মর্গে তরুণীর খণ্ডিত মরদেহ, কূলকিনারা পাচ্ছে না পুলিশ

ব্যস্ত সড়কের এক পাশে পড়ে আছে একটি ট্রাভেল ব্যাগ। দূরপাল্লার বাসের যাত্রীরা নামছেন আবার যাচ্ছেন। অনেকেরই নজর আসে ওই ব্যাগের দিকে। কিন্তু কেউ এতটা গুরুত্ব দেয়নি। গুরুত্ব দেয়ার বিষয়ও না। এরকম কত কিছুই পড়ে থাকে সড়কে। কিন্তু সময় অনেক গড়িয়ে যাওয়ার পরও ব্যাগটি একই স্থানে আছে। আশপাশের মানুষের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়। ব্যাগটি কার? কেনই বা এখানে ফেলে রাখা হয়েছে। কৌতূহল বশত এক পথচারী ব্যাগের চেইন খোলেন। তারপর তিনি অনেকটা চমকে ওঠেন। ব্যাগের মধ্যে রয়েছে খণ্ডিত মরদেহ। খবর দেয়া হয় থানায়। পুলিশ এসে ব্যাগ উদ্ধার করে দেখতে পায় আনুমানিক ২২ বছর বয়সী কোনো তরুণীর মরদেহ। তারপর খণ্ডিত মরদেহ পাঠানো হয় মর্গে। সেই মরদেহ পড়ে আছে সেখানে। এরকমই এক ঘটনা ঘটেছে ১১ই এপ্রিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার কুতুবখালী এলাকায়। কুতুবখালী সড়কের দক্ষিণ বাগের ওই সড়কে সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বেশ কিছু জেলার বাস যাত্রীরা উঠানামা করে। আর সেখানেই কৌশলে দুর্বৃত্তরা মরদেহটি রেখে পালিয়ে যায়।
তরুণীর খণ্ডিত মরদেহটি উদ্ধারের পর থেকে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। উদ্ধারের পরপরই যাত্রাবাড়ী থানার এক পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। কিন্তু মরদেহ উদ্ধারে ইতিমধ্যে ১৭ দিন পার হয়েছে। থানা থেকে দেশের সকল থানায় এ ব্যাপারে মেসেজ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো থানায় বা মর্গে ওই তরুণীর কোন স্বজন যোগাযোগ করেনি। তাই পুলিশ এই হত্যা মামলার কোনো কূলকিনারা করতে পারছে না। মামলাটি নিয়ে ছায়া তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম। মামলার তদন্তে তাদেরও তেমন কোনো অগ্রগতি নাই। পুলিশ জানিয়েছে, মরদেহটি যেখানে পাওয়া গেছে এর আশেপাশে কোনো সিসি ক্যামেরা নাই। তাই কে বা কারা ট্রাভেল ব্যাগে করে এই মরদেহ রেখে গেছে তার কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া ওই সড়কটি অনেক ব্যস্ত। দূর পাল্লার অনেক যাত্রী বাস থেকে এখানে নামেন। কৌশলে ট্রাভেল ব্যাগে মরদেহটি বহন করায় কারো সন্দেহ হয়নি। পুলিশ ধারণা করছে অন্য কোথাও এই তরুণীকে হত্যা করে মরদেহ খণ্ডিত করে একটি অংশ ব্যাগে ভরে ফেলে গেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক বিল্লাল আজাদ মানবজমিনকে বলেন, সম্পূর্ণ ক্লু লেস একটি মামলা। মামলাটি নিয়ে খুব গুরুত্বসহ কাজ করছি। ওই ট্রাভেল ব্যাগে তরুণীর কোমর থেকে নিচের অংশ ছাড়া আর কোনো কাপড় বা অন্য কোনো কিছুই ছিল না। শরীরের এই অংশ পাওয়াতে শনাক্ত করাটা কঠিন হয়ে গেছে। উপরের অংশ থাকলে হয়তো নাম পরিচয় বের করা যেত। ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা না থাকায় আরো বেগ পেতে হচ্ছে। তাই আমরা নারায়ণগঞ্জমুখী সড়কের সকল সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। যাত্রাবাড়ী থানার মেধাবী এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, খুব ঠান্ডা মাথার কিলার এই কাজ করেছে। আমরা প্রাথমিকভাবে দেখেছি খুব ধারালো অস্ত্র দিয়ে মরদেহটি আলাদা করা হয়েছে। আর এ ধরনের কাজ খুব প্রফেশনাল কিলার ছাড়া করা সম্ভব না। আমরা মরদেহ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড) মর্গে পাঠিয়েছিলাম। সেখানে তরুণীর ডিএনএ সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।
যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তোফায়েল আহমেদ বলেন, তরুণীর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে আমরা মর্গে পাঠিয়েছি। বাকিটুকু উদ্ধার করতে না পারলে তদন্তে কোনো অগ্রগতি আসছে না। আমাদের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও এ নিয়ে কাজ করছে। হত্যার আগে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ডাক্তারী পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.