হেলিকপ্টার আগুন নেভাতে কতটা কার্যকর? by রুদ্র মিজান

একের পর এক ঘটছে অগ্নিকাণ্ড। ঘটছে প্রাণহানি। বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুননির্বাপণে ব্যবহার করা হয় হেলিকপ্টার। ঘটনাস্থলে পানিভরা ‘বাম্ভি বাকেট’ নিয়ে উড়তে দেখা যায় হেলিকপ্টারকে। আগুন নেভাতে পানি ঢালা হয়। কখনো ভবনের ছাদ থেকে আটকে পড়াদের উদ্ধার করা হয় হেলিকপ্টারের মাধ্যমে। তবে ভবনে অগ্নিনির্বাপণে হেলিকপ্টার কতটা কার্যকর তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, হেলিকপ্টার আগুন নির্বাপণের চেয়ে আগুন ছড়াতে সহায়তা করে।
তবে উদ্ধারে এর সহায়তা নেয়া যেতে পারে ক্ষেত্রবিশেষে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের মধ্যে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিচ্ছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ওই চিঠিতে অগ্নিকাণ্ডে হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, হেলিকপ্টারের পাখা থেকে ঘণ্টায় ৬৯ থেকে ১১৫ মাইল বেগে বাতাস ছড়ায়। তীব্র বাতাসে আগুন নেভার পরিবর্তে ছড়িয়ে যায়। এতে আশপাশে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। হেলিকপ্টারে উৎপন্ন বাতাসে উদ্ধার কাজে বিঘ্ন ঘটে। এমনকি উদ্ধার কাজে ব্যবহৃত লেডারের এঙ্গেল পরিবর্তন হয়ে উল্টে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া লেডার লক হয়ে যেতে পারে। ফায়ার সার্ভিসের ওই চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষেপ করা পানি যথাযথ স্থানে পড়ে না। ফলে ওই পানিও আগুন নেভাতে তেমন কোনো কাজে আসে না। তবে উদ্ধার কাজে হেলিকপ্টার ব্যবহারের প্রয়োজন হলে তা ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সমন্বয় করে করার অনুরোধ জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)’র লে. কর্নেল জায়েদ ইবনে আব্দুল্লাহ বলেন, বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে আগুন নেভাতে ও উদ্ধার কাজে বিমান বাহিনীর পাঁচটি হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়। সেখানে উদ্ধার করার মতো সুযোগ ছিল না, তবু একজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। হেলিকপ্টারের অভিযান সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমে ছোট হেলিকপ্টারে রেকি করা হয়। ঘটনাস্থলে হেলিকপ্টার ব্যবহার করলে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা যাবে- এরকম নিশ্চিত হয়েই অভিযান শুরু করা হয়। বনানীর অগ্নিকাণ্ডেও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েই হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয় বলে জানান তিনি।
আগুন নিয়ন্ত্রণে হেলিকপ্টারের ব্যবহার প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক আলী আহমেদ খান মানবজমিনকে বলেন, সাধারণত এসব অগ্নিকাণ্ডে হেলিকপ্টারের প্রয়োজন নেই। হেলিকপ্টারে প্রবল বাতাস সৃষ্টি হয়। এতে আগুনের তীব্রতা বেড়ে যায়। তখন আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে সমস্যা হয়। অগ্নিনির্বাপণে সমন্বয় করে কাজ করলে এসব সমস্যা হবে না বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়াও আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের আরো লেডার প্রয়োজন। একইভাবে প্রতিটি ভবনে পর্যাপ্ত পানি জরুরি এক্সিট ব্যবস্থা রাখা আবশ্যক বলে মনে করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.