যে দেশে মাত্র একজন ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পান

ভাগ্যবান আব্দেল-আধিম হাসান
তিন সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর সুদানে ইন্টারনেট সংযোগ ফিরলেও তা কেবল একজন ব্যক্তিকেই ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির একজন আইনজীবী - যিনি ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করতে পারা একমাত্র ব্যক্তিটি। সুদানের সেনা শাসকদের জারি করা এক নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে রোববার সুদানের টেলিকম অপারেটর ‘যাইন সুদান’ এর বিরুদ্ধে করা এক মামলায় জয় লাভ করেন আব্দেল-আধিম হাসান।
তবে ব্যক্তিগতভাবে মামলা করায় তাতে জয় লাভ করেও এর ফলে শুধু তার ব্যক্তিগত লাভই হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসান।
মধ্য খার্তুমে সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সরকারি নিরাপত্তা রক্ষীদের সহিংস অভিযানের পর সারাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়।
আইনজীবী হাসান জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনিই সুদানের একমাত্র বেসামরিক নাগরিক যিনি বৈধভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন।
তিনি জানান, সুদানের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য এ সপ্তাহের মধ্যে তিনি আবারও আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
হাসান বিবিসি’কে জানান: ‘ইন্টারনেট সেবাদানকারী সংস্থাগুলো সংযোগ বন্ধ করার নির্দেশ সম্বলিত কোনো লিখিত আদেশ দেখাতে পারেনি।’
‘সব পক্ষই দায়িত্ব এড়িয়ে চলতে চাইছে, কেউই কোনো সিদ্ধান্তের দায় নিচ্ছে না - এটি অপরাধ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন।’মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারীদের যেন দেশে প্রবেশ করতে দেয়া হয়, সেজন্য সোমবার সুদানের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে জাতিসংঘ।
বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে হওয়া ‘অত্যাচার’বন্ধ করার আহ্বানও জানানো হয় জাতিসংঘের পক্ষ থেকে।
সুদানে কী হয়েছে?
চানা কয়েকমাসের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আর গণবিক্ষোভের পর এপ্রিলে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হন দীর্ঘসময়ের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির।
১১ই এপ্রিল সেনাবাহিনীর জেনারেলদের একটি কাউন্সিল ক্ষমতা দখল করলেও দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরাতে সক্ষম হননি।
সাত সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সেনা কাউন্সিলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন লে. জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আবদেলরাহমান বুরহান। কাউন্সিল বলছে দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা চায় বেসামরিক সরকার।
৩রা জুন খার্তুমে বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস অভিযান পরিচালনা করার অভিযোগে আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দিত হয়েছে কাউন্সিল ।বিভিন্ন খবরের তথ্য অনুযায়ী, ঐ অভিযানে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়।
এরপর কী হতে পারে?
অধিকাংশ আফ্রিকান এবং পশ্চিমা দেশই সুদানের বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দিচ্ছে। এ মাসের শুরুতে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবিই আহমেদ সুদানে সফর করে বিক্ষোভকারীদের সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সেনা কাউন্সিলের সমঝোতা করানোর চেষ্টা করেন।
গত শনিবার ইথিওপিয়ার সমঝোতা প্রস্তাবে বিক্ষোভকারীরা রাজি হলেও রোববার কাউন্সিল সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। কাউন্সিলের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে ইথিওপিয়ার সমঝোতা প্রস্তাব একপাক্ষিক হওয়ায় তারা সেটি মানতে রাজি না।
বিবিসি'র একজন সুদানি সাংবাদিক মহানন্দ হাশিম বলেন যে সুদানের পরিস্থিতি খুব দ্রুতগতিতে খুবই খারাপ হতে পারে, এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.