সৌদি যুবতীকে নিয়ে থাইল্যান্ডে তুলকালাম কান্ড

থাইল্যান্ডে আশ্রয় চাওয়া সৌদি আরবের যুবতী রাহাফ মোহাম্মদ আল কুনুনকে নিয়ে চলছে তুলকালাম কান্ড। তিনি জীবন বাঁচাতে আশ্রয় চেয়েছেন থাইল্যান্ডে। কিন্তু থাইল্যান্ড চায় তাকে ফেরত পাঠাতে। এ নিয়ে গলদঘর্ম থাইল্যান্ডের ইমিগ্রেশন বিভাগ। শেষ পর্যন্ত এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সি ইউএনএইচসিআর। তারা জানিয়েছে কুনুন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
কুনুন কুয়েত থেকে বিমানযোগে থাইল্যান্ডে অবতরণ করেন এবং সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরের একটি হোটেলে অবস্থান করছেন। তার দাবি, পরিবার তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে।
এ জন্য তিনি থাইল্যান্ডে আশ্রয় চান। সোমবার তাকে কুয়েতগামী বিমানে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই তিনি হোটেলকক্ষে নিজেকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। বিপদে পড়ে থাই কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি আন্তর্জাতিক শিরোনামে পরিণত হয়। বাতিল হয়ে যায় কুনুনকে কুয়েতে ফেরত পাঠানো। এখন তাকে আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সি মঙ্গলবার বলেছে, এমন আশ্রয়ের বিষয়টিতে সমাধানে আসতে কয়েকদিন সময় লেগে যেতে পারে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
রাহাফ মোহাম্মদ আল কুনুনের বয়স ১৮ বছর। তিনি বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ায় তার আশ্রয় চাওয়ার পরিকলনা ছিল। কারণ, তাকে যদি থাই ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ফেরত পাঠায় তাহলে তাকে হত্যা করা হতে পারে। কিন্তু প্রথম দফায় থাই কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়ে দেয় তাকে সৌদি আরবে ফেরত পাঠানো হবে। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্যুতবেগে ছড়িয়ে পড়ে। টুইটারে টুইট দেয়া হয়। বলা হয়, তিনি কিভাবে হোটেলকক্ষে নিজেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। এর ফলে থাই কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যপদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়। তারা জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের (ইউএনএইচসিআর) অধীনে তাকে সোমবার বিমানবন্দর ত্যাগ করতে অনুমতি দেয়। এরপর থাই কর্তৃপক্ষ কুনুনকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেশে ফেরত পাঠায় নি বলে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে ইউএনএইচসিআর। থাইল্যান্ডে ইউএনএইচসিআর এর প্রতিনিধি গসেপি ডি ভিসেনটিস বলেছেন, পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।
উল্লেখ্য, শরণার্থীদের স্বাগত জানাতে বা তাদেরকে আশ্রয় দেয়ার জন্য জাতিসংঘের কোনো কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ নয় থাইল্যান্ড। তাই সেখানে যারা এমন আবেদন করেন তাদেরকে হয়তো তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হয়, অথবা তাদেরকে তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসন করা হয়। তবে দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বেশ কয়েক বছর সময় লেগে যায়।
ওদিকে ইউএনএইচসিআর মনে করে, কেউ আশ্রয় প্রার্থনা করলে তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার দেশে ফেরত পাঠানো উচিত নয়। এ বিষয়ে সৌদি আরবের দূতাবাস তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করে নি। তবে টুইটারে তারা একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে। তাতে কুনুনের সঙ্গে সাক্ষাত করতে সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে কোনো কর্মকর্তাকে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তারা। ওদিকে সৌদি আরব সরকারের মালিকানাধীন একটি টিভি চ্যানেলের এক কর্মকর্তা বলেছেন, কুনুনকে দেশে ফিরিয়ে নিতে দূতাবাসের সহায়তা চেয়ে যোগাযোগ করেছেন তার পিতা।
কুনুন বলেছেন, যদি তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয় তাহলে তাকে বন্দি করা হবে না হয় হত্যা করা হবে। কারণ, তিনি শুধু চুল কাটানোর কারণে ৬ মাস তাকে একটি রুমের মধ্যে একবার তালাবন্দি করে রেখেছিল তার পরিবার। ওদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হ্যাশট্যাগ #সেভ রাহাফ সেনসেশনে পরিণত হয়েছে। সেখানে রাহাফ সরাসরি আপডেট দিচ্ছেন। ব্যাংকক বিমানবন্দরের ভিডিও আপডেট দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে তিনি ব্যবহার করছেন আরবি ও ইংরেজি দুই ভাষা। এরই মধ্যে তার এই হ্যাশট্যাগ অনুসরণ করছে ৮০ হাজারের বেশি মানুষ।
সোমবার তার টুইট একাউন্টে বলা হয়, ব্যাংকক পৌঁছেছেন তার পিতা। তবে এ খবরের সত্যতা নিরূপণ করা যায় নি।

No comments

Powered by Blogger.