এখন আপনাদের ন্যায়বিচার কোথায়: সৌদি আরবের প্রতি এরদোগানের প্রশ্ন

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান সৌদি সরকারের সমালোচক খ্যাতনামা সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে রিয়াদের নীরবতার তীব্র সমালোচনা করে দেশটির কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, এখন আপনাদের ন্যায়বিচার কোথায়?
ইস্তাম্বুলে এক ইফতার পার্টিতে তিনি এ কথা বলেছেন। এরদোগান আরো বলেন, খাশোগিকে হত্যার জন্য যেসব খুনিকে ইস্তাম্বুলে পাঠানো হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে সৌদি সরকার এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ ইস্যুতে তিনি পাশ্চাত্যের সরকারগুলোর সমালোচনা করে বলেন, পাশ্চাত্যের কাছে মানবিক মূল্যবোধের চাইতে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ প্রাধান্য পাচ্ছে।
তুরস্ক সরকার সেদেশের মাটিতে ইস্তাম্বুলে সৌদি সাংবাদিকের হত্যার বিচার করতে ব্যর্থ হওযার পর এর পেছনে সৌদি সরকারের হাত থাকা এবং এর প্রতি পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশের সমর্থনের বিষয়টি তুলে ধরার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে সৌদি সরকার প্রথমে খাশোগি হত্যায় তাদের হাত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছিল। কিন্তু তুরস্ক সরকার ১৮ দিন নীরব থাকার পর এ ঘটনার সাথে সৌদি কর্মকর্তাদের সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়ে নানা তথ্যপ্রমাণ ফাঁস করে দেয়ায় এবং আন্তর্জাতিক ব্যাপক চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত রিয়াদ কর্তৃপক্ষ গত বছরের ১৯ অক্টোবর ‌ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে খাশোগিকে হত্যার কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়।
প্রকৃতপক্ষে, সৌদি নীতির সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে গ্রেফতারের জন্য সরকার বহুদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছিল এবং তাকে ব্ল্যাক লিস্টে রাখা হয়েছিল। রিয়াদ সরকারের বিরোধী অনেকের মতো জামাল খাশোগিও সবসময় গ্রেফতার ও হত্যার আতঙ্কে থাকতেন। এ কারণে তিনি সৌদি আরবের বাইরে জীবন যাপন করতেন। একদিকে, সৌদি সরকার জামাল খাশোগি হত্যার ঘটনাকে গুরুত্বহীন হিসেবে তুলে ধরে ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছে অন্যদিকে আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের সরকারগুলো এ ব্যাপারে নীরব থেকে প্রমাণ করেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।
সৌদি আরবের মানবাধিকার কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাজাভি আল রাশিদ বলেছেন, সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার না করার অর্থ সৌদি সরকার বিরোধীদেরকে সতর্ক করে দেয়া। তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দেয়া এক ভাষণে বলেছেন, সৌদি সরকার বিরোধীরা যাতে সবসময় আতঙ্কে থাকে সেজন্যই খাশোগি হত্যাকারীদের বিচার করা হয়নি।
জামাল খাশোগি হত্যার ঘটনায় পাশ্চাত্যের সরকারসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখালেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন পর্যন্ত ওই হত্যার নিন্দা পর্যন্ত জানাননি। সৌদি আরবের সঙ্গে করা কোটি কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি টিকিয়ে রাখার জন্যই তিনি নিন্দা জানানো থেকে বিরত থাকেন। এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ২০ নভেম্বর বলেন, "আমেরিকা সৌদি আরবের সহযোগী হিসেবে টিকে থাকবে এমনকি দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও যদি খাশোগি হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হয়ে থাকেন তবুও।"
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এ ধরণের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, মানবাধিকার বিষয়টিকে তিনি কেবল শত্রু ভাবাপন্ন দেশগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন।

No comments

Powered by Blogger.