শ্রীলংকা কেন মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনছে?

স্থানীয় মিডিয়ার সাথে আলাপকালে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা জানান কেন তিনি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিধান পুনর্বহাল করছেন। তিনি বলেন, “আজ, আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী ও অবৈধ পাচার দিবসে আমি ঘোষণা দিতে চাই যে, মাদক সম্পর্কিত অপরাধের ব্যাপারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে আমি পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ”।
১৯৭৬ সাল থেকে শ্রীলংকায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের উপর নিষেধাজ্ঞা চলে আসছে।
প্রেসিডেন্সিয়াল টাস্ক ফোর্স অন ড্রাগ প্রিভেনশানের (পিটিএফডিপি) সাবেক প্রধান এবং বর্তমানে শ্রীলংকার ড্রাগ রিহ্যাবিলিটেশান অথরিটির উপদেষ্টা সামান্থা কুমারা কিঠালাবারাচ্ছি ডয়চে ভেলেকে বলেন যে, ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই সিরিসেনা দেশের মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ষাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছিলেন। তিনি একটা মাদক বিরোধী টাস্ক ফোর্স গঠন করেছিলেন এবং মাদক প্রতিরোধের জন্য কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়েছিলেন।
কিঠালাবারাচ্ছির মতে, মাদক বিরোধী টাস্ক ফোর্স আরও কঠিন আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে এসেছে এবং মাদক সম্পর্কিত মামলাগুলোর নিষ্পত্তিতে পুলিশকে বাড়তি ক্ষমতা দিয়েছে। একই সাথে, স্কুল ও গ্রামগুলোতে মাদক বিরোধী সচেতনতা তৈরির জন্য হাজার হাজার কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিঠালাবারাচ্ছি বলেন, “এই কমিটিগুলোই দাবি জানিয়েছে যাতে সরকার বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। এরপর প্রেসিডেন্ট মৃত্যুদণ্ডের রায় বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন”।
নির্বাচনী কৌশল?
তবে ভারতীয় শহর চেন্নাইয়ের অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশানের এন সাথিয়া মূর্তির বিশ্বাস যে, মৃত্যুদণ্ড পুনর্বহালের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
এপ্রিলের ইস্টার সানডে হামলার আগে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছিলেন, সিরিসেনার সমর্থন রেটিং শক্তিশালী এবং তার পুনর্নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাও যথেষ্ট রয়েছে। মূর্তি বলেন, তিনি উদারপন্থী ও রক্ষণশীল উভয় গোষ্ঠির ভোট পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, এটা তার ইমেজ ক্ষুণ্ণ করেছে। কারণ শ্রীলংকানরা অন্যান্য বিষয়ের উপরে তাদের জাতীয় ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
কিন্তু ইন্সটিটিউট অব ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ শ্রীলংকার (আইএসএসএসএসএল) রাঙা জয়সুরিয়ার মত হলো মাদক অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্ত সিরিসেনার জনপ্রিয়তা বাড়াবে বলে মনে হয় না, কারণ অধিকাংশ মানুষই এই ব্যাপারে উদাসীন।
এই বিশ্লেষক বলেন, “আমি মনে করি না, এটা তাকে পুনর্নির্বাচনে সাহায্য করবে। তবে এখনও এটা বলার সময় আসেনি যে, এই সিদ্ধান্ত শ্রীলংকার রাজনীতির উপর আসলেই কি প্রভাব ফেলবে”।
মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা
মৃত্যুদণ্ড ইস্যু নিয়ে প্রেসিডেন্টের চেয়ে ভিন্ন অবস্থানে আছেন শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমাসিঙ্গে। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে, তিনি বলেছেন যে, তিনি মৃত্যুদণ্ড পুনর্বাহলের বিষয়টিকে সমর্থন দিবেন না।
মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে বিক্রমাসিঙ্গের বিরোধিতার কারণে প্রেসিডেন্টের উপর চাপ আরও বেড়েছে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বেশ কতগুলো মামলা করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। একই সাথে তারা সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য শ্রীলংকান কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
অধিকার কর্মী লাকনাথ জয়াকোদি এবং ওয়েলেজ সুদেশ নান্দিমাল সিলভা মনে করেন যে, মৃত্যুদণ্ড পুনর্বাহলের সুদূরপ্রসারী পরিণতি রয়েছে এবং এটা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সকল বন্দীর উপর প্রভাব ফেলবে, যাদের মধ্যে ঘাতক, ধর্ষক, অপহরণকারী এবং সশস্ত্র লুণ্ঠনকারীরা রয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধ করা যায় না। তাদের মতে, “যে সব দেশ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে, তারা বলে থাকে যে, অপরাধীদের প্রতিহত করতেই এটা করা হচ্ছে। বার বার এই দাবি করা হয়েছে, কিন্তু এমন কোন প্রমাণ নেই যে মৃত্যুদণ্ড অপরাধ কমানোর ব্যাপারে এমন কোন ভূমিকা রাখে, যেটা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দ্বারা হয় না”।

No comments

Powered by Blogger.