স্কুল থেকে বাড়ি ফেরা হলো না ভাইবোনেরঃ ট্রাক কেড়ে নিলো প্রাণ

প্রতিদিনের মতোই দুই সন্তানকে মোটরসাইকেলে নিয়ে বের হয়েছিলেন সামসুদ্দিন ডালিম। সন্তানরাও বাবাকে জড়িয়ে ধরে বসেছিল। কিন্তু নিমিষেই সব মিইয়ে গেছে। ট্রাক চাপায় নিহত হয়ে তারা এখন না ফেরার দেশে। গুরুতর আহত হয়েছেন সামসুদ্দিন ডালিম। নিহত সন্তানদের মরদেহ উদ্ধার করে নেয়া হয়েছে মর্গে আর বাবাকে নেয়া হয়েছে হাসপাতালে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বেলা ১১টায়। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের দক্ষিণ  কেরানীগঞ্জের মোল্লারপুল এলাকায়।
ট্রাক  চাপায় নিহত সন্তানদের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি বাবা। নিহত ওই দুইশিশু সম্পর্কে ভাই-বোন। তাদের মধ্যে আফসার হোসেন কেরানীগঞ্জের কসমো মেট্রোপলিটন স্কুল এন্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণি আর ফাতিমা আফরিন একই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির শ্রেণিতে লেখাপড়া করত। মোটরসাইকেলচালক বাবা সামসুদ্দিন  ডালিমকে গুরতর অবস্থায়  ভর্তি করা হয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

এদিকে দুই শিশু শিক্ষার্থী নিহতের খবরে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করে কসমো  মেট্রোপলিটন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঘটনার প্রতিবাদে ওই স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ৪০ মিনিট অবরোধ করে রাখে। এতে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে পুলিশের আশ্বাসে  শিক্ষার্থীরা  তাদের অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,  বেলা সোয়া ১১টার দিকে বাবা সামসুদ্দিন ডালিম স্কুলপড়ুয়া দুইসন্তানকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় প্রিয়াঙ্গন আবাসিক প্রকল্পের  গেটের সামনে মালবোঝাই একটি বেপরোয়া গতির ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে পিষ্ট হয়ে আফসার (১০) ও আফরিন (১৩) নামে দুই ভাই-বোন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহজামান জানান, আমরা ট্রাকটির চালক ও হেলপারকে আটক করার চেষ্টা করছি। অন্যদিকে আবদুল্লাপুর-ধলেশ্বরী সেতুর কাছে রডভর্তি ট্রাকটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আটক করা হয়।
শুধু দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে নয়, পুরো রাজধানী গতকাল পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আরো চারজনে। রাজধানীর খিলক্ষেত তিনশ’ ফুট রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় বুলবুল হোসেন (২২) নামে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন, সাগর (২০) ও কামরুল (২২) নামে দুই যাত্রী।  রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, খবর পেয়ে সিএনজি’র নিচ থেকে তিনজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে বুলবুলকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করা হয়। আহত দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ডেন্টাল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
খিলক্ষেত থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. শাহজাহান কবির জানান, রাতে তিনশ’ ফিট রাস্তায় একটি সিএনজি দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে থাকতে দেখে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ। তিনি  জানান, কিভাবে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। জানার চেষ্টা চলছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত ববুলবুল হোসেনের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মওগাপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম রজব আলী।
অন্যদিকে একই দিন রাত পৌনে ১টার দিকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় দুই পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন, ডালিম (২০) ও মোবারক (২৭)। তাদের মরদেহ পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
জানা যায়, তাদের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায়। তাদের কাছে থাকা মোবাইল ও মানিব্যাগ থেকে কিছু কাগজপত্র দেখে তাদের নাম পাওয়া গেছে। তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। নিহতদের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বিমানবন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শ্রীধান চন্দ্র রায় ঘটনাস্থল থেকে  জানান, বিমানবন্দর ইন গেটের মুখে একটি ট্রাক নিযয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতে উঠিয়ে দেয়। এতে ফুটপাতে থাকা দুই পথচারীর ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়। বিস্তারিত ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ট্রাকটি জব্দ করার পাশাপাশি তার চালক ও হেলপারকে আটক করা হয়েছে।
