সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তর, অপেক্ষার শেষ নেই by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ

২৬শে মার্চ বা ১৬ই ডিসেম্বর- এরকম একেকটি বিশেষ দিবস সামনে এলেই প্রসঙ্গটি উঠে আসে। কয়েক বছর ধরেই নবনির্মিত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্বোধনের ডেডলাইন হিসেবে বেছে নেয়া হচ্ছে এমন বিশেষ দিনগুলোকে। সেদিন চলে গেলে নতুন আরো একটি বিশেষ দিনকে টার্গেট করা হয়। বিভিন্ন সূত্রের তথ্যমতে গত ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসে কারাগারের উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিলো, তারও আগে গত ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের দিনেও কথা ছিলো কারাগার উদ্বোধনের। ১৬ই ডিসেম্বর চলে গেছে, ২৬শে মার্চও চলে গেছে, আপাতত কারাগার উদ্বোধনের কোনো টার্গেট দিনই নেই। কবে উদ্বোধন হবে সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে কোনো ধারণা দিতে পারেননি।
সিলেটে কারাগারের ইতিহাস ১২৯ বছরের পুরনো। ১৭৮৯ সালে নগরীর ধোপাদীঘির পারে ২৪.৬৭ একর ভূমির উপর ১ লাখ রুপি ব্যয়ে গড়ে উঠে কারাগার। বন্দি আধিক্য ও গুরুত্ব বিবেচনায় ১৯৯৭ সালে সিলেট কারাগার উন্নীত হয় কেন্দ্রীয় কারাগারে। সোয়া দুই শ’ বছর পর সেই কারাগারই সরে যাচ্ছে সিলেট নগর থেকে শহরতলিতে। পুরনো ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়া সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি কয়েদি থাকার কারণে ২০১০ সালে একনেকে ১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ ও স্থানান্তর প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছিল। এরই পরিপেক্ষিতে ২০১১ সালের ১১ই আগস্ট তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জালালাবাদ থানাধীন বাদাঘাটে কারাগারের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এক বছর পর ২০১২ সালের ১২ই জুলাই শুরু হয় নির্মাণ কাজ।
নির্মাণাধীন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রকল্পস্থলে সংরক্ষিত মাস্টারপ্ল্যান থেকে জানা গেছে, কারা কম্পাউন্ডজুড়ে ছড়িয়ে থাকবে ৬৪টি ভবন। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্মিতব্য নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারে জায়গা হবে ২ হাজার বন্দির। বন্দিদের রাখা হবে ৭টি ভবনে। এ ভবনগুলোর মধ্যে পুরুষ বন্দিদের জন্য ৪টি এবং নারী বন্দিদের জন্য রয়েছে ৩টি ভবন। পুরুষ বন্দিদের ৪টি ভবনই ৬ তলাবিশিষ্ট আর নারী বন্দিদের জন্য নির্ধারিত ভবনের মধ্যে একটি ৪ তলা এবং দুটি দ্বিতল ভবন রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নবনির্মিত কারাগারে হাসপাতাল রয়েছে ৫টি, এর মধ্যে ৪টি শুধুমাত্র বন্দিদের জন্য, অন্যটি কারাগার সংশ্লিষ্টদের। বন্দিদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের মধ্যে পুরুষ ও নারীদের জন্য ১টি করে ৫ তলাবিশিষ্ট হাসপাতাল, একটি করে দোতলা যক্ষ্মা ও মানসিক হাসপাতাল। রান্নার কাজের জন্য রয়েছে একতলা ৫টি ভবন। খাবার মজুত রাখার জন্য রয়েছে ১ তলা ৪টি ভবন, দোতলা একটি রেস্ট হাউসও আছে। ৪ তলাবিশিষ্ট একটি ডে কেয়ার সেন্টার রয়েছে, মসজিদ আছে, স্কুল আছে, আছে লাইব্রেরিও। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ৩০ একর জায়গার মধ্যে মূল কারাগারের ভেতরে রয়েছে ১৪ একর ও বাইরে রয়েছে ১৬ একর জায়গা। কারাগারের বাইরের জায়গায় থাকছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন, ক্যান্টিন, বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার রুম, অ্যাডমিন অফিস, কেন্দ্রীয় মসজিদ ও স্কুল।
১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য কারাগারটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালের জুন মাসে। এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হয় ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। নির্মাণকাজের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়েও এ সময়ের মধ্যে কারাগারের ৭০ ভাগের বেশি কাজ শেষ করা সম্ভব না হওয়ায় তৃতীয় দফায় আরো এক বছর সময় দেয়া হয় কাজ শেষ করার জন্য। ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সে সময়ে কাজ শেষ হয়নি। এরপর আরো এক বছর অতিবাহিত হলেও কারাগার উদ্বোধনের কোনো নিশ্চিত তারিখ এখনো জানা যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এখনো কারাগারের অনেক কাজই বাকি রয়ে গেছে। ফাঁসির মঞ্চ তৈরি হয়নি এখনো। ওয়াকওয়ে ও পুকুরের কাজও শেষ হয়নি। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও সম্পূর্ণ হয়নি। বিভিন্ন সূত্র বলছে, বাকি কাজগুলো দ্রুত শেষ করে আগামী নির্বাচনের আগেই সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্বোধন করা হবে।
সিলেট কারাগারের জেলার আবু সায়েম মানবজমিনকে বলেন, কবে নাগাদ কারাগার স্থানান্তর হবে বিষয়টি এখনই নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তবে আমরা যেকোনো সময়েই নতুন কারাগারে যাওয়ার জন্য পুরো প্রস্তুত আছি।

No comments

Powered by Blogger.