আসমা আজিজ ও পাকিস্তানে নারীদের অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ

স্বামী ও তার বন্ধুদের মনোরঞ্জনের জন্য নাচতে অস্বীকৃতি জানানোয় পুরো মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়েছে আসমা আজিজ নামে এক নারীর। শুধু তাই নয়। তাকে প্রহারও করা হয়েছে। ফলে পাকিস্তানে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
আসমা আজিজ লাহোরের বাসিন্দা। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন তিনি। তাতে দেখা যায় তার মাথার চুল কামানো। মুখমন্ডলে প্রহারের চিহ্ন।
এ নিয়ে সংবাদ শিরোনাম হন তিনি। আসমা আজিকের স্বামী মিয়া ফয়সাল ও একজন গৃহভৃত্য বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে। আসমাকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তার স্বামী ফয়সাল। ঘটনা যা-ই হোক, এর ফলে গৃহ নির্যাতন থেকে নারীদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য আরো অনেক বেশি করার ডাক উঠেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছেন, এ জন্য প্রয়োজন সিস্টেমিক পরিবর্তন।
আসমা আজিজ তার ভিডিও পোস্ট করেন ২৬ শে মার্চ। এতে তাকে আবেগতাড়িত দেখা যায়। তিনি অভিযোগ করেন, দু’দিন আগে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। এর কারণ, তিনি তার স্বামী ও তার বন্ধুদের সামনে নাচতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। লাহোরে ডিফেন্স হাউজিং অথরিটি এলাকায় তাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন ওইসব অতিথি।
আসমা আজিজ তার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগে বলেছেন, সে তার চাকরের সামনে আমার পোশাক টেনে খুলে নিয়েছিল। তারপর তার চাকর আমাকে চেপে ধরে রাখে ও আমার স্বামী আমার চুল কেটে দিয়ে তা পুড়িয়ে ফেলে। আমার পোশাক রক্তে ভিজে যায়। আমাকে বেঁধে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল। সে হুমকি দিয়েছিল, আমাকে নগ্ন করে ঝুলিয়ে দেবে।
আসমা বলেন, অভিযোগ নিয়ে তিনি পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা অভিযোগ গ্রহণ করতে গড়িমসি করে। তার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে পুলিশ। তিনি পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার পর পর একটি টিম পাঠানো হয় আসমার বাসভবনে। তারা দেখতে পায় বাসাটি তালাবদ্ধ। ওই আবাসিক এলাকার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ভবন চত্বরে প্রবেশে বাধা দিচ্ছিল তাদের। তবে উপ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেজেরিয়ার আফ্রিদির একটি নোটিশের পরই পুলিশ সক্রিয় হয়। ওই মন্ত্রী পুলিশকে অভিযোগ নিবন্ধন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
মিয়া ফয়সাল ও তার ভৃত্য রশিদ আলীকে পরের দিন গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক মেডিকেল রিপোর্টে আসমার শরীরে প্রহারের বেশ কিছু চিহ্ন পাওয়া যায়। তার বাহুতে, চিবুকে ও বাম চোখের চারপাশে অনেক স্থানে ফুলে ছিল। লাল হয়ে ছিল।
পরে আসমা আজিজের আইনজীবী এই মামলাটিকে প্রচলিত ফৌজদারি প্রক্রিয়ার পরিবর্তে কঠোর সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে বিচার করার আর্তি জানিয়েছেন। ওই আইনজীবী বুধবার লাহোর পুলিশের কাছে যেসব কাগজপত্র জমা দিয়েছেন তাতে তিনি যুক্তি দিয়েছেন, এই ঘটনা সমাজে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ওদিকে গত সপ্তাহে পুলিশের কাছে মিয়া ফয়সাল বলেছেন, মাদক ব্যবহারের জন্য তার স্ত্রী আগেই চুল কাটা শুরু করেছিলেন। তিনি নিজেও মাদক ব্যবহার করতেন।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা পাকিস্তানে গৃহে সহিংসতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এর মধ্যে রয়েছেন অভিনেত্রী ও গায়িকা সনম সাঈদ। উল্লেখ্য, পাকিস্তানে নারীদের অধিকার একটি বিতর্কের বিষয় বহু বছর ধরে। জাতিসংঘের ২০১৬ সালের লিঙ্গ সমতা সূচকে ১৮৮টি দেশের মধ্যে পাকিস্তানের অবস্থান ১৪৭তম। এর কারণ, সেখানে নারীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক অবস্থানের রেকর্ড বেশ নাজুক।
নারী ও বালিকাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা একটি অত্যন্ত গুরুতর ইস্যু। অধিকারকর্মীরা বলছেন, সরকারি হিসাবে এসব কথা বলা হয় না। অনেক ঘটনার রিপোর্ট হয় না। গত মাসে নারী দিবসের র‌্যালি থেকে কিছু রক্ষণশীল গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। ওই র‌্যালির আয়োজকদের অনেককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.