সোমবার শ্যামপুর এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় আক্কাছ আলী (৫৫) নামে ট্রাকের এক হেলপারের মৃত্যু হয়েছে। ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, দুপুরে শ্যামপুর জুরাইন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পথচারীরা ওই হেলপারকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিকাল ৩টার দিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রয়েছে।
ময়মনসিংহে ট্রাকচালক ও সহকারী নিহত
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় বাসের সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক ট্রাকচালক ও তার সহকারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নারী-পুরুষসহ আরো অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার সকালে ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন- ট্রাকচালক আলামিন (২৪) ও তার সহকারী হাফিজুর রহমান (২২)। আহতরা সবাই ভালুকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান জানান, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী একটি ট্রাক সকালে ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় ইউটার্ন নিতে গেলে ভালুকাগামী পোশাক শ্রমিকবাহী একটি বাসকে ধাক্কা দিলে সেটি উল্টে যায়। এ সময় ময়মনসিংহগামী আরেকটি মিনি ট্রাক পেছন থেকে ওই ট্রাকটিকে ধাক্কা দিলে খাদে পড়ে যায়।
লালপুরে বাসচাপায় গুড় ব্যবসায়ী নিহত
নাটোরের লালপুরের লক্ষ্মীপুরে বাসচাপায় আজিজুর রহমান ভেগল নামে এক গুড় ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। সোমবার সকালে লালপুর-ঈশ্বরদী সড়কের লক্ষ্মীপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আজিজুর রহমান উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ মণ্ডলের ছেলে।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জুয়েল ও স্থানীয়রা জানায়, আজিজুর ভোরে সাইকেলে করে ঈশ্বরদীতে গুড় বিক্রি করতে যাচ্ছিল। পথে লক্ষীপুর এলাকায় পৌঁছালে ঢাকাগামী একটি বাস তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে লালপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শিবচরে ট্রাক উল্টে নিহত ১
মাদারীপুরের শিবচরে একটি চালভর্তি ট্রাক উল্টে মো. মিলন হাওলাদার নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। নিহত মিলন একজন বাঁশ ব্যবসায়ী। সে পৌরসভার নলগোড়া এলাকার বাসিন্দা। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, সোমবার ভোরে উপজেলার শিবচর-পাঁচ্চর সড়ক হয়ে একটি চালভর্তি ট্রাক উপজেলার চান্দেরচর যাচ্ছিল।
ট্রাকটি পৌরসভার দাদাভাই তোরণ সংলগ্ন এলাকায় আসলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে রাস্তার পাশে পড়ে যায়। এসময় পথচারী বাঁশ ব্যবসায়ী মিলন হাওলাদার ট্রাকটির নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
কচুয়ায় দুর্ঘটনায় নিহত ১
চাঁদপুরের কচুয়ায় ট্রাক ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ ও ২ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার কচুয়া-চৌমুহনী সড়কের দোঘর-শাহাপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মোটরসাইকেল চালক বিপ্লব (২৬) নিহত হয় এবং আরোহী জুটন (২২) ও অজয় (২১) আহত হয়েছেন। আহতদের কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এব্যাপারে কচুয়া থানার ওসি মো. আতাউর রহমান ভূঁইয়া বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং নিহত পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
হরিণাকুণ্ডুতে নছিমন চাপায় ৭ বছরের শিশু নিহত
হরিণাকুণ্ডু উপজেলার দখলপুর গ্রামে প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া মাদরাসা ছাত্র রাফি (৭) নছিমন চাপায় নিহত হয়েছে। নিহত রাফি ঐ গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে। এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যায় রাফি মাদরাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে দখলপুর বাজার রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগামী একটি নছিমন এসে রাফিকে ধাক্কা দিলে রাফি নছিমনের চাকার নিচে পড়ে। স্থানীয়রা প্রথমে তাকে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে তার অবস্থা মারাত্মক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। রোববার রাতে সবাইকে কাঁদিয়ে শিশু রাফি না ফেরার দেশে পাড়ি জমায়। এ ব্যাপারে হরিণাকুণ্ডু অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান জানান, মর্মান্তিক এই বিষয়টি আমি শুনেছি, তবে এখনো নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.