নির্মাণত্রুটির কারণে পাকিস্তানকে ফাঁকি দিতে পারছে না ভারতীয় সাবমেরিন

বিশ্ববাজার থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ভারত। কৌশলগত ক্ষেপনাস্ত্র থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের অস্ত্র বিশ্ববাজার থেকে সহজেই কেনা যায়। ফলে ভারতের সামরিক শক্তি অনেক বেশি। অন্যকথায় বলা যায় বিদেশী অস্ত্রে ভারতের ভাণ্ডার উপচে পড়ছে। যেমন: ট্যাংক, ফাইটার জেট, সাবমেরিন, কামান থেকে শুরু করে সব ধরনের অস্ত্রই আমদানি করা হচ্ছে। বিদেশী অস্ত্র কেনার পেছনে ভারতের এই বিপুল ব্যয়ের চাপ পড়ছে জনগণের উপর। কিন্তু ৩০ বছর ধরে অনেক চেষ্টা করেও ভারত সরকার দেশীয় অস্ত্র শিল্পের তেমন বিকাশ ঘটাতে পারেনি। ৪০ বছর ধরে চেষ্টা করে এলসিএ ফাইটার ‘তেজাস’ এখনো কোন অস্ত্র নয়। ৪০ বছরের পুরনো অর্জুন ট্যাংক এখনো অযোগ্য।
এই পরিস্থিতিতে নিজের তৈরি অস্ত্রের উপর ভরসা না রাখতে পেরে ভারতীয়রা ‘চীনা-কৌশল’ বেছে নিয়েছে। ফলে তাকে দুই পথে হাটতে হচ্ছে। প্রথম পথটি দেশে তৈরি অস্ত্রগুলোতে কারিগরি সমস্যা চলছে, অথচ বিদেশীরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এই অবস্থা উত্তরণে দেশীয় উৎপাদনে সময় ও অর্থ বাঁচাতে গিয়ে বিপুল সংখ্যক নির্দেশনা মান্য না করায় নির্মাণে ঘাটতি থাকছে।
দ্বিতীয় পদক্ষেপটি ভারতের অনেক অনুকুল। তা হলো বিদেশ থেকে অস্ত্র কেনা ও ওইসব রাষ্ট্রগুলোকে বলা যে তাদের প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনাগত অভিজ্ঞতা নিয়ে এসে ভারতে বসে অস্ত্রগুলো তৈরি করতে, যাতে ভারতীয় সামরিক শিল্প চাঙ্গা হয়। তৃতীয় বিশ্বের পশ্চাদপদ দেশগুলোতে এটা সাধারণ একটি অনুশীলন।
কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল খুবই ধীর গতির। ১৫ বছর চেষ্টার পর ভারতের তৈরি প্রথম সাবমেরিনটি সরবরাহ করলে এতে মানগত ত্রুটি ধরা পড়ে। সাবমেরিনটির নির্মাণের মান খুবই দুর্বল এবং ত্রুটিগুলো গুরুতর। এই সাবমেরিন নিয়ে যখন পাকিস্তানের পানিতে তারা হানা দেয় সহজেই ধরা পড়ে যায়, যা ভারতের জন্য খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে।
নির্মাণ ত্রুটি ছাড়াও ভারতের স্কুইড-ক্লাস সাবমেরিনের একটি বড় গোপন বিপদ রয়েছে: এর গোপনীয়তা পুরোপুরি ফাঁস হয়ে গেছে। ২০১৭ সালে ফ্রেন্স নেভাল শিপবিল্ডিং ব্যুরোর ডিসিএনএস ইঞ্জিনিয়ারদের অবহেলায় সাবমেরিনের গোপন ডকুমেন্টগুলো ইন্টারনেটে চলে যায়। ফলে পুরো বিশ্ব তা জেনে যায়। ভারতের তৈরি ফরাসি ডিজাইনের সাবমেরিনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন: ডুব দেয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতা, রেঞ্জ, ইলেক্ট্রম্যাগনেটিক সিগন্যাল, ইনফ্রারেড সিগন্যাল, কমব্যাট সিস্টেম, সাবমেরিনের শব্দগত উপাত্ত ফাঁস হওয়ায় এগুলোর পেছনে ভারতের ৩.৪ বিলিয়ন ডলার জলে গেছে এবং তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে সাবমেরিনগুলো টিকে থাকার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
আরো মজার ব্যাপার হলো এ ব্যাপারে ভারত নির্বিকার। তারা চুক্তিটি বাতিল করেনি, এমনকি ফ্রান্সকে সিস্টেম উন্নত করতেও বলেনি। চূড়ান্ত প্রকল্প অব্যাহত আছে। এর ফলাফল হলো: ভারতে তৈরি সাবমেরিনের মান নিকৃষ্ট এবং তা ফ্রান্সের গোপন ডকুমেন্টের পর্যায়ে পৌছাতে পারবে না। এতে বহুজাতিক সামারিক শক্তিগুলো বেশ পুলকিত।

No comments

Powered by Blogger.