ঋণনির্ভর বাজেট -আমীর খসরু

অনির্বাচিত সরকারের বাজেট দেয়ার কোনো নৈতিক অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাবের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গতকাল বনানীর নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র অনির্বাচিত সংসদ বহাল রয়েছে বাংলাদেশে। অনির্বাচিত সরকার এই বাজেটটা দিয়েছে। এই অনির্বাচিত সরকারের বাজেট দেয়ার নৈতিক অধিকার নেই। কারণ তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধও নয়। যখন কোনো সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় না তখন জনগণের কাছে তাদের কোনো দায়বদ্ধতাও থাকে না।
সুতরাং তাদের কাছে সুশাসন প্রত্যাশা করাও কঠিন। কারণ জবাবদিহিতা না থাকলে, জনগণের আস্থা না থাকলে, সুশাসন থাকে না। আর সুশাসন না থাকলে কোনো অর্থনীতিই সঠিক পথে চলতে পারেনা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট আজকে তাই। কারণ বাংলাদেশে সুশাসন অনুপস্থিত, গণতন্ত্র অনুপস্থিত। তিনি বলেন, যেহেতু একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায়। জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতা নেই।
তাদের কর্মকাণ্ডে কেউ প্রশ্ন করতে পারছেনা। সেহেতু তারা কি বাজেট দিল না দিল সেটাতে কিছু যায় আসে না। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গত ২০ বছরে সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছিল, যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ এখানে এসেছে, এই সামষ্টিক অর্থনীতির মূল বিষয় আজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সুশাসনের অভাবে আমাদের অর্থনীতি যেখানে ছিল সেখান থেকে সরে যাচ্ছে। সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, একদিকে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে অন্যদিকে সরকার এই ব্যাংকগুলো থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিচ্ছে, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিচ্ছে; বিদেশ থেকে ঋণ নিচ্ছে। বাংলাদেশে অর্থনীতি মূলত ঋণনির্ভর অর্থনীতিতে পরিণত হচ্ছে। এটা ভয়ঙ্কর। সবচেয়ে বিপদ হবে যখন এই ঋণগুলো আমাদের পরিশোধ করতে হবে। এখন সরকার যে ঋণনির্ভর বাজেট দিচ্ছে এটা কোনো না কোনো মাধ্যমে আমাদেরই পরিশোধ করতে হবে। এই টাকা আমার-আপনার পকেট থেকেই নেয়া হবে। করের মাধ্যমে, ভ্যাটের মাধ্যমে বা অন্যান্য মাধ্যমে এই টাকা সরকার মানুষের পকেট কেটে নেবে। বিএনপির অর্থনীতিবিষয়ক কোর কমিটির অন্যতম সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাজেটের টাকাটা আসবে কোথা থেকে? ঋণনির্ভর বাজেটের টাকা কে দেবে? জনগণকেই দিতে হবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে দিতে হবে, তেল ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে দিতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষকে এই টাকাটা দিতে হবে। বিএনপির অন্যতম এই নীতিনির্ধারক বলেন, ব্যাংকের টাকা যে লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে এটা বাজেট থেকে কমে যাচ্ছে। শেয়ার বাজার লুটপাটের টাকাও বাজেট থেকে কমে যাচ্ছে। বাজেট হল জনগণের। তারা যে ঋণ নিচ্ছে এটা তাদেরই পরিশোধ করতে হবে। কোনো না কোনো মাধ্যমে জনগণকেই পরিশোধ করতে হবে। আর কোনো পথ নেই এই ঘাটতি পূরণ করার। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে লোকজন ব্যাংকে টাকা রাখতে চাইছে না। তিনি বলেন, ঋণনির্ভর অর্থনীতি হওয়ার কারণে বাজেটের একটা বিশাল অংক সুদ আকারে পরিশোধ করতে হবে। যে টাকাটা স্বাস্থ্যখাত থেকে নেয়া হবে। শিক্ষাখাত থেকে নেয়া হবে। মানব সম্পদ উন্নয়ন ও বেকারত্ব নিরসনখাত থেকেই এসব টাকা নেয়া হবে। বাজেটে যতো ঋণনির্ভরতা বাড়বে ততোই নাগরিক সুযোগ সুবিধার উপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি কিছু সংখ্যক মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। তারা বাজেট প্রণয়ন করছে। তারা অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। আবার তারাই সরকার পরিচালনা করছে। নীতিমালা প্রণয়ন করছে। তাদের স্বার্থেই মূলত আজকের এই বাজেট। আজকে সামষ্টিক অর্থনীতি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যে বাজেট এক মিলিয়নের মধ্যে দেয়া সম্ভব সেটা তিন মিলিয়ন দেয়া হচ্ছে। ফলে যেসব সূচকের কথা বলা হচ্ছে, প্রবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে তার সঙ্গে বাংলাদেশের সূচক ও সার্ভের কোন মিল নেই। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ৫-৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সেটা অটো পাইলট। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন বাংলাদেশে গার্মেন্ট শিল্প স্থাপন করে গেছেন, বিদেশে শ্রমিক রপ্তানি ও কৃষকের উন্নয়নে যে উদ্যোগগুলো নিয়ে গেছেন তাতে অটো পাইলটে চলে। আর প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি আমরা তো রেখে এসেছি ১২ বছর আগে। তিনি বলেন, দেশের সম্পদ এক শতাংশ-দেড় শতাংশ লোকের কাছে ক্রমান্বয়ে সীমাবদ্ধ থাকছে। বাকি যে লোকজন তাদের রিয়েল আয় কমে যাচ্ছে। বেকারত্ব বেড়ে যাচ্ছে। যুব সমাজের একটি বিশাল শিক্ষিত একটি অংশ কর্মসংস্থানের বাইরে থেকে যাচ্ছে। বেসরকারি খাতে যখন বিনিয়োগ হবে না তখন তো বেকারত্ব বাড়বে এবং প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক প্রতিফলন ঘটবে।

No comments

Powered by Blogger.