জাতিসংঘ অভিবাসী সংস্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশীদের দেশে ফিরতে চাপ দেয়ার অভিযোগ

শিশুসহ বাংলাদেশী অভিবাসীদের সাথে আচরণ নিয়ে ‘মারাত্মক উদ্বেগ’ প্রকাশের পর জাতিসংঘ অভিবাসী সংস্থার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

তিউনিস-ভিত্তিক এনজিও ফোরাম তিউনিসিয়েন পুর লেস ড্রয়েটস একোনোমিকেস এট সোশিয়াক্স (এফটিডিইএস) ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশান ফর মাইগ্রেশানের (আইওএম) কাছে চলতি মাসে অভিবাসীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে এই অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিবাসীরা অভিযোগ করেছেন যে, সাগরে কয়েক সপ্তাহ কাটানোর পর কর্মকর্তা এবং কূটনীতিকরা তাদের ফিরে যাওয়ার জন্য চাপ দিয়েছেন।

৬৪ জন বাংলাদেশীর ওই গ্রুপটি জানিয়েছে স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আইওএম তাদেরকে চাপ দিয়েছে বলে মনে হয়েছে তাদের। তা না হলে গ্রেফতারের ভয় দেখানো হয়েছে।

তারা আরও বলেছন বাংলাদেশ দূতাবাসের কূটনীতিকরা তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, তারা যদি স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার কাগজে সই না করে, তাহলে তারা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচারকারীদের শিকার হবেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, “আমরা যে বক্তব্য সংগ্রহ করেছি, সেগুলোর ভিত্তিতে এফটিডিইএস অভিবাসীদের সাথে আইওএ তিউনিসিয়ার আচরণ নিয়ে আইওএ’র কাছে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে”।

“সকল অভিবাসীর বক্তব্য একই রকম এবং সবাই আইওএমের তরফে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের ইঙ্গিত দিয়েছেন”।

মে মাসে ম্যারিডাইভ ৬০১ নৌযান অভিবাসীদের উদ্ধার করলেও ইউরোপিয়ান কর্তৃপক্ষ তাদের প্রবেশের অনুমতি না দেয়ায় তাদের আরও তিন সপ্তাহ সাগরে কাটাতে হয়েছে।

এফটিডিইএস বলেছে, “অভিবাসীদের মতে, সাক্ষাতকারের সময় ‘স্বেচ্ছায়’ প্রত্যাবাসনের কাগজে স্বাক্ষর করার জন্য আইওএম কর্মকর্তারা তাদের চরম মানসিক চাপ দিয়েছে। তারা আরও বলেছে যে, তারা যখন কাগজে সই করতে অস্বীকার করেন, তখন মানসিক চাপ আরও বাড়ানো হয়। অভিবাসীরা জানিয়েছে যে, প্রাথমিক এই সাক্ষাতকারের সময় ইউএনএইচসিআর বা ইউনিসেফ কেউই সেখানে উপস্থিত ছিল না। এবং তারা এটাও জানেন না যে, তাদের আশ্রয় প্রার্থনার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া, তাদের জরুরি কোন মেডিকেল সহায়তাও দেয়া হয়নি”।

আইওএম অস্বীকার করেছে যে, অভিবাসীদের বাংলাদেশে ফেরার জন্য কোন ধরনের চাপ দেয়া হয়েছে। তারা বলেছে যে, সকল কাগজপত্রের বিষয় তাদের কাছে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এমন ভাষায় যেটা তারা বোঝে। আইওএম বলেছে অভিবাসীদেরকে সমস্ত উপায় সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে। এর মধ্যে আশ্রয় প্রার্থনা এবং তিউনিসিয়ায় অবস্থানের বিষয়েও তাদের জানানো হয়েছে।

এই লোকগুলো ৭৫ জন মানুষের একটি গ্রুপে ছিল। এদের প্রায় অর্ধেকই শিশু, যাদের সাথে কোন অভিভাবক নেই। ম্যারিডাইভ ৬০১ জাহাজ তাদের উদ্ধার করে। সাগরে ১৯ দিন থাকার পর তাদেরকে তিউনিসিয়ার জারজিসে নামার অনুমতি দেয়া হয় এবং সেখানে তিউনিসের রেডক্রিসেন্ট সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। পরবর্তী কয়েক দিনে কয়েক ডজন বাংলাদেশীকে স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন ও রি-ইন্টিগ্রেশান কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।

তিউনিসিয়ায় বাংলাদেশীদের বিষয়টি দেখভাল করে ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস। দূতাবাসের একজন মুখপাত্র জানান, বিশেষ এই ঘটনা সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করতে পারছেন না। তবে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন এবং বিষয়টিকে ‘অতি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে’।

তিনি বলেন “ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোন তদন্ত শুরু করলে সেখানে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে দূতাবাস প্রস্তুত আছে”। দূতাবাস নিজ থেকে এ ধরনের বিষয়ে তদন্ত করতে পারে না বলেও জানান তিনি।

“এটা যদি সত্যিই ঘটে থাকে, তাহলে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগের তদন্ত করতে পারে”।

মুখপাত্র আরও বলেন, “এটা মাত্র শুরু। আমরা এ ব্যাপারে আপনাদের সাথে থাকবো। আমরা জানি যারা এই মিশনে নেতৃত্ব দিয়েছিল, সেখানে কারা কারা ছিল”।

এফটিডিইএস নিশ্চিত করেছে যে, চারজন বাংলাদেশী স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে রাজি হয়নি এবং তিউনিসিয়ায় থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে গত সপ্তাহে তাদেরকে আশ্রয় প্রার্থীর স্ট্যাটাস দিয়েছে ইউএনএইচসিআর।
ভূমধ্য সাগরে টাগবোটে কয়েক সপ্তাহ ভাসার পর বাংলাদেশী এই অভিবাসীদের উদ্ধার করে পরে তিউনিসিয়া নিয়ে যাওয়া হয়।
>>>লরেঞ্জো টোন্ডো ও মরিস স্টায়ের্ল

No comments

Powered by Blogger.