উন্নয়ন পরিকল্পনায় মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বানঃ আইইবি’র কনভেনশন উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর

উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হতে প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে জলবায়ু,  ভৌগলিক অবস্থান, আমাদের মাটি-পানি সব কিছুর কথা  ভেবে সব পরিকল্পনা নিতে হবে। খুব মিতব্যয়ী হয়ে, স্বল্প খরচে সর্বোচ্চ উন্নতি যাতে করা যায় সেই কথা সব সময় চিন্তা করতে হবে। গতকাল বিকালে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) এর ৫৯তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের  দেশের মাটি অত্যন্ত নরম মাটি। আমাদের দেশে একটি রাস্তা তৈরি করতে গেলে, একটি স্থাপনা তৈরি করতে  গেলে- অন্য দেশে যেখানে হয়তো মাটি শক্ত, তাদের যে খরচ হয় আমাদের অনেক বেশি খরচ হয়।
গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষণার মধ্যে দিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে আমাদের দেশের মাটি, মানুষ, জলবায়ু, আবহাওয়া সব কিছুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কীভাবে আমরা উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে পারি সে বিষয়ে আমাদের নিজেদেরই কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে গবেষণা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা নতুন দরজা আমাদের সামনে খুলে দিতে পারে। আমাদের অনেক ক্ষেত্রে নিজেরা কাজ করতে পারছি।
উদ্ভাবনী শক্তি বাড়ছে। কাজেই গবেষণাটা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই আমরা কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করি এটা মাথায় রাখতে হবে যে আমাদের ভূ-খণ্ড খুব সীমিত। লোক সংখ্যা বিশাল। সীমিত ভূমিতে ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে, পুষ্টি নিরাপত্তা দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবনমানও উন্নত করতে হবে। এগিয়ে চলা বিশ্ব প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ কিভাবে আরো উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারে সেই উপায় উদ্ভাবনে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুরসহ জলাধারগুলো রক্ষা করার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, মহাসড়কগুলোতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার পাশে জলাধার থাকা প্রয়োজন। বৃষ্টির পানি যেন জমে না থাকে আবার সেখানে মাছও চাষ হতে পারে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আইইবির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ, আইইবির ঢাকা সেন্টারের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ওয়ালিউল্লাহ সিকদার।
প্রতিটি মহাসড়কের পাশে আলাদা সার্ভিস রোড করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার নির্দেশ ছিল, এটা আমরা করতে শুরু করেছি। মহাসড়ক হবে তার পাশে আলাদাভাবে সার্ভিস রোড করা। যাতে স্থানীয় যোগাযোগ ও স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য আলাদা রাস্তা করে দেয়া। তাতে দুর্ঘটনাও কমবে, যাতায়াতও দ্রুত হবে। স্থানীয় মানুষের যাতায়াতও সহজ হবে। যততত্র সড়ক না করে পরিকল্পিতভাবে করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সারা দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নয়নে মহাসড়কের উন্নয়ন, সারা দেশে রেল নেটওয়ার্ক নিয়ে যেতে সরকারের উদ্যোগ, বুলেট ট্রেন চালুর পরিকল্পনা, নৌপথগুলোকে সচল করতে ড্রেজিংসহ বিভিন্ন উদ্যোগসহ সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন সারাবিশ্বে দৃশ্যমান। তবে অনেকেই বিস্মৃত হয়ে থাকেন যে এত অল্প সময়ে কীভাবে আমরা বাংলাদেশকে এতটা উন্নত করতে পারলাম। এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য একটাই ছিল- এর জন্য কোনোকিছু লাগে না। একটা জিনিসেই আমরা মনে করি যে একটা রাজনৈতিক কমিটমেন্ট থাকতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও তাদের প্রতি ভালোবাসা, তাদের জীবনমান উন্নত করার যে পরিকল্পনা বিশেষ করে মানুষের কাছে দেয়া আমাদের ওয়াদা রক্ষা করা- সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি।

No comments

Powered by Blogger.