ভারত যা বলছে বনাম কাশ্মীরের যা ঘটছে

চলতি মাসের ৫ তারিখে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে ভারত সরকার। এর ফলে বিশেষ মর্যাদা হারায় জম্মু-কাশ্মীর। এরপর থেকেই উত্তাল কাশ্মীর। থমথমে কাশ্মীরে পুলিশের সঙ্গে একের পর এক সংঘর্ষ লেগেই আছে। জম্মু-কাশ্মীরে রাজনৈতিক নেতাসহ শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

গোটা জম্মু-কাশ্মীরে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রাখা হয়েছে। মোবাইল সেবা ও ইন্টারনেট নেই। এর ফলে নানা ধরনের সংকটে পড়েছে রাজ্যটি। পাওয়া যচ্ছে না ওষুধসহ শিশুদের খ্যাদ্যও। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করছে রাজ্যটিতে কোনো ধরনের সহিংস আন্দোলন বা কোনো সমস্যা নাই। তবে বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে যে ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে তা ভিন্ন কথাই বলেছে। আসুন একবার দেখে নেই কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ভারত সরকার কী বলেছে এবং কাশ্মীরে আসলে কী ঘটছে।

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে দেশ দু’টির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কি চলে আসছে। এর আগে ১৯৪৭ সালের পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করতো ব্রিটিশরা। তারা পাকিস্তান এবং ভারতকে দু’টি স্বাধীন দেশে ভাগ করেন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশটিকে পাকিস্তান আর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশটিকে ভারতে রেখে দু’টি স্বাধীন অংশে ভাগ করেন। অন্যদিকে কাশ্মীরকে রাখা হয় আলাদা স্বাধীন দেশ হিসেবে। কিন্তু কয়েক দিন পরই কাশ্মীরের এক হিন্দু রাজা ভারতের নিকট আনুগত্য স্বীকার করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় কাশ্মীর সংকট। শুরু হয় বিতর্ক। পাকিস্তান ও ভারত উভয়ই এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ দাবি করে আসছে বহুদিন ধরে।

কাশ্মীর যখন ভারতের সঙ্গে যোগ দেয় তখনই ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা সৃষ্টি করা হয়। এ ধারার ফলে কাশ্মীর স্বায়ত্বশাসন পায়। রাজ্যটি শাসকবর্গ নিজদের ইচ্ছায় নিজেদের আইন তৈরি করতে পারতেন। সাত দশক ধরেই এমনভাবে চলছিল কাশ্মীর। কিন্তু হঠাৎ করেই ভারেতর সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে স্বায়ত্বশাসন হারায় রাজ্যটি। শুধু তাই নয়, এই রাজ্যটিতে বসবাস করে না এমন নাগরিক জমি কেনার অনুমতি পান এর ফলে।

৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া পর থেকেই উত্তাল ভূস্বর্গ। আর রাজ্যটিকে শান্ত রাখতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরের ইন্টারনেট, কেবল টিভি এবং ল্যান্ডলাইনসহ সকল প্রকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য মোতায়েন করেছে। প্রভাবশালী কাশ্মীরি নেতাদের আটকে রাখা হয়েছে। কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে রাজ্যটির নাগরিকদের। অবরুদ্ধ থাকার দু’সপ্তাহ পর ল্যান্ডলাইন সংযোগের নিষেদ্ধাজ্ঞা কিছুটা প্রত্যাহার করা হলেও অবরুদ্ধ অবস্থা চলছেই। কবে ইন্টারনেট এবং মোবাইল পরিষেবা চালু করা হবে সেই বিষয়ে কেউই কিছু জানেন না।

কাশ্মীরের যখন এমন অবস্থা তখন দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার বলছে রাজ্যটিতে কোনো ধরনের আন্দোলন নেই। নেই কোনো সহিংসতা। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও বলছে অন্য কথা। এছাড়াও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন রাজটিতে প্রায়ই চলে সংঘর্ষ। ভারতের দাবিকে বিতর্কিত দাবি বলেও আখ্যা দিয়েছেন তারা।

গত ৯ আগস্ট শুক্রবারের নামাজের পরে রাজ্যটিতে বিক্ষোভ হয়েছে কিনা তা নিয়ে একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়। প্রথমত, ভারত সরকার অস্বীকার করে। কিন্তু ভিডিওতে দেখা যায় বিক্ষোভ হয়েছিল। কাশ্মীরের শ্রীনগরের হাজার হাজার মানুষ স্বাধীনতার দাবিতে এ বিক্ষোভ করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা স্বাধীনতার দাবিতে হাতে প্লেকার্ড নিয়ে মিছিল করছে। এরপর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তার অবস্থান থেকে সরে আসে।

তখন বিক্ষোভে কোনো গুলি চালানো হয়নি বলে দাবি করে কাশ্মীরের রাজ্য পুলিশ। পরে আন্তর্জাতিক সংবামাধ্যমের প্রকাশ করা একটি ভিডিওতে গুলির শব্দ শোনা যায়। দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে নিতে কাঁদুনে গ্যাসও নিক্ষেপ করা হয়। তারপর রাজ্যটির কর্মকর্তরা স্বীকার করেন যে, গুলি ছোঁড়া হয়েছে এবং আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন।

এদিকে আগস্ট মাসের ১৬ তারিখ থেকে কাশ্মীরে বিভিন্ন সময়েই চলছে বিক্ষেভ। বিক্ষোভকারীরা আন্দোলনে নেমে কোনো না কোনো চিহ্ন রেখে যাচ্ছেন বা তারিখ লিখে যাচ্ছেন- যাতে করে গণমাধ্যম কর্মীরা সহজে বুঝতে পারেন আন্দোলনের ব্যাপারে। কাশ্মীরে আসলে কী হচ্ছে তা জানতে অনুসন্ধানকারীরাও কাজ করে যাচ্ছেন।

>>>সাউথ এশিয়ান মনিটর, 

No comments

Powered by Blogger.