ডায়রিয়ার প্রকোপ কমছে না, দেখা দিয়েছে ডেঙ্গুও by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

ডায়রিয়ার প্রকোপ কমছে না। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৪৯ জন রোগী। ঘণ্টায় ভর্তি হচ্ছে ৩১ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। আর আইসিডিডিআর,বিসহ একই সময়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১২৮ জন রোগী। অন্যদিকে রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরও দেখা দিয়েছে। এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে ইতিমধ্যে একজন মারা যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নগরীর দু’টি হাসপাতালেদু’জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। একজন সেন্ট্রাল হাসপাতালে আর অন্যজন সালাউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ বছর ৪৬ জন ডেঙ্গু জ্বরের রোগী ইতিমধ্যে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া জ্বরে কেউ আক্রান্ত হওয়ার খবর কন্ট্রোল রুম পায়নি।
ডায়রিয়া রোগীর আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ‘উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র’ বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর,বি) প্রতিদিনই শত শত রোগী আসছে। অন্যান্য হাসপাতালেও ভিড় বাড়ছে। এতে হিমশিম খাচ্ছেন আইসিডিডিআর,বি’ কর্তৃপক্ষ। প্রতি ঘণ্টায় আসছে ৩১ জন রোগী। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন রোগী বাড়ছেই। গড়ে দৈনিক যে রোগী আসছে, তা গত তিন বছরের মধ্যে দেখা যায়নি। বেশি রোগী আসছে যাত্রাবাড়ী, কদমতলি, দক্ষিণ খান, বাড্ডা, রামপুরা, লালবাগ, মিরপুর, মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে। যেসব এলাকায় ওয়াসার সুয়ারেজের নির্মাণ কাজ হচ্ছে ওইসব এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছে বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে। গত এক দেড় মাস থেকে ডায়রিয়ার রোগী বেশি আসছে হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম সূত্র ২৬শে এপ্রিলের তথ্য উল্লেখ করে বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়া রোগীর আক্রান্তের সংখ্যা ১২৮ জন। এর মধ্যে আইসিডিডিআর,বি’র ৭৪৯ রোগী। আর সাত দিনের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ২৭৭ জন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওয়াসার সুয়ারেজের কাজের কারণে পাইপ দিয়ে অপরিষ্কার পানি ঢুকে। ফলে দূষিত পানি খেয়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। সঙ্গে আছে গরমও। আর এ গরমের সঙ্গে বাড়ছে রাজধানীতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আইসিডিডিআর,বি’র তথ্যানুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৪শ’ থেকে সোয়া ৪শ’ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। তবে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে এ সংখ্যা সাড়ে ৪শ’ ছাড়িয়েছে। মার্চের শুরতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিশু রোগী বেশি ছিল এবং সকলেই ভাইরাল ডায়রিয়াতে আক্রান্ত। ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। বর্তমানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময় বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। তারা আরো বলেন, তীব্র গরমে ঘন ঘন পিপাসা পাওয়ায় রাস্তাঘাটে আইসক্রিম বা বিভিন্ন ধরনের শরবত পান করা হয়। এসব খাদ্যে যে খাবার পানি বা বরফ ব্যবহৃত হয় তা বিশুদ্ধ না হলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া বেশি গরমে বিভিন্ন ধরনের নষ্ট খাবার খেলেও ডায়রিয়া হয়। প্রতি বছর মার্চ থেকে মে মাসে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আকতার মানবজমিনকে গতকাল জানান, বিভিন্ন জায়গায় ওয়াসার সুয়ারেজের কাজের কারণে পাইপ দিয়ে দূষিত পানি ঢুকার কারণে ওইসব এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এটা পানিবাহিত রোগ। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাস পর্যন্ত ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তারপর কমে আসে। তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। রাস্তার খাবার ও পানির শরবত গ্রহণের ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। চিকিৎসকরা জানান, মূলত বিশুদ্ধ পানির অভাব বা ভালোভাবে হাত না ধৌত করে খাবার গ্রহণই ডায়রিয়ার মূল কারণ। ডায়রিয়া থেকে মুক্ত থাকতে বিশুদ্ধ পানি পান ও সকলকে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেন তারা। একই সঙ্গে কেউ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তাকে স্যালাইন খাওয়ান। বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান। এই বিষয়ে ডায়রিয়ার আইসিডিডিআর,বি’র বিশেষজ্ঞ এবং সংস্থাটির হাসপাতালের প্রধান ডা. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, রাজধানীতে ডায়রিয়া বেশি। ঢাকার বাইরে কম। এটি পানিবাহিত রোগ। মূলত পানিবাহিত জীবাণু থেকেই ডায়রিয়া ও কলেরা দেখা দেয়। রাস্তার খোঁড়াখুঁড়িতে কোথাও পাইপ দিয়ে দূষিত পানি ঢুকে যেতে পারে। আর এটা থেকে ওইসব এলাকায় এই রোগ হলেও হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেখার পরামর্শ দেন তিনি। নিরাপদ ও জীবাণুমুক্ত পানি পানের ব্যাপারে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.