নাজিবের পদত্যাগ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

দলকে ভরাডুবি ঘটানোর পর মালয়েশিয়ায় ৬১ বছর ক্ষমতায় থাকা ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও) দলের প্রেসিডেন্ট পদ ত্যাগ করেছেন সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা বারিশান ন্যাশনাল জোটের চেয়ারম্যান পদও ত্যাগ করেছেন তিনি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন স্ট্রেইট টাইমস। এতে বলা হয়েছে, বুধবার অনুষ্ঠিত ১৪তম জাতীয় নির্বাচনে ভয়াবহ পরাজয় ঘটেছে তার। এরপর তিনি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরাজয়কে তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং নৈতিক দায়বোধ থেকে ওই দুটি পদ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। বৃহস্পতিবার নতুন প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ শপথ না নেয়া পর্যন্ত এ পদে ছিলেন নাজিব রাজাক। আর এখন তার নামের আগে যুক্ত হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে দুর্নীতির ইঙ্গিত দিয়ে রিপোর্টে তাকে বিতর্কিত বা কনট্রোভার্সিয়াল প্রধানমন্ত্রী আখ্যায়িত করা হচ্ছে। তিনি দেশের বাইরে চলে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। শনিবার তার একটি বেসরকারি বিমানে করে ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। দেশের বাইরে যেতে পারবেন না তার স্ত্রীও। পরাজয় নিয়ে নাজিব রাজাক বলেছেন, নির্বাচনে ইউএমএনও এবং বিএন খুব বাজেভাবে পরাজিত হয়েছে। তাই ইউএমএনও দলের প্রেসিডেন্ট এবং বিএন জোটের চেয়ারম্যান পদ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেকোনো ব্যক্তি, যিনি একজন নেতা, তিনি যদি ব্যর্থ হন তাহলে ওই পরাজয় মেনে নেয়াই তার দায়িত্ব। আমি মুক্তমনে তা মেনে নিলাম। অনেক কিছুকে দায়ী করা যায়। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। এটা রাজনীতির গেমের আরেক নাম। যা ঘটে গেছে তার জন্য আমরা দুঃখিত। আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশ। তাই মুক্তমনে সব মেনে নিচ্ছি। ১২ই মে শনিবার পুত্র ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ইউএমএনও দলের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়ায় বিএনের চেয়ারম্যান ও ইউএমএনও দলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমাদ জাহিদ হামিদি। অন্যদিকে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিশামুদ্দিন হোসেন ইউএমএনও দলের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট এবং বিএন জোটের ডেপুটি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। নতুন নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন ও আস্থা রাখার জন্য ইউএমএনও এবং বিএন সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নাজিব রাজাক। তাদেরকে তিনি বলেন, নতুন নেতৃত্বকে সমর্থন দিয়ে এটা নিশ্চিত করুন যে জোট যাতে যেকোনো রকম গুরুতর চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পারে। একই সময়ে তিনি ইউএমএনও এবং বিএনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।
নাজিব রাজাক ও স্ত্রীর দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মালয়েশিয়ায় পরাজিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ও তার স্ত্রী রোজমাহ মানসুরকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বুধবার পর্যন্তও নাজিব দেশটির প্রধানমন্ত্রী থাকলেও এখন তিনি মালয়েশিয়ায় কালো তালিকাভুক্ত। শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টায় ফেসবুকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পোস্ট দিয়ে নিশ্চিত করেছে। একটি বেসরকারি বিমানে করে তার ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর তিনি সেই সফর বাতিল করেছেন। বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার প্রতি তিনি সম্মান দেখাবেন এবং দেশেই অবস্থান করবেন। এ খবর দিয়েছে মালয়েশিয়ার স্টার অনলাইন, বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়েছে, অভিবাসন বিষয়ক মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী আগে বলেছিলেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব ও তার স্ত্রীকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে