরে শহরের অলিখিত বিজ্ঞাপন হয়ে গিয়েছে এই কুমির বন্ধু৷
সত্যি তো এমন বন্ধু আর কে আছে…৷

No comments

Powered by Blogger.