আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপিত

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও গতকাল যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপিত হয়। এবছর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সদস্যদের গৌরবময় অংশগ্রহণের ৩০ বছরপূর্তি উপলক্ষে এবং বিশ্বের সব দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), পুলিশের মহাপরিদর্শক, জাতিসংঘের মহাসচিব এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী পৃথক বাণী দিয়েছেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, শান্তিরক্ষী দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বেলা ১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় এবং আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা হয়। সংবর্ধনায় প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণের ৩০ বছরপূর্তি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট একটি স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করেন।
এছাড়া সেনাপ্রধান প্রেসিডেন্টকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণের ৩০ বছরপূর্তির মনোগ্রামসংবলিত ক্রেস্ট উপহার হিসেবে প্রদান করেন।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরুর পর শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকালীন শাহাদাতবরণকারীদের জন্য এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট শান্তিরক্ষীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা অনুকরণীয় পেশাগত দক্ষতা প্রর্দশন করে বিশ্বের অন্যান্য সহযোগী শান্তিরক্ষীদের শ্রদ্ধা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছেন। একই সঙ্গে শান্তি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি স্থানীয় দেশের জনগণের অকুণ্ঠ ভালোবাসা অর্জন করেছেন। জাতিসংঘ এবং বিশ্বের সব শান্তিপ্রিয় দেশ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সাফল্য এবং উপযুক্ততার প্রশংসা করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এছাড়াও, আপনারা দেশের জন্য অতি প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন, যা আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে প্রথম সারির শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে যে গৌরব ও মর্যাদা লাভ করেছে, তা আপনাদের সাহস, বীরত্ব, অসামান্য পেশাদারিত্ব ও দক্ষতারই ফসল। এ গৌরব আপনাদের সমুন্নত রাখতে হবে। প্রেসিডেন্ট বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে জাতিসংঘ মিশনে নিয়োজিত শান্তিরক্ষীদেরও প্রযুক্তি ও কারিগরি দক্ষতা বাড়ানো জরুরি। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরাও যাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারে সে লক্ষ্যে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক আবদুল হামিদ শান্তিরক্ষীদের পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ভাষায় দক্ষতা বাড়ানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার ওপর জোর দেন। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বক্তব্য দেন।
এছাড়া জ্যেষ্ঠতম শান্তিরক্ষী হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো। পরে, শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের কার্যক্রমের ওপর নির্মিত থিম/ডকুমেন্টারি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় এবং এ বিষয়ে বিপসট-এর অবদান তুলে ধরা হয়। এছাড়া প্রেসিডেন্ট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণ, সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব/সচিবগণ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকগণ, বাংলাদেশে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, সকাল ৭টায় ঢাকার তেজগাঁওস্থ পুরাতন বিমানবন্দর মসজিদ কমপ্লেক্সে এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ‘পিসকিপার্স রান’-এর মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে ‘পিসকিপার্স রান’ উদ্বোধন করেন।
এতে অংশগ্রহণ করেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের শান্তিরক্ষীগণ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তঃবাহিনী সংস্থাসমূহের মনোনীত প্রতিনিধিগণ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শতাধিক ছাত্রছাত্রীসহ আনুমানিক ৮৭০ জন সদস্য। উল্লেখ্য, দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরার লক্ষ্যে বিশেষ জার্নাল ও বিভিন্ন দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয় এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলে বিশেষ টক-শো প্রচারিত হয়। এছাড়াও শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের কার্যক্রমের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে । এছাড়াও, চট্টগ্রামস্থ বিএএফ জহুরুল হক ঘাঁটিসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও ‘পিসকিপার্স রান’ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বেলুন, ফেস্টুন ও কবুতর উড়িয়ে চট্টগ্রামের ‘পিসকিপার্স রান’ সমাবেশ উদ্বোধন করেন।

No comments

Powered by Blogger.