নির্বাচনের বছরে তেল-গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে দ্বিধায় সরকার

নির্বাচনের বছরে তেল-গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে দ্বিধায় আছে সরকার। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকার ধীরে চলো নীতিতে এগুচ্ছে বলে সূত্র বলছে। এক মাস আগে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করলেও কমিশন এখন পর্যন্ত গণশুনানির সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বলে সূত্র জানিয়েছে। অন্যদিকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে এই অজুহাতে স্থানীয় পর্যায়ে তেলের দাম সমন্বয়ের কথা বলেছে সংস্থাটি। সূত্র জানায়, ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখে বিপিসি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠিতে বলেছে ইতিপূর্বে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ২০১৬ সালের ২৪শে এপ্রিল প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম হ্রাস করে পুনঃনির্ধারণ করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে গত অক্টোবর ২০১৬ হতে ফার্নেস অয়েলে এবং নভেম্বর ২০১৭ হতে ডিজেল ও কেরোসিনের ক্ষেত্রে বিপিসি লোকসান শুরু করে। চিঠিতে আরো বলা হয়, ইতিমধ্যে বিপিসি কর্তৃক স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সমন্বয়ের একটি প্রস্তাব এই বছরের ২৮শে জানুয়ারি মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়েছে। সেখানে চলতি মাসের ৬ই ফেব্রুয়ারির তথ্য অনুযায়ী ভারতের সঙ্গে তুলনা করে বাংলাদেশি মুদ্রার হিসেবে ডিজেলের প্রতি লিটার ৮৮ দশমিক ১১ টাকা এবং পেট্রোল ১০১ দশমিক ১৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা বাংলাদেশ থেকে প্রতি লিটারে যথাক্রমে ২৩ দশমিক ৯৬ টাকা এবং পেট্রোলে ১৫ দশমিক ১৭ টাকা বেশি বলে উল্লেখ রয়েছে। সংস্থাটি তার প্রস্তাবে দামের পার্থক্য আস্তে আস্তে কমানোর কথা বলেছে। এতে মানুষ অভ্যস্ত হবে বলে সংস্থাটি মনে করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছেন, এখনই জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়বে না। সরকার ভর্তুকি দিয়েই এ বছর তেল ও গ্যাসের চাহিদা পূরণ করবে। যদিও বাড়ায় তা খুবই কম বাড়বে। জ্বালানি তেল বিক্রি করে এতদিন লাভ করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। ২০১৪ সালের পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে আসায় বিপিসির লাভ হতে থাকে। জ্বালানি খাত থেকে সরকার ভর্তুকিও তুলে নেয়। সেই লাভের অর্থ দিয়ে এখনকার ভর্তুকি মেটানো হবে। অতীতেও এমন ভর্তুকি দিয়ে দীর্ঘদিন চলেছে বিপিসি। এখন জ্বালানির দাম বাড়ানো কঠিন হবে। জ্বালানি বিভাগে দেয়া প্রস্তাবে বিপিসি জানিয়েছে, বিশ্ববাজারে যে জ্বালানি তেলের দাম বেশি এজন্য বিপিসির প্রতিদিন ১০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিন অর্থবছরে বিপিসি ট্যাক্স-ভ্যাটসহ খরচ বাদে ১৫ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। এ প্রসঙ্গে বিপিসির পরিচালক (মার্কেটিং) মীর আলী রেজা মানবজমিনকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করার প্রস্তাব দিয়েছি। বাড়ানো-কমানো সরকারের উপর নির্ভর করে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৩৫ ডলার থেকে ৮০ ডলারে উঠেছে। এ ছাড়া ডলারের মূল্য এক সময়ে ৮২ টাকা ছিল, এখন তা ৮৩ টাকার উপরে। প্রতিদিন ১০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এদিকে এলএনজি ভাসমান টার্মিন এসেছে দেশে দুই দিন আগে। প্রথম পর্যায়ে প্রতিদিন ৫০ কোটি ঘনফুট করে তরল গ্যাস আমদানি করা হবে। মে মাসের শুরুর দিকে তা পাইপ লাইনে দেয়া হয়ে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ইতিমধ্যেই বিইআরসি কাছে এসেছে। এ বিষয়ে তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এ প্রসঙ্গে বিইআরসির সদস্য মিজানুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী অনেক প্রক্রিয়ায় আগাতে হয়। এজন্য দীর্ঘ সময় লাগে। জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ হলেও সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আগের দামে বিল দেবেন গ্রাহকরা। তিনি বলেন, গণশুনানির জন্য আরো দেড় থেকে দু’মাস সময় লাগতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.