মিয়ানমার-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভিন্ন দিক তুলে ধরলেন নারী ফটোগ্রাফাররা by মারি স্টার

লাস্ট আপডেট- ২৫ জুন ২০১৯: জুনে মিয়ানমার দেইত্তা গ্যালারিতে শুরু হতে যাওয়া একটি ফটোগ্রাফিক আর্ট এক্সিবিশনে ইয়াঙ্গুনের অল-ওম্যান ফটোগ্রাফি কালেকটিভ থুমা ও ঢাকাভিত্তিক একই দায়িত্বে থাকা কালির মধ্যকার সংস্কৃতি ও শিল্প বিনিময় কর্মসূচির ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
‘ব্রিজিং দি নাফ’ নামের এই ছবি প্রদর্শনীতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ফটোগ্রাফারদের ছবি রাখা হবে। ফটোগ্রাফাররা তাদের ফটোর মাধ্যমে দুই দেশের সমাজের পরিচিতি, সম্মান, আশা, সঙ্ঘাত ও গ্রহণযোগ্যতার মতো ইস্যু তুলে ধরেছেন।
থুমা কালেকটিভ হলো মিয়ানমারের ৫ নারী ফটোগ্রাফারের ফটোগ্রাফি কালেকশন। এসব ফটোগ্রাফারের লক্ষ্য ফটোগ্রাফির গল্পবলার দৃশ্যমান স্টাইল প্রবর্তন ও জনপ্রিয় করা। তারা চায় সদস্যদের মধ্যে এ নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করতে, তাদের অনুষ্ঠানে হাজিরদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা বাড়াতে। তারা নিজেদের ফটো সাংবাদিক নয়, বরং গল্পকথক হিসেবে তুলে ধরতে চায়।
মিয়ানমারের দেইত্তা গ্যালারিতে ২১ জুন ২০১৯ তোলা ছবিতে থুমা কালেকটিভের শোয়ে উত মোনে (বাঁয়ে) ও ব্রিজিং দ্য নাফ প্রকল্পের মিয়ানমার অংশের নেতা ইউ ইউ মাইন্ত থান
কর্মসূচিটির মিয়ানমার পক্ষের প্রজেক্ট লিডার ইউ ইউ মিয়ন্ত থান বলেন, প্রতিটি প্রকল্পে দুজন তথা একজন মিয়ানমারের ও একজন বাংলাদেশের ফটোগ্রাফার একসাথে কাজ করেছেন। এটি ছিল আমাদের উভয়ের জন্য একটি সফর। আমরা সমস্যার সুরাহা করেছি, সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আপস করেছি। আমাদের হয়তো অভিন্ন বিষয়বস্তু ছিল, হয়তো বৈচিত্র্যও ছিল। তবে এভাবেই আমরা সাংস্কৃতিকভাবে, সামাজিকভাবে ও শৈল্পিকভাবে বিনিময় করেছি।
প্রজেক্টটির পরিকল্পনা করা হয়েছিল এভাবে যে বাংলাদেশী ফটোগ্রাফাররা কয়েকটি ইভেন্টের জন্য প্রথমবারের মতো ইয়াঙ্গুন সফর করবে। তারা সেখানে মিয়ানমারের ফটোগ্রাফারদের সাথে ফটোগ্রাফি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করে দেবে। তারপর মিয়ানমারের ফটোগ্রাফারা একই পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ সফর করবে।
থুমা কালেকশনের অপর সদস্য ওয়াট হম বলেন, আমরা প্রতিবেশী হলেও আগে কখনো বাংলাদেশ যাইনি, তারাও এখানে আসেনি। আসলে এই প্রথম আমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হচ্ছি। এই প্রকল্পের মৌলিক ধারণা হলো দৈহিক বিনিময়।

অবশ্য কালি কালেকটিভের ফটোগ্রাফাররা ইয়াঙ্গুন সফরের পর থুমার সদস্যরা ঢাকায় আসে। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের ব্যাপক প্রশ্নের পর এবং তারা সফরকালে কোনো ধরনের সাংবাদিকতামূলক কাজ করবে না, এমন নিশ্চয়তা দেয়ার পরও মিয়ানমারের নারীদের কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়।
মিন্ত থান বলেন, আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কেন এমন করা হলো। বলা হলো, প্রশ্নের জবাব দেয়া যাবে না।
ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশী ফটোগ্রাফাররা সেখানকার দরুণ নিরাপদ পরিবেশ দেখে বিস্মিত হয়ে যান। তারা সন্ধ্যার পরও আশপাশে চলাচল করতে পারতেন, বিয়ার পানের জন্য তাদের গোপনীয়তা অবলম্বনের প্রয়োজন পড়ত না। ফটোগ্রাফারদের কয়েকজন এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সদস্যদের যেভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে তা দেখে অবাক হন।
মিন্ত থানের মতে, দুই বছর ধরে ঝুলে থাকা রোহিঙ্গা সঙ্কটের মতো বহুল আলোচিত বিষয় ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা নিয়ে চিন্তাভাবনা করাও ছিল এই প্রকল্পের একটি লক্ষ্য। তারা একজন ফটোগ্রাফারের দৃষ্টিভঙ্গিতে সামঞ্জস্যতা, পার্থক্য, অভিন্ন সমস্যা নিয়ে অনুসন্ধান করতে চেয়েছিল।

তিনি বলেন, আমি যখন বাংলাদেশে ছিলাম, তখন আমার সাবেক সহকর্মী ওয়া লোনকে গ্রেফতার করা হয়, আমি যখন এখানে ফিরে এলাম, তখন আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক বাংলাদেশের শহিদুল আলম গ্রেফতার হন। তারা দুজনই তাদের কাজের কারণে গ্রেফতার হয়েছিলেন। আমরা আসলে একই যন্ত্রণা, অভিন্ন ক্রোধে বসবাস করছি। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতাই পরস্পরের কাছে বিনিময় করেছি।
মিন্ত থান ঢাকার অধিকতর ‘প্রতিষ্ঠিত’ ফটোগ্রাফিক সম্প্রদায়ের সাথে ফটোগ্রাফারদের সহযোগিতার ফলে কিভাবে নতুন নতুন আইডিয়া আনা যায়, ফটোগ্রাফিক স্টাইলটিকে কিভাবে রিপোর্টেজ স্টাইলের রীতি থেকে দূরে নেয়া যায়, মিয়ানমারের ফটোগ্রাফিক সমাজের দিগন্ত আরো প্রসারিত করা যায় তা নিয়ে ভাবছেন।
এই বিনিময় সাবলীল ছিল না। শ ওয়াট হমন বলেন, কালি ফটোগ্রাফাররা রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করতে খুবই আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু থুমা সদস্যরা নিজেদের স্পষ্টভাষী ও খোলামনের নারী হিসেবে নিজেদের মনে করলেও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অভ্যস্ত ছিলেন না।

হমন বলেন, এটা ছিল শুভ সূচনা। আমরা সবই এ নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী ছিলাম। ওই সময় আমাদের সবার কাছে ভিন্নতার বিষয়টি ধরা দেয়
মিয়ানমারের ফটোগ্রাফাররা এখনো বাংলাদেশে যেতে পারেননি। ফলে প্রজেক্টটি সম্পূর্ণ হতে পারছেন না। তবে মিয়ানমারের ফটোগ্রাফারদের জন্য ভিসা পাওয়ার চেষ্টা চলছে। তারা আশা করছে, চলতি বছরের শেষদিকে কালির সদস্যদের সাথে তারা ঢাকায় একই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারবেন।

No comments

Powered by Blogger.