ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ছাত্র ধর্মঘটের ডাক

‘সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা থাকবে না’ বলে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের ৩২ দিন পরও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ফের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরি  প্রত্যাশীরা। গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টায় কোটা সংস্কারের দাবিতে গঠিত আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফরম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে দুপুর সোয়া ১টার দিকে পূর্ব ঘোষিত দুই ঘণ্টার বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) সংবাদ সম্মেলনে সরকারকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আলটিমেটাম দেয় আন্দোলনকালীরা। বেঁধে দেয়া সময়ে প্রজ্ঞাপন না হলে আজ থেকে দেশের সকল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। কিন্তু বিকাল ৫টার মধ্যেও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি মধুর ক্যান্টিন, বিজনেস ফ্যাকাল্টি, সূর্যসেন হল, বসুনিয়া, ফুলার রোড, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, কার্জন হল, হাইকোর্ট মোড়, মৎস্য ভবন, শাহবাগ হয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। এতে বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। মিছিলটি হাইকোর্ট মোড়ের সামনে এলে মুষলধারে বৃষ্টি নামে। শুরু হয় বজ্রপাত। কিন্তু মিছিলে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে নিজেদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন। এরপর টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এদিনের কর্মসূচি শেষ করা হয়। কর্মসূচি শেষে টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সময় আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। তারা ছাত্র সমাজের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এটা ছাত্র সমাজ মেনে নেবে না। আমরা কোটা বাতিল চাইনি, সংস্কার চেয়েছি। আজ আমরা ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করেছি। বিকাল ৫টার মধ্যে যদি প্রজ্ঞাপন জারি না হয় তবে আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে ছাত্রসমাজ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করবে। যদি প্রজ্ঞাপন জারি হয় তবে আমাদের পাঁচ দফার আলোকে দিতে হবে।’ যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ৩২দিন পর হলে এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। পাঁচ জেলার নাম একসপ্তাহে পরিবর্তন হলেও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার এতদিন পার হলেও এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। আজকের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না হলে আগামীকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করা হবে।’ বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে হাসান আল মামুন মানবজমিনকে বলেন, ‘আমাদের আলটিমেটাম শেষ হলেও এখনো কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। তাই আগামীকাল থেকে আমরা আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।’ এদিকে গতকালকের বিক্ষোভ কর্মসূচির প্রচারণা চালাতে গেলে গত শনিবার রাতে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের বাধা দেয়ার অভিযোগ ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমানের বিরুদ্ধে। পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘আমরা আমাদের কর্মসূচির প্রচারণা চালাতে গেলে আল-আমিন রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতারা আমাদের বাধা দেয়। এ সময় আমাদের গায়ে ধাক্কা দিয়ে হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় আল আমিন। পরিস্থিতি খারাপ দেখে আমরা হলটিতে আমাদের প্রচারণা শেষ করি।’ তিনি বলেন, ‘আল-আমিনের বড় ধরনের ঝামেলা করার টার্গেট ছিল।’

No comments

Powered by Blogger.