দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্ত ঠেকাতে ভ্যাকসিন

দেশে প্রতিদিনই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। মশাবাহিত এ রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে প্রত্যেকটি জেলায়। রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এ অবস্থায় আলোচনা হচ্ছে ডেঙ্গুর প্রতিষেধক নিয়ে।

বিশ্বে ডেঙ্গু প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য কোনো চিকিৎসা না থাকলেও সম্প্রতি প্রথমবারের মতো একটি ভ্যাকসিনের (টিকা) অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও এটির উন্নয়নে এখনও কাজ চলছে, তথাপি দ্বিতীয়বারের মতো ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়া ঠেকাতে এটিই এখন পর্যন্ত একমাত্র ‘ভরসা’।

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ১ মে ‘ডেংভেক্সিয়া’ নামের এই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনুমোদনপ্রাপ্ত ভ্যাকসিনটি ৯ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের মধ্যে চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করবে।

সংস্থাটির ডেপুটি কমিশনার আন্না আব্রাহাম বলেন, মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ বিভাগ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে আমরা কাজ করছি। নতুন এই ভ্যাকসিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু অঞ্চলের মানুষের ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দেবে।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সানোফি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে ‘তাকেডা’ নামের অপর একটি প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিনটি ২০১৫ সালে আবিষ্কার করে। এরপর তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপণন করা হয়।

২০১৭ সালে ফিলিপাইনে ব্যাপক হারে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিলে দেশটিতে এই ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এতে তেমন একটা সাফল্য আসেনি। এমনকি ভ্যাকসিন নেয়ার পরও অনেক শিশু ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এরপরই দেশটি এই ভ্যাকসিন ব্যবহার সাময়িক নিষিদ্ধ করে।

ভ্যাকসিনটি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান সানোফি বলছে, ভ্যাকসিনটির আরও উন্নয়ন করা হয়েছে। এছাড়া এটি ভুলভাবে ব্যবহার করা হলে তা কার্যকর হবে না। ভ্যাকসিনটি শুধু তাদের জন্য, যারা এরই মধ্যে একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

যারা এখনও রোগটিতে আক্রান্ত হননি, তারা ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করতে পারবেন না। এটি মূলত তৈরি করা হয়েছে দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্তের ভয়াবহতা প্রতিরোধের জন্য। এ কারণে চিকিৎসকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে, তারা যেন রোগীর ইতিহাস ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নেন।

ভ্যাকসিনটি তিনটি ইনজেকশনের মাধ্যমে দেয়া হয়। প্রথম ইনজেকশন দেয়ার ৬ মাস পর দ্বিতীয়টি এবং তৃতীয়টি এক বছর পর দিতে হয়। ৩৫ হাজার রোগীর ওপর ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে।

এতে ৯ থেকে ১৬ বছর বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে প্রায় ৭৬ শতাংশ কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে ১৯টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেংভেক্সিয়ার অনুমোদন দিয়েছে। সানোফি বলছে, এখন পর্যন্ত ডেংভেক্সিয়া গ্রহণকারীদের মধ্যে মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, ক্লান্তি কিংবা সামান্য জ্বরের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র বলছে, বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এডিস মশার কামড়ে হওয়া ডেঙ্গু ভাইরাসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। মূলত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের মানুষ এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন।

এই রোগে হাসপাতালে নেয়া রোগীদের শতকরা ৯৫ ভাগই দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকিতে থাকেন। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে মৃতের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার।

No comments

Powered by Blogger.