সিলেটে এসডিএফ’র কার্যক্রম: তমিরের এক রিপোর্টে চাপা পড়ছে মূল ঘটনা by ওয়েছ খছরু

প্রবেশন কর্মকর্তার এক রিপোর্টেই বদলে যাচ্ছে ঘটনা। দোষী হচ্ছে নির্দোষ আর নির্দোষ হচ্ছে দোষী। এতে করে সিলেট শহরতলীর একটি গ্রামে সামাজিক দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করছে। টাকার লোভেই তমির হোসেন নিজে সরকারি কর্মকর্তা হয়ে আরেক সরকারি প্রজেক্টের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন- এসডিএফ’র কর্মকর্তারা। তারা বলেন, ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর এসডিএফের গ্রাম প্রজেক্টের সভাপতি রায়না বেগমকে পুলিশ দিয়ে হেনস্থা করেন তিনি। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন মীরপুর গ্রামের এসডিএফের গ্রাম সমিতির সদস্যরা। গতকাল সিলেট জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বরাবর দেয়া স্মারকলিপিতে সরাসরি তমির হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন এসডিএফ’র ২ নম্বর ক্লাস্টার কমিউনিটি সোসাইটির সভাপতি রাজিয়া বেগম। আবেদনে তিনি জানান, শহরতলীর মীরপুর গ্রামের ২০১২ সাল থেকে দায়িত্বে থাকা সভাপতি রায়না বেগমের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মিথ্যা অভিযোগ এনে আদালতে একটি মামলা করেন ওই গ্রামের জমিরুন নেছা নামের এক মহিলা। পরে আদালত অভিযোগের তদন্ত করতে জেলা প্রবেশন অফিসারকে দায়িত্ব দেন। তদন্তভার পেয়েই তমির হোসেন সরাসরি রায়না বেগমের কাছে ঘুষ চান। কিন্তু কথা মতো টাকা না পেয়ে জমিরুন নেছার কাছ থেকে অন্যায়ভাবে টাকা গ্রহণ করে মীরপুর গ্রাম সমিতির সভাপতি রায়না বেগমের বিরুদ্ধে ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করেই মিথ্যা তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। আবেদনে রেজিয়া বেগম বলেন, তমির হোসেন চৌধুরী ২০শে ফেব্রুয়ারি তার নিজ কার্যালয়ে ডেকে আনেন মীরপুর গ্রামের নাসিমা বেগম, রোহেনা বেগম, আংগুরা বেগম, হাওয়ারুন বেগম, ফাতেমা বেগম, নাসিমা বেগম-২, আয়মলা বেগম, হাছিনা বেগম, মনোয়ারা বেগম, মতাচ্ছির, জয়নুদ্দীন, আলাউদ্দিন, খালেদ, জয়নালসহ কয়েকজন সহ-ক্লাস্টার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সামনে রিপোর্ট পক্ষে দিতে টাকা দাবি করেন। রায়না বেগম টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নিজ বারান্দা থেকে পুলিশ ডেকে এনে রায়না বেগমকে হেনস্থা করেন। সিলেট শহরতলীর মীরপুর গ্রামে ২০১২ সালে কার্যক্রম শুরু করে এসএডিএফ। গ্রামীণ মানুষদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৬৪ জন সদস্যর সমন্বয়ে নতুন জীবন কর্মসূচির অংশ হিসেবে গ্রাম সমিতি গঠন করা হয়। ওই গ্রাম সমিতি পরিচালনার জন্য রায়না বেগম নামের এক মহিলাকে সভাপতি করে তারা ৯ সদস্যের পরিচালনা কমিটি করেন এবং গ্রামের উন্নয়নের জন্য গ্রাম সমিতির কাছে ৪০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা প্রদান করে এসডিএফ। এই টাকা পাওয়ার পর গ্রাম সমিতির একটি ঋণ সমন্বয়ক কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটির টিম লিডার করা হয় আব্দুল জলিলের স্ত্রী কমলা বেগমকে। ২০১৩ সালে ঋণ কমিটি গ্রাম সমিতির কাছ থেকে ১৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা সমঝে নিয়ে ঋণ কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ঋণ প্রদান ও কার্যক্রম আদায় সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মূলধন হয়। এরই মধ্যে গ্রামের মধ্যে ৪ শতক জমি কিনে স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণ করে এসডিএফ। এদিকে, ২০১৫ সালের দিকে এসডিএফ’র মনিটরিং টিমের সদস্যরা ঋণ কমিটির কার্যক্রম মনিটরিং করতে গিয়ে টিম লিডার কমলার বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পান। এসডিএফ’র মনিটরিং কর্মকর্তা লিটন চন্দ্র পাল জানিয়েছেন, টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে ২০১৭ সালের অক্টোবরে গ্রামের অফিসে যৌথ সভার আয়োজন করা হয়। কিন্তু ওই সভায় কমলার পক্ষ নিয়ে কিছু সংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল যুবক অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দেয়। এ কারণে শেষ পর্যন্ত বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। লিটন জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মীরপুর গ্রামে থাকা তাদের অফিস তছনছ করা হয়। ওই অফিসের ৭টি টিন খুলে নেয়া ছাড়া ঋণ কমিটির সদস্য থাকা ১২৪ জনের কাগজপত্র গায়েব করা হয়। এ ঘটনার পর এসডিএফের গ্রাম সমিতির সভাপতি রায়না বেগম বাদী হয়ে ১২ই জানুয়ারি কমলা বেগম, হাবিবুর রহমান, মাহমদ আলী, আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে জালালাবাদ থানায় চুরির মামলা করেন। এদিকে, চুরির মামলা থেকে রেহাই পেতে কমলার বিশ্বস্তজন মীরপুর গ্রামের জমিরুন্নেছা বেগম গ্রাম সমিতির সভাপতি রায়না বেগমকে আসামি করে আদালতে পাল্টা আত্মসাৎ মামলা করেন। সিলেট অতিরিক্ত মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট থেকে তদন্তভার দেয়া হয় প্রবেশন অফিসার তমির হোসেনকে। আর তদন্তভার পেয়েই তমির হোসেন প্রকাশ্য ঘুষ চান। কিন্তু রায়না বেগমের পক্ষ ঘুষ না দেয়ায় সত্য ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়েছেন দাবি করেন রায়না বেগম। এদিকে, তদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুতকালে ঘুষ চাওয়া এবং গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা তমির হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, রিপোর্ট দিলে কারো পক্ষে কারো বিপক্ষে যাবে। সেখানে আমাদের কিছুই করার নেই। পরবর্তী বিষয়টি আদালত সিদ্বান্ত নেবে বলে জানান তিনি। এসডিএফ’র সিলেট জেলা ব্যবস্থাপক মো. সামিউল হক জানিয়েছেন, তমির হোসেন চৌধুরী তার রিপোর্টে যে রায়না বেগমকে অভিযুক্ত করেছেন সেই রায়না বেগম অর্থ কমিটির কেউ না। দোষী হলে হতে পারে কমলা। কিন্তু অফিস চুরির ঘটনা ও টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে রায়নাকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আর তমির হোসেন টাকার বিনিময়ে নির্দোষ রায়নাকেই অভিযুক্ত করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.