যে রিপোর্ট বেরিয়েছে তা সত্য নয়। তিনি বলেছেন, তারা কেউই কালো তালিকাভুক্ত নন। তবে তারা গোপনে একটি ফ্লাইটে করে ইন্দোনেশিয়ায় চলে যাচ্ছেন এমন খবর ফাঁস হয় মিডিয়ায়। এ জন্য সুবাং জয়ায় অবস্থিত সুবাং সুলতান আবদুল আজিজ শাহ এয়ারপোর্টে শনিবার সকালে তাদের চিহ্ন পর্যন্ত দেখা যায় নি। তাদের দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সময় সকাল ৬টায় বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক ও শতাধিক মানুষ জড়ো হন বিমানবন্দরে, যাতে তারা দেশ ছেড়ে চলে যেতে না পারেন। তবে তাদেরকে বিমানবন্দরটির বাইরে দেখা গেছে বলে এক খবরে বলা হয়। তারা তখন ভিআইপি গেটের খুব কাছে ছিলেন। বিমানবন্দরের পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে লাইট স্ট্রাইক ফোর্সের একটি টিম। এক পর্যায়ে বিমানবন্দরে রঙিন গ্লাসের একটি সাদা মাল্টি পারপারস ভ্যান (এমপিভি) এসে উপস্থিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এক নাটকীয়তা। লোকজন উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তারা মনে করতে থাকে ওই গাড়িতে নাজিব রাজাক ও তার স্ত্রী ছিলেন। এটা ভেবে তারা ওই গাড়ির ওপর হামলা চালায়। এতে জানালা ভেঙে যায়। কিন্তু ভেতর থেকে নাজিব রাজাক ও তার স্ত্রী নন, বেরিয়ে আসেন সাবেক মন্ত্রী শাহিদান কাসিম। আবার এক রিপোর্টে বলা হয়, নাজিব রাজাক ও তার স্ত্রী স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় একটি বেসরকারি জেট বিমানে করে উড়ে যাবেন জাকার্তা। ওদিকে ফেসবুকে নাজিব রাজাক একটি পোস্ট দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ের বিরতি নেবেন। শনিবার তিনি দেশের বাইরে যাবেন এবং ফিরে আসবেন পরের সপ্তাহে। তার এ ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই অভিবাসন বিভাগ থেকে তাদের সরকারি ফেসবুক পেজে বলা হয়, নাজিব ও তার স্ত্রী রোজমাহ মানসুরকে মালয়েশিয়া ছাড়ার ওপর কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর জবাবে টুইট করেছেন নাজিব। তিনি লিখেছেন, আমাকে জানানো হয়েছে যে, আমাকে ও আমার পরিবারকে বিদেশে যেতে অনুমতি দেবে না মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ। আমি এ নির্দেশের প্রতি সম্মান দেখাই এবং দেশেই অবস্থান করবো। উল্লেখ্য, বুধবার অনুষ্ঠিত দেশের ঐতিহাসিক নির্বাচনে ৬৪ বছর বয়সী সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ভয়াবহভাবে পরাজিত হন। সব পূর্বাভাসকে মিথ্যা প্রমাণ করে রাজনীতির জাদু দিয়ে তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেন তারই এক সময়ের রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু ৯২ বছর বয়সী সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. মাহাথির মোহাম্মদ। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন মাহাথিরের পরাজয় ঘটবে। জনমত জরিপও তেমনটাই সায় দিচ্ছিল। কিন্তু নীরব এক বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন তিনি। দক্ষ রাজনীতিকের মতো তিনি দেশের ৬১ বছরের রেকর্ড ভেঙে ক্ষমতাসীন বারিশান ন্যাশনাল (বিএন)কে পরাজিত করেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পড়ানো হয়েছে। নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে ‘১ মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ’ (১এমডিবি) নামের রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে প্রায় ৭০ কোটি ডলার আত্মসাতের অভিযোগ আছে। ওই অভিযোগ ওঠার পরই যারা অভিযোগের তদন্ত করবেন এমন সরকারি কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেন নাজিব রাজাক। তারপর তার আজ্ঞাবহ এমন ব্যক্তিদের দিয়ে ওই দুর্নীতির তদন্ত করান। তবে এবার নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি কথা দিয়েছেন ১এমডিবি তহবিল দুর্নীতির তদন্ত করাবেন। এ দুর্নীতির অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন নাজিব রাজাক। ওদিকে শুক্রবার দুটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ১এমডিবি তহবিল থেকে যে অর্থ চুরি গেছে তা উদ্ধারের বিষয়টি দেখাশোনা করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে একজন উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন মাহাথির।

No comments

Powered by Blogger.