অর্থনীতিবিদদের চোখে বাজেট

নতুন অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট গতানুগতিক, আগেরবারের ধারাবাহিকতা ও রিপিট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের কথা- বাজেটে কংক্রিট কিছু নাই। প্রস্তাবিত বাজেটে আয়ের বিরাট অংক। কিন্তু আয় ও লক্ষ্য অর্জনের কোনো দিক-নির্দেশেনা নেই। জনকল্যাণমুখী ও জনবান্ধবমুখীও নয়। সার্বিকভাবে বাজেটের লক্ষ্যগুলো অর্জন করার কার্যকর পদক্ষেপগুলো দেখা যায়নি বলে তারা মনে করেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে অসম্পূর্ণ বাজেট হয়েছে। সুষ্ঠু তদারকি ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব না হলে প্রতিবছরের মত এবারের বাজেটও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলে অভিমত তাদের।
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এসব মন্তব্য করেন তারা। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেটটা সার্বিকভাবে গতবারের বাজেটই এবার রিপিট হয়েছে। আগেরকার বাজেটের মতোই গতানুগতিক ও ধারাবাহিকতা। স্বদিচ্ছার প্রকাশ হয়েছে অনেক কিছু করার। কিন্তু লক্ষ্যগুলো কিভাবে অর্জন করবেন সে ব্যাপারে কোনো দিক-নির্দেশেনা দেখা যায়নি বাজেটে। তিনি বলেন, এটা অর্থমন্ত্রীর দোষের ব্যাপার না। কারণ নির্বাচনের পর মাঝামাঝি সময়ে দায়িত্ব পেয়েছেন। ফলে সময় কম পেয়েছেন তিনি।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দ্বিতীয় দিক হলো- প্রস্তাবিত বাজেটের আয়ের বিরাট অংক। সেটা অর্জন করা, রাজস্ব আদায় করা, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা ও ভ্যাট আদায়ের আধুনিকায়নের কোনো ব্যবস্থায় নেই এনবিআরের। তাই এই আয় অর্জন করা কঠিন হবে। অন্যদিকে ভ্যাটের উপর আমরা নির্ভরশীল। একটা পণ্যের ওপর ভ্যাট বসলে অন্য সব কিছুর দাম বাড়ে। কারণ একটা পণ্যের দাম আরেকটার ওপর নির্ভরশীল। তাই এবারের বাজেট জনকল্যাণমুখী ও জনবান্ধবমুখী খুব বেশি হয়েছে বলে মনে করেন না এই অর্থনীতিবিদ। পাশাপাশি বাজেটে খুব কংক্রিট কিছু নাই। বাজেটে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেবে। এতে করে ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ কমবে। ফলে এই খাত কঠিন চাপে পড়বে বলে মন্তব্য করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। সার্বিকভাবে বাজেটের লক্ষ্যগুলো অর্জন করার কংক্রিট অ্যাকশনগুলো দেখা যায়নি। বাজেট গণমানুষের হতে পারেনি। এ কারণে আমাদের মতো দেশে অনেক চিন্তা-ভাবনা করে বাজেট প্রণয়ন করা দরকার বলে জানান সাবেক এই গভর্নর।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাজেট পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অর্থমন্ত্রী নিঃসন্দেহে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবতার নিরিখে করার চেষ্টা করছেন। তবে এতে সামগ্রিকভাবে বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়নি। উনি প্রত্যাশা উচ্চাকাঙ্‌ক্ষার কথা বলেছেন, সেটা পরিপূরণের জন্য যে সুনির্দিষ্ট প্রকল্প-প্রস্তাবনা থাকে, বিশেষ করে নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে, তা অসম্পূর্ণ থেকে গেছে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে কতকগুলো সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি ছিল। আমাদের ধারণা ছিল সেই প্রতিশ্রুতিগুলোকে উল্লেখ করে, সেগুলোর জন্য কী কী পদক্ষেপ নেয়া হলো, সেরকম একটা ব্যবস্থা আমরা দেখবো। দুঃখজনকভাবে আমরা এই মুহূর্তে তা পেলাম না। যেসব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, যেমন তিন কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ২০৩০ সালের মধ্যে। কিন্তু এটা কোন খাতে, কীভাবে সৃষ্টি হবে এবং এটা ব্যক্তি খাতে হবে, না সরকারি খাতে হবে, এটা কি গ্রামে হবে, নাকি শহরে হবে, এ ধরনের কোনও মূল্যায়নভিত্তিক বা কোনও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাভিত্তিক কৌশলপত্র আমরা সেভাবে লক্ষ্য করিনি। তিনি বলেন, যেসব প্রতিশ্রুতি আছে, সেগুলো অনেক ক্ষেত্রে কোন সময়ের ভেতরে বাস্তবায়ন হবে, তা বলা নেই। যেমন ব্যাংক খাতে কমিশনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আলাপ-আলোচনা করে করা হবে’। আমার কাছে এক কথায় মন্ত্রী নিঃসন্দেহে বাস্তবতার নিরিখে বাজেট করার চেষ্টা করেছেন, তবে সামগ্রিকভাবে বাস্তবতা তাতে প্রতিফলিত হয়নি। উনি প্রত্যাশা ও উচ্চাকাঙ্‌ক্ষার কথা বলেছেন, সেটা পরিপূরণ করার জন্য যে সুনির্দিষ্ট প্রকল্প-প্রস্তাবনা থাকে, বিশেষ করে নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে, সেটা কিন্তু অসম্পূর্ণ থেকে গেছে।
প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজারে প্রণোদনার কথা বলা হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে কর দাতাদের হাতে পাবলিকলি ট্রেডের কোম্পানি হতে আয়ের করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ হাজার টাকা করা হলেও বিষয়টি থেকে অনেকে সুযোগ নিতে পারবে না। স্টক ডিভিডেন্ডের উপর ১৫ শতাংশ কর প্রদানের বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে বিষয়টি ইতিবাচক।

No comments

Powered by Blogger.