দুর্ঘটনায় স্বপ্ন ভেঙে চুরমার, পা হারিয়ে দিশাহারা ফাহিম

পা হারিয়ে দিশাহারা সিলেটের যুবক ফাহিম আহমদ। এমন ঘটনা তার জীবনে ঘটবে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি। একটি দুর্ঘটনা তার জীবনকে পাল্টে দিয়েছে। এখন তাকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাটাতে হচ্ছে দুঃস্বপ্নের সময়। আর ছেলের এই অবস্থায় পরিবারে নেমে এসেছে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। পিতৃহারা ছেলের এই দুর্দশায় চিন্তিত মা  সাহেদা সুলতানাও। ফাহিম আহমদ সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ হাতিমবাগ ২৪-এ নং বাসার বাসিন্দা। পিতা মরহুম সৈয়দ আব্দুল মালিক।
ফাহিম আহমদ জানিয়েছেন, গত ৬ই মে মধ্যরাতে দুই বন্ধু শুভ ও সুইটকে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে কানাইঘাটের সুরইঘাট থেকে নগরীতে ফিরছিলেন তিনি। দরবস্ত বাজারে আসার আগে রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখে রাস্তার টার্নিংয়ে ট্রলি গাড়ির (কুত্তা গাড়ি) সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় মোটরসাইকেলের। এ সময় চালকের আসনে থাকা ফাহিমসহ তার অপর দুই বন্ধু গুরুতর আহত হয়। রাতে স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। প্রথমে জরুরি বিভাগে এবং পরে তাদের হাসপাতালের তৃতীয় তলার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৯ নম্বর বেডে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, ফাহিমের ডান পায়ে পচন ধরেছে। দ্রুত তার ওই পা কেটে না ফেললে শরীরেও এই পচন ছড়িয়ে পড়তে পারে। ডাক্তারদের এই কথা শুনে আরো কাতর হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। পরে সিদ্ধান্ত নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সার্জারির মাধ্যমে ফাহিমের ডান পা কেটে ফেলা হয়। এখন ফাহিম তৃতীয় তলার ১০ ওয়ার্ডের ২৩ নম্বর কেবিনে চিৎিসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত ফাহিমের বন্ধু শুভ ও সুইট সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। এদিকে, এ ঘটনার পর ফাহিমের ছোট ভাই সাঈম আহমদ সোমবার সিলেটের কানাইঘাট থানায় এজাহার দাখিল করেন। তার এজাহারের প্রেক্ষিতে থানায় ট্রলি গাড়ির মালিক কামরুল ইসলামকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। কামরুল ইসলামের বাড়ি কানাইঘাটের ভিত্রিখেল গ্রামে। সিলেটের কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন, বাদী সাঈমের এজাহারের ভিত্তিতে বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। পা হারানো ফাহিম আহমদ পেশায় মোটরসাইকেল ইঞ্জিনিয়ার। কানাইঘাটের সুরইঘাট বাজারে তার বন্ধু সুইটের মালিকানাধীন সুইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কাজ করতেন। রাতে বন্ধুর সঙ্গে সিলেট শহরে তার নিজের বাসায় ফেরেন। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে ফাহিম তৃতীয়। তার ছোট আরেক ভাই রয়েছে।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ফাহিমের এই অবস্থায় গোটা পরিবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মা সাহেদা সুলতানা ছেলের এই অবস্থায় চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, পা হারানো ফাহিমের পায়ে মঙ্গলবার (গতকাল) ফের অপারেশন করা হয়েছে। দুপুরে হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার পায়ে অপারেশন করেন। এর বাইরেও তার বুকের ডান পাশের হাড়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি তার শরীরের আরো কয়েকটি অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবারের বড় ছেলে ফাহিম আহমদকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল পরিবারের। মায়ের আদরের সন্তান সে। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় একটি জীবনের পাশাপাশি একটি পরিবারের স্বপ্নও চুরমার হয়ে গেছে। এখন কেবল প্রার্থনা ফাহিমের জীবন। তবুও যেন দ্রুত সুস্থ হয় ফাহিম এমন কামনা মা সাহেদা সুলতানার।

No comments

Powered by Blogger.