সিপিডি’র সেমিনার: এক শ্রেণির মানুষের উন্নয়নে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে দেশের প্রতিটি জনপদের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন করতে হবে। শুধুমাত্র এক শ্রেণির মানুষের জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এজন্য সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে আয় বৈষম্য কমিয়ে আনা প্রয়োজন। গতকাল রাজধানীর গুলশানে ‘হোয়াট টাইপ অব ডেমক্রেটিক প্র্যাকটিস আর সুইটেবল ইন এসডিজি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান, সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ড. রিনি হলেনস্ট্রিন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান, ফাহমিদা খাতুন, গবেষণা পরিচালক  মোয়াজ্জেম হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুইস লেখক পিটার নিগিলি।
মূল প্রবন্ধে পিটার নিগিলি বলেন, এসডিজির মোট ১৭ অভীষ্টের মধ্যে প্রধান ৬টি বাস্তবায়নে ৬৮টি লক্ষ্য ও ৯৫টি সূচক বেঁধে দেয়া হলেও বেশ কিছু লক্ষ্য ও সূচকে অগ্রগতির তথ্য বাংলাদেশে নেই। তবে শিক্ষা, শোভন কর্ম, অসমতা, জলবায়ু, শান্তি ও ন্যায়বিচার এবং উন্নয়ন অংশিদারিত্ব সংক্রান্ত ছয় অভীষ্টের মাত্র ৩৮টি লক্ষ্য ও ৫০টি সূচকের অগ্রগতির সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে।
আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে হলে একটি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। উন্নয়ন যেন সর্বক্ষেত্রে হয় এবং দেশের প্রতিটি মানুষ যেন এ থেকে সুবিধা পেতে পারে। গত কয়েক বছরে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার হার ১৯৯৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩০ শতাংশ বেড়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নকালের তুলনায় এসডিজি সময়কালে শিক্ষার হার বেড়েছে। তবে শিক্ষা সমাপ্তি, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভূক্তি, স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ, প্রযুক্তি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করার মতো সূচকে আরও উন্নতি করতে হবে।
সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, যা কিছুই করি না কেন আমাদের পরিবেশের দিকেও নজর দিতে হবে। তা না হলে পরিবেশ আমাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ শুরু করবে। টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এটিও একটি অন্যতম দিক। কার্বন উৎপন্ন হয় এমন যানবাহন এবং কলকারখানায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি। রেহমান সোবহান বলেন, এসডিজি লক্ষ্য অর্জনের পথে আমরা বলছি, নোবডি লেফট বিহাইন্ড। সেফটিনেটের নানা প্রোগ্রামও সরকার পরিচালনা করছে। প্রান্তিকের সুবিধাবঞ্চিত নাগরিক বা ব্রাত্যজন যাদের বলা হচ্ছে, তাদের এই প্রোগ্রামের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি সব ধরনের উন্নয়নকাজে তাদেরও অংশীদার করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকরের বেশ কয়েকটি ভিশন ও মিশন রয়েছে। এর মধ্যে এসডিজি একটি। এমডিজির মতো আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজিও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আগামী বাজেটেও দেশের প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য বেশকিছু কর্মসূচি রাখা হয়েছে। এছাড়া সরকার আমার গ্রাম আমার শহর কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে শহরের মতো গ্রামের মানুষের সব ধরনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হবে। মানুষের আয় বৈষম্য যাতে কমে আসে সেজন্য কাজ করা হচ্ছে। পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সেবা দেয়া হচ্ছে। এ কারণে দ্রুত দেশে দারিদ্র্যতা হ্রাস পাচ্ছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, আমাদের সংসদে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় তাতে প্রান্তিক জনগণের উন্নয়নের কথা খুব কম। মাত্র তিন মিনিট হয় গরীব মানুষের কথা বাকি সবসময় জুড়ে অন্যান্য আলোচনায় ব্যস্ত থাকে সংসদ। বর্তমান সংসদ গরিব মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না।
সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যে কোন দেশের উন্নয়নের জন্য প্রত্যেকটি মানুষকে জাতীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। এছাড়া উন্নয়ন টেকসই হবে না। পাশাপাশি ধনী গরিবের বৈষম্য যেন বৃদ্ধি না পায় সেদিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।
এদিকে এসডিজির মোট ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা, ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং ২৩০টি ইন্ডিকেটর রয়েছে। ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার ছয়টি নিয়ে এ গবেষণা চালানো হয়। এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি মূল্যায়নে পর্যাপ্ত অর্থ ও তথ্য সংকটকে অন্যতম বাধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এসডিজি বাস্তবায়নেও সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থের সঙ্কট। আরেকটা সঙ্কট হলো তথ্যের অভাব।

No comments

Powered by Blogger.