নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের হুমকি: সেই ছাত্রলীগ নেতা আটকের দুই ঘণ্টা পর মুক্ত by ওয়েছ খছরু

গ্রেপ্তারের আগেই জামিন নেন ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার হোসেন চৌধুরী। দুপুরে আদালত থেকে জামিন নিয়ে যখন বের হন তখনই বন্দরবাজার এলাকা থেকে সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় সরোয়ার জামিন নেয়ার কথা বললেও পুলিশ তার কথা বিশ্বাস করেনি। কিন্তু  থানায় নেয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে সারোয়ারের পক্ষে আইনজীবীরা জামিনের কাগজপত্র নিয়ে থানায় যান। সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি সেলিম মিয়া জামিনের কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে ছেড়ে দেন। বিকালে ওসি সেলিম মিয়া মানবজমিনকে জানান, তার নেতৃত্বে গ্রেপ্তারের সময় সারোরয়ার জামিন নিয়েছে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু কাগজপত্র প্রদর্শন না করায় তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শেষে যখন তার আইনজীবীরা সিলেটের অতিরিক্ত চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জামিনের কাগজপত্র প্রদর্শন করেন তখন তাকে মুক্তি দেয়া হয়। এদিকে, ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার হোসেন চৌধুরী এখন সিলেটে বহুল আলোচিত একটি নাম। কারণ তিনি এক মহিলা ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। তার হুমকির বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার সিলেটের উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ঘটনার পর থেকে আন্দোলনে রয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। প্রথম দিন থেকেই কর্ম বিরতি, অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কার্যকর ভূমিকা রাখা হয়নি। এদিকে, ঘটনার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার কারণে গা ঢাকা দিয়েছিল সারোয়ার। সে সিলেট নগরীর টিলাগড় গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মী। দক্ষিণ সুরমা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। নগরীর নয়াসড়ক এলাকায় তার আধিপত্য। নয়াসড়কের পাশেই সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। বৃহস্পতিবার ইফতারের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে সারোয়ারের এক বন্ধুর পেটে ব্যথা হলে তাকে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তাররা খোশগল্পে মেতে থেকে চিকিৎসায় বিলম্ব ঘটালে ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তিনি ইন্টার্ন ডাক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করা হয়। এই ঘটনার পর থেকে ক্ষুব্ধ সিলেটের ইন্টার্ন ডাক্তাররা। সোমবার ইন্টার্ন ডাক্তাররা জরুরি প্রেস ব্রিফিং করে ঘটনার বিচার দাবি করেন। একই সঙ্গে তারা আন্দোলনে নামার ঘোষণা করেন। ইন্টার্ন ডাক্তারদের নেতা ডা. ইফাত আরা চৌধুরী আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর আগে তারা কর্মবিরতি পালন করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভূমিকা রাখা হয়নি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ না এলে কিছুই করার ছিল না। ঘটনার চার দিন পর সোমবার এ ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফেরদৌস হাসান থানায় মামলা করেন। মামলার পর থেকে পুলিশ সারোয়ারকে খুঁজলেও পায়নি। পরবর্তীতে গতকাল সকালে সারোয়ার আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন। দুপুর ১টার দিকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলেও পরে ছেড়ে দিয়েছে। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুছা জানিয়েছেন, জামিন হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জিডি ও মামলা দায়েরের পর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালায়। বেলা ৩টার দিকে কোতোয়ালি থানা হাজত থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের কাছে সারোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ক্রিটিক্যাল রোগী নিয়ে আমরা যাই। গিয়ে রোগী দেখার অনুরোধ করলেও প্রায় ২০ মিনিট ডাক্তার আসেনি। পরে আমি যখন আমার পরিচয় দিয়ে ডাক্তারদের সহযোগিতা কামনা করি তখনই তারা আমার নেত্রী ও দেশরত্ম শেখ হাসিনাকে নিয়েও মন্তব্য করেন। এতে আমি রেগে তাদের ধমকিয়েছি। আর কিছুই করিনি। বিষয়টিকে ঘোলাটে করে তুলতে এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।’ এ সময় তিনিও বলেন, সকালে সিলেটের আদালতে হাজির হয়ে তিনি জামিন নিয়েছেন। এদিকে, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার হোসেন চৌধুরীর হাতে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নিরাপত্তা প্রহরী ও লিফটম্যান লাঞ্ছনার ঘটনায় ইন্টার্ন ডাক্তাররা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। গতকাল বেলা ১২টায় উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন ডাক্তাররা সিলেট চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এ ছাড়াও ইন্টার্ন ডাক্তাররা তারা তাদের কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন। মানববন্ধন কর্মসূচিতে ইন্টার্ন ডাক্তাররা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সারোয়ার হোসেন চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দেন। মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন- ডা. নিজাম আহমদ চৌধুরী, ডা. হিমাংশু শেখর দাস, ডা. মাহবুব, ডা. দ্বীপ, ডা. সজীব, ডা. জাবের, ডা. ইশফাক জামান সজীব, ডা. জাবেদ আহমদ, ডা. রিপন, ডা. তিতাশ কুমার, ডা. সোলেমান বাবু, ডা. আফজাল, ডা. সুশান্ত, ডা. সাব্বির আহমদ, ডা. হরশিত বিশ্বাস, ডা. প্রবাল, ডা. হৃদয়। গতকাল বিকালে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঘটনার বিচারের দাবিতে তারা আন্দোলনে থাকবেন। এ ঘটনা চিকিৎসক সমাজকে নাড়া দিয়েছে বলে জানান তারা।

No comments

Powered by Blogger.