রোহিঙ্গা ফেরতে চীনের হস্তক্ষেপ চাইবেন প্রধানমন্ত্রী: ৭ চুক্তির সম্ভাবনা by মিজানুর রহমান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যাসন্ন চীন সফরে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দেশটির একান্ত সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হবে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ এবং টেকসই সমাধান বিশেষ করে বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ মিয়ানমার নাগরিককে রাখাইনে তাদের বসতভিটায় ফেরানোর প্রক্রিয়া দ্রুততর করার বিষয়ে চীনের হস্তক্ষেপ চাইবে বাংলাদেশ। ঢাকা চায় মিয়ানমারের ওপর চীনের যে প্রভাব রয়েছে সেটা কাজে লাগিয়ে বন্ধু এবং উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে বাংলাদেশকে তারা এ সংকট উত্তরণে সহায়তা করুক। সরকার প্রধানের বেইজিং সফরে রোহিঙ্গা সংকটই মুখ্য আলোচ্য হবে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, সফরে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়টিও সমান গুরুত্ব পাবে। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সফরে দুই দেশের মধ্যকার সহযোগিতা জোরদারকরণে সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ মূল্যের ২৭টি চুক্তি-সমঝোতা এবং অঙ্গীকার সই হয়েছে। এসবের দ্রুত বাস্তবায়নে জোর দেয়া ছাড়াও নতুন করে আরও ৭টি চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের বিষয়ে আলোচনা হবে।
দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর ওই সব চুক্তি- সমঝোতা সইয়ের কথা রয়েছে। চুক্তিগুলোর মধ্যে ৩টি ডিপিডিসি সংক্রান্ত। ডিপিডিসি এলাকার বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং শক্তিশালীকরণে একটি ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট, এ সংক্রান্ত প্রজেক্টের পৃথক লোন এগ্রিমেন্ট এবং প্রফেশনাল বায়ার্স ক্রেডিট লোন এগ্রিমেন্ট।
চতুর্থ যে চুক্তিটি হবে সেটি হলো- দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক এবং টেকনিক্যাল কো-অপারেশন জোরদার সংক্রান্ত। পঞ্চমত: বিনিয়োগ সহযোগিতা বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক। ৬ষ্ঠ: ইয়ালো জাংবো বা ব্রম্মপূত্র নদের হাইড্রোলজিক্যাল ইনফোরমেশন শেয়ারিং সংক্রান্ত সমঝোতা এবং সর্বশেষ প্রস্তাবিত চুক্তিটি হচ্ছে- পরস্পরিক সংস্কৃতি বিনিময় সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী পাঁচ দিনের সরকারি সফরের আগামী ১লা জুলাই চীন যাচ্ছেন। সফরের সূচনাতে তিনি দেশটির দালিয়ানে (২-৩ জুলাই) বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিবেন। পরে তিনি বেইজিং যাবেন। সেখানে চীনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে বাসস জানিয়েছে, সফরকালে শেখ হাসিনা চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং-এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
২ জুলাই স্থানীয় সময় সকালে লিয়াওনিং প্রদেশের দালিয়ানে পৌছাবেন প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা শেষে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা সহকারে তাকে সাংগ্রিলা হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। দালিয়ান সফরকালে তিনি এ হোটেলেই অবস্থান করবেন। ওই দিন সকালে দালিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে অনুষ্ঠেয় ডব্লিউইএফ সামার দাভোস সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দিবেন তিনি। পরে অথনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লস শোয়াবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। বিকেলে দালিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে শোয়াবের দপ্তরে অনুষ্ঠেয় ‘কো-অপারেশন ইন দ্যা প্যাসিফিক রিম’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। ৩রা জুলাই তিনি চীন সরকারের সরবরাহকৃত একটি ভাড়া করা বিমানে বেইজিং পৌঁছাবেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে দিয়ায়োতাই স্টেট গেস্ট হাইজে নিয়ে যাওয়া হবে। চীনের রাজধানীতে সফরকালে তিনি ওই হোটেলেই অবস্থান করবেন। বিকেলে তিনি বেইজিংয়ের লিজেনডাল হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এক সংবর্ধনা ও নৈশভোজে যোগ দিবেন। ৪ঠা জুলাই সকালে তিনি গ্রেট হল অব দ্য পিপলে বীরদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন এবং গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত ভোজসভায় অংশ নিবেন। একই দিন বিকেলে সিসিপিআইটিতে চীনা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিজনেস রাউন্ডটেবিল বৈঠকে অংশ নিবেন।
৫ই জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রীর চাইনিজ থিংক ট্যাংক ‘পাঙ্গোয়াল ইনস্টিটিউশন’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্যক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। চীনের বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাগণ শেখ হাসিনার অবস্থানকালীন আবাসে তাঁর সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে এবং এনপিসি’র চেয়ারম্যান লি ঝাংশুর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একটি বৈঠক হবে। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দিয়াওইয়ুতাই রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায় বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী একই স্থানে চীনা প্রেসিডেন্ট আয়োজিত ভোজ সভায়ও অংশ নেবেন। চীন সফর শেষে ৬ জুলাই দেশে ফিরবেